শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এক-তৃতীয়াংশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বেনামি ঋণ, জালিয়াতির ঋণসহ আদায় অযোগ্য অনেক ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে। ফলে এসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে কি না—এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ৩৬টি। এসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণার আগে তাদের গত বছরের প্রাথমিক আর্থিক প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়ার পর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত ১২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে কি না—এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণাসংক্রান্ত নতুন একটি নীতিমালা করেছে। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, সেসব ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। যদিও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ২০২৫ সমাপ্ত বছরের জন্য। তবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। ফলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক ব্যাংক এবার লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হবে। গত বছর সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করেছে। চলতি মার্চ ও এপ্রিলজুড়ে শেয়ারবাজারের ব্যাংকগুলোর বড় অংশই গত বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যেভাবে বেড়েছে, তাতে এসব ব্যাংকের পক্ষে এ বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করা কঠিন হয়ে পড়বে। একই শঙ্কা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। এসব ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে গত বছর শেষে নিট মুনাফা করতে হলে ব্যাংকগুলোকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে বিশেষ ছাড় দিতে হবে। এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চলতি বছরে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানতে চাইলে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক খাতের যে অবস্থা, তাতে অনেক ব্যাংক মুনাফা করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে অনেক ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না। ফলে ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। লভ্যাংশ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা করেছে, সেটি ভালো উদ্যোগ। তবে এটির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে, তার ২০ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর—ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে বেড়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা হয়েছে। ফলে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে সব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর গত ডিসেম্বর ভিত্তিক সাময়িক আর্থিক প্রতিবেদন থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবি) ব্যাংকের ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে ইউসিবির নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হাতে। সরকার বদলের পর ব্যাংকটি তার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়, এরপর বাড়ছে খেলাপি ঋণ।

এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত বছর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ। সরকার পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংকগুলোতে চলছে দেশি-বিদেশি নিরীক্ষা।

এর বাইরে গত বছর শেষে এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৩৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ আর বিদেশি মালিকানাধীন আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ড স ম বর ত বছর র এসব ব য বছর র জ গত বছর র র জন সব ব য র জন য র পর ব ইসল ম দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ