ত্বকী হত্যার ১২ বছর পূর্তিতে তার কবরে বিভিন্ন সংগঠনের ফুল
Published: 6th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ত্বকীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। পরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পুরান বন্দরের কাদরিয়া ভান্ডার সিরাজ শাহার আস্তানায় ত্বকীর সমাধিতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ত্বকীর কবরে যা ফুল দিয়েছেন
প্রথমে ত্বকীর কবরে ফুল দেন তার বাবা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, পরে জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, খেলাঘর আসর জেলা কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিমাংশু সাহা, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাসুম সেকান্দার, বাসদ নেতা ও সাবেক ১৫ নম্বর ওয়ার্ড সিটি কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, সামাজিক সংগঠন সমমনার পক্ষ থেকে দুলাল সাহা, গোবিন্দ সাহা, সেলিম ভূঁইয়া, প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, মহানগর কমিটির নির্বাহী সমন্বয়ক অঞ্জন দাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন জেলা কমিটির সভাপতি ফারহানা মানিক, ক্রান্তি খেলাঘর আসরের পক্ষ থেকে প্রণয় ও আদনান। এ সময় সেখানে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নগরীর শায়েস্তা খাঁন রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তৎকালীন সরকার আমলে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। সেই মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে উঠে আসে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর আগে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে অভিযান চালায় র্যাব।
হত্যাকান্ডের এক বছর পর ২০১৪ সালে ৮ মার্চ তৎকালিন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানও সংবাদ সম্মেলন করে উল্লেখ করে সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরীসহ ১১ জন কিশোর ত্বকী হত্যায় অংশ নেয়। জানানো হয় দ্রুত আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকান্ডের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। তবে এরই মধ্যে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নিলে র্যাব ত্বকী হত্যা মামলায় নতুন করে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাদের মধ্যে আজমেরী ওসমানের গাড়ীচালক ও সহযোগীরা রয়েছে। তবে পালিয়েছে আজমেরীসহ আরও অনেকে।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, এই মামলাটির তদন্ত আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিহত ত্বকীর বাবার সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে। তিনিও আমাদেরকে এই মামলায় সহায়তা করছেন। ৫ আগষ্টের পর থেকে আমরা এই মামলায় আরো ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়া মাত্রই অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করা হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ওসম ন র ল ইসল ম তদন ত আজম র
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।