কুবিতে স্নাতকে ভর্তি ফি কমানোর দাবিতে গণস্বাক্ষর
Published: 6th, March 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্নাতক কোর্সে ভর্তি ও সেমিস্টার ফিসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনের রাস্তায় এ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীদের সংগঠন থিয়েটার।
কুবির ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী এ গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরবর্তীতে স্বাক্ষরসহ এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রদান করেন সংগঠনটির সদস্যরা।
আরো পড়ুন:
কুবিতে উত্তেজনা: হল বন্ধ, পরীক্ষা স্থগিত
কুবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করেন। তাদের জন্য অতিরিক্ত ফি বহন করা কষ্টসাধ্য। বার্ষিক আয় বাড়ানোর কথা বলে শিক্ষার্থীদের উপর আর্থিক ধকল বাড়ানো অমানবিক। এক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাই।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণ থেকে আপনাদের বিরত থাকার অনুরোধ এবং তাদের জীবন পরিচালনায় সহজ করার জন্য সেমিস্টার ফি ৪০ শতাংশ কমানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া স্নাতকে ভর্তি ফি অনেক বেশি বাড়ানো হয়েছে, সেখান থেকেও ৪০ শতাংশ কমানোসহ বর্ধিত সব ধরনের ফি কমানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হান্নান রাহিম বলেন, “২০১৮ সালে থিয়েটারের দাবির প্রেক্ষিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন খাতে ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আজ আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করেছি।”
তিনি বলেন, “বার্ষিক আয় বাড়ানোর নাম করে শিক্ষার্থীদের উপর বিপুল অর্থের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ান, শিক্ষার্থীদের উপর কোনভাবে জুলুম করবেন না।”
দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
গত বছর ১৭ অক্টোবর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পাওয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, স্নাতক প্রথম বর্ষে ফি বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় বর্ষে ৫৫০ টাকা। স্নাতকোত্তরে (বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, প্রকৌশল, ব্যবসা ও আইন অনুষদে) ভর্তির ফি আগে ৭ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার ৯০০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া হল ফি ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। স্নাতকের নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও প্রায় ২ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প কম ন র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।