সব প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি
Published: 13th, March 2025 GMT
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন সব প্রজন্মের জন্য একজন ‘শাইনিং স্টার’ বা ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’। দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কাছে আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের সংখ্যা কম। সেই কমসংখ্যক মানুষের মধ্যে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন সব বয়সের মানুষের জন্য উদাহরণযোগ্য একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আমাদের পারিবারিক বন্ধু। আমার বাবার (স্যামসন এইচ চৌধুরী) সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে আমাদের ছিল দারুণ পারিবারিক সম্পর্ক। তাই তাঁর চলে যাওয়া আমাদের পারিবারিক ক্ষতি। তার চেয়েও বড় ক্ষতি দেশের। কারণ, তাঁর মতো সজ্জন, ব্যক্তিত্ববান ও আদর্শিক মানুষ এখন খুবই কম।
আমার কাছে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন একজন ইথিক্যাল বিজনেসম্যান বা নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব। আমার বাবার সঙ্গে মিলে তিনি ব্যাংক ও বিমাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেই সূত্রে ব্যবসায়িক পরিসরেও তাঁর সঙ্গে বসে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তাঁকে দেখেছি কখনো সুশাসনের প্রশ্নে কোনো আপস করতেন না। এমনকি কখনো কোনো ব্যবসায়ে লোকসান হবে জানার পরও সুশাসনের প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তিনি বলতেন, নিয়ম–নীতির মধ্যে থেকে ব্যবসা করে সাময়িক লোকসান হলেও দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল অবশ্যই মিলবে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন প্রধান বিচারপতি। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নিলেও ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি একক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন।এ কারণে সফলতা ও সম্মান দুটিই পেয়েছেন। দেশে একই সঙ্গে সফল ও সম্মানিত যে কজন ব্যক্তি রয়েছেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এ কারণে তিনি সব শ্রেণির ও বয়সের মানুষের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
‘নীতি, আদর্শ ও ধৈর্যশীল থেকেও যে জীবন ও কর্মে সফল হওয়া যায়, তা তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। শুধু সফল মানুষ নয়, ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। এ কারণে সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশতে পারতেন তিনি। দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথাও তিনি সব সময় ভাবতেন। সবার কাছেই তিনি আদর্শিক ব্যক্তি ছিলেন বলে দুবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের দেশ এখন এক অস্থির সময় পার করছে। এ সময়ে ওনার মতো মানুষের খুব দরকার ছিল।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় আম দ র আদর শ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫