ডিলারের ট্রলি থামিয়ে চাল লুট, বিএনপি নেতার পদ স্থগিত
Published: 6th, March 2025 GMT
যশোরের শার্শায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এক ডিলারের ১৫৫ বস্তা চাল লুটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার জন্য উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ও তার ভাই ইবাদুল ইসলাম কালুকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী।
গতকাল বুধবার এ ঘটনার পর প্রশাসনের চাপে চাল ফেরত দেন তারা। তবে রাতেই যশোর জেলা বিএনপি রুহুল কুদ্দুসের দলীয় পদ স্থগিত করে।
অভিযোগকারী শাহজাহান কবির কায়বা ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের ডিলার। তার ভাষ্য, বুধবার সকালে বাগআঁচড়া খাদ্যগুদাম থেকে চাল নিয়ে কয়েকটি ট্রলি তার ডিলার পয়েন্টের উদ্দেশে পাঠান। পথে বাগআঁচড়া বকুলতলায় পৌঁছালে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বে তার ভাই ইবাদুল ইসলাম কালু ট্রলিগুলোর গতিরোধ করেন। তারা চালককে জিম্মি করে ১৫৫ বস্তা চাল নিজেদের গুদামে নামিয়ে রাখেন। এ বিষয়ে জানতে তিনি রুহুল কুদ্দুসের নম্বরে কল দিলে তিনি (রুহুল) পাল্টা গালাগাল ও হুমকি-ধমকি দেন। বিষয়টি তিনি প্রশাসনকে জানান। তাদের চাপে দেড় ঘণ্টার পর চাল ফেরত পেয়েছেন।
ইবাদুল ইসলাম কালু দাবি করেন, তিনি ডিলার শাহজাহান কবিরের কাছে টাকা পাবেন। তাই ট্রলি আটকে চাল নামিয়ে রেখেছেন। তবে ডিলার শাহজাহান কবির বলেন, ইবাদুলের দাবির কোনো ভিত্তি নেই।
বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুসের ভাষ্য, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কোনো চাল লুট করিনি। আমার ভাই ডিলারের কাছে টাকা পাবে। তাই ট্রলি আটকে রেখেছিল। পরে চাল ফেরত দেওয়া হয়েছে।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁকে ইউএনও চাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর পরপরই জানতে পারেন, চালের ট্রলিগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শার্শার ইউএনও কাজী নাজিব হাসান জানান, বিষয়টি শুনেই তিনি শার্শা থানার ওসিকে চাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এদিকে চাল লুটের অভিযোগ ওঠার পর রুহুল কুদ্দুসের দলীয় পদ স্থগিত করে বিএনপি। বুধবার রাতে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র ব এনপ ল ইসল ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী