Prothomalo:
2025-11-03@10:44:39 GMT

কিডনি রোগির চিকিৎসার কী হবে

Published: 13th, March 2025 GMT

১৩ মার্চ ২০২৫ সমগ্র বিশ্বে কিডনি দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কিডনি সমিতি ও আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে দিবসটি পালন করে যাচ্ছে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে,‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্তকরণ ও কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’। পৃথিবীর ১৬৫টি দেশ দিবসটি পালন করে থাকে।

সারা পৃথিবীতে রোগটি ছড়িয়ে ক্রমেই বাড়ছে। যেহেতু প্রাথামিক পর্যায়ে রোগটির কোনো উপসর্গ হয় না, ফলে এটা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। আর যখন প্রকাশ পায়, তখন দেখা যায় যে ৮০-৯০ শতাংশ আক্রান্তদের দুটি কিডনিই অচল হয়ে গেছে। বর্তমানে রোগটি সপ্তম মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং অচিরেই তা পঞ্চম মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা দেবে।

বাংলাদেশে ২০১০ সালে কিডনির রোগ ছিল ২ কোটি এবং ২০২৩ সালে রোগটি বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ। ফলে এখনো সময় আছে এটা প্রতিরোধ করার।

কিডনি রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। বর্তমানে নেফ্রাইটিসের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, ফলে রোগটি আর বাড়ছে না; কিন্তু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে ডায়াবেটিস ছিল ৬ শতাংশ, বর্তমানে তা হয়েছে ১২ শতাংশ আর উচ্চ রক্তচাপ ছিল ১০ শতাংশ, বর্তমানে তা হয়েছে ২৩ শতাংশের ওপরে।

দুর্ভাগ্যবশত, ৫০-৬০ শতাংশ রোগী জানেনই না যে তাঁর ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ফলে এঁরা কখনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না এবং যখন টের পান, তখন দেখা যায় যে ডায়াবেটিস থেকে তাঁর কিডনি আক্রান্ত হতে শুরু করেছে এবং একই অবস্থা হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে।

আবার যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। ফলে ক্রমে ১৫-২০ বছরের মধ্যে কিডনি আক্রান্ত হয়ে অকেজো হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে তাঁদেরও ২০-২৫ বছরে কিডনি আক্রান্ত হয়।

উন্নত বিশ্বে প্রতি ৫০ হাজারে রয়েছেন একজন কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ আর আমাদের দেশে আছেন ৪ লাখে একজন। সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো বাজেট বরাদ্দ করে না। স্বাস্থ্যসেবা করার জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্সের বিকল্প নেই

এ ছাড়া গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ১০০ রোগীর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের ডায়াবেটিস ও ৩০ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৭০-৮০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস যেমন নিয়ন্ত্রণে নেই, তেমনি উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার যাঁদের ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাঁদেরও আবার অনেকে রক্তচাপের বা ডায়াবেটিসের ওষুধ বন্ধ করে দেন। ফলে এঁরা কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

কিডনি অকেজো রোগীর চিকিৎসা বর্তমানে ১৭০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে।

সমগ্র বাংলাদেশে ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানে ডায়ালাইসিস করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০ শতাংশ সুবিধা রয়েছে, ৩২ জেলায় কোনো সুবিধা নেই, যা জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ। ৭টি জেলায় মাত্র ১টিতে ডায়ালাইসিসের সুযোগ রয়েছে এবং ৮টিতে ২টি জায়গায় সুযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকার রয়েছে ৫০ শতাংশ সুযোগ, যেখানে সমগ্র বাংলাদেশের মাত্র ৮ শতাংশ লোক বাস করেন। ঘরে বসে সিএপিডি করার সুবিধা আছে মাত্র ১০টি।

ঠিক তেমনি কিডনি সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে মাত্র ১০টি। বর্তমানে তা কমে মাত্র ৪টি সেন্টারে এ সুযোগ রয়েছে, অথচ কিডনি অকেজো রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা কিডনি সংযোজন, দ্বিতীয় হচ্ছে সিএপিডি ডায়ালাইসিস আর সর্বনিম্ন চিকিৎসা হচ্ছে হিমোডায়ালাইসিস। সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে কোন পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করব।

একজন হিমোডায়ালাইসিস রোগী গড়ে বেঁচে থাকেন মাত্র ৪-৫ বছর, অথচ একজন সিএপিডি রোগী বাঁচেন ৫-৬ বছর আর একজন কিডনি সংযোজন রোগী বাঁচেন ১০ থেকে ৩০ বছর।

আমরা যদি হিমোডায়ালাইসিসের কথা চিন্তা করি, তবে এই ডায়ালাইসিসের খরচ হবে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর সিএপিডির জন্য খরচ হবে ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, কিডনি সংযোজন খরচ হবে মাত্র ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। জীবনযাত্রার মধ্যে সবচেয়ে সফল চিকিৎসা কিডনি সংযোজন, তারপর সিএপিডি এবং সর্বনিম্ন হিমোডায়ালাইসিস। কিন্তু সিএপিডি ও কিডনি সংযোজন নেই বললেই চলে।
বর্তমানে প্রতিবছর ৪০-৪৫ হাজার রোগীর বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন প্রায়োজন হয়। সুতরাং সুযোগের অভাবে আবার অনেকেই ডায়ালাইসিস করতে সমর্থ হন না।

সরকারি পর্যায়ে মাত্র বিভাগীয় শহরে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে। যেখানে খরচ কম। বাকি ৯০ শতাংশ বেসরকারি পর্যায়ে এবং কিছু অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খরচ একেক ধরনের, বেশির ভাগ রোগীর সামর্থ্যের বাইরে। একটি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে একটি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে সরকারি ও অলাভজনক হাসপাতালে রোগীর ভিড় অত্যন্ত বেশি। এরপরও রয়েছে ওষুধ ক্রয়ের খরচ। ফলে প্রত্যেক রোগীর অতিরিক্ত খরচ অনেক বেশি; অর্থাৎ আউট অব পকেট খরচ ৬৫-৭৫ শতাংশ।  

কিডনি রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রায়োজন হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও ডায়েটিশিয়ান। বর্তমানে কিডনি রোগবিশেষজ্ঞও রয়েছেন মাত্র ৪৫০ জন, নার্স রয়েছেন ৪ হাজার-৫ হাজার এবং ডায়ালাইসিস ইঞ্জিনিয়ার ৫০-৬০ জন। কিডনি সংযোজন করার জন্য ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ২০-২৫ জন। প্রতিবছর ১০-১২ জন নেফ্রোলজিস্ট এবং আর ১০-১২ জন ইউরোলজিস্ট তৈরি হন, যা ১৮ কোটি মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। প্রতি ৪৪ হাজার কিডনির রোগীর জন্য মাত্র একজন নেফ্রোলজিস্ট আছেন।

উন্নত বিশ্বে প্রতি ৫০ হাজারে রয়েছেন একজন কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ আর আমাদের দেশে আছেন ৪ লাখে একজন। সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো বাজেট বরাদ্দ করে না। স্বাস্থ্যসেবা করার জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্সের বিকল্প নেই।
 
ডা.

হারুন আর রশিদ কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স য জন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’

এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • বিদেশিদের বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে