খতিব অপসারণ নিয়ে মসজিদের ভেতর দুপক্ষের সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় আহত ৬
Published: 21st, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদের খতিবকে অপসারণকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় দুপক্ষের লোকজন চেয়ার ছোড়াছুড়িসহ একে অপরকে হাতুড়িপেটা করেন। এতে খতিবসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার ভুঁইগড় রূপায়ন টাউন জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। মসজিদের ভেতরে সংঘর্ষ ও হাতুড়িপেটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রূপায়ন টাউনের বাসিন্দারা সমকালকে জানান, মসজিদের খতিব মাওলানা জামাল উদ্দিন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর থেকে তিনি খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপির দলীয় লোকজন নতুন করে মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করেন এবং জামাল উদ্দিনকে অপসারণ করে নতুন খতিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তারাবির নামাজ শেষে নতুন কমিটির নেতারা খতিব জামাল উদ্দিনকে অপসারণের চিঠি দিলে পুরাতন কমিটির লোকজন এর প্রতিবাদ করেন। এসময় নতুন কমিটির লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাদের ওপর হামলা করলে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন মসজিদের ভেতরে চেয়ার ছোড়াছুড়িসহ একে অপরকে হাতুড়িপেটা করেন। মসজিদের দরজা জানালা ভাঙচুরও করা হয়। এসময় নারীসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লি মিলে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ ঘটনায় মসজিদের খতিব জামাল উদ্দিনসহ ছয়জন আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
পরে শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের পরে আহতরা এ ঘটনার বিচার দাবি করলে মসজিদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা পুলিশ গিয়ে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরীফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করি। এ ঘটনায় দুপক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে বিষয়টি সমাধানের পর্যায়ে আছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য ণগঞ জ আহত র ল কজন স ঘর ষ কম ট র এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গোদাগাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলায় নারীসহ ৬ জন আহত
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে একটি পরিবার। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। এছাড়া তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে। ধানের পালায় অগ্নিসংযোগ এবং খেতের পেয়ারা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পানিপার গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১১ জুন) প্রথমে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর দিন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ছয়জন এখন গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন, চর আষাড়িয়াদহ পানিপার গ্রামের আল্লাম হোসেন, তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবু, মেয়ে ফাতেমা বেগম, নাতি জিহাদ (১৪), ইয়াকুব আলী এবং তাদের প্রতিবেশী বকুল ওরফে কান্দু। তাদের মধ্যে আল্লামের পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ফাতেমার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। এছাড়া তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়।
আরো পড়ুন:
বগুড়ায় আসামির ছুরিকাঘাতে ২ পুলিশ আহত
আড়াইহাজারে জামায়াতের পথসভায় বিএনপির হামলা, আহত ৫
আহতরা জানান, দিয়াড় মহব্বতপুর গ্রামের জামিলুর রহমানের কাছ থেকে আল্লাম হোসেনের স্ত্রী ও ছেলে গোলাম মোস্তফা ২০১৬ সালের ১৮ মে শন্য দশমিক ৪৯৫০ একর ও তার আরেক ছেলে মুরশালীন ইসলাম ২০১৮ সালের ৯ মে শূন্য দশমিক ১১০০ একর জমি কেনেন। এর দলিলও করা হয়। জামিলুর রহমান আরএস রেকর্ডমূলে জমি বিক্রি করেন। পরে বিডিএস রেকর্ডে দলিলের কথা গোপন করে এসব জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে তারা জমিগুলো আবার দখলের চেষ্টা করছিলেন।
তারা আরো জানান, জমি কেনার পর প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে পেয়ারা বাগান করা হয়। গত ১১ জুন সকালে জামিলুর রহমান ও তার ভাই আদিল হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ছেলেরা গিয়ে পেয়ারা বাগানের ৪১টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় আল্লাম হোসেন গ্রামের লোকজনের কাছে নালিশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন জামিলুর রহমান, তার ভাই আদিল হোসেন এবং তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী ধারালো হাঁসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল্লাম হোসেনের বাড়িতে হামলা চালান। বাড়িটিতে ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ধানের পালায়। দুই দিনের হামলায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
আহত আল্লাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ধানের পালার আগুন নেভাতে গেলে হামলাকারীরা তার নাতি জিহাদকে ধাক্কা দিয়ে আগুনের ভেতর ফেলে দেয়। এতে তার পা পুড়ে যায়। তার আরেক নাতি ইয়াকুবকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে গেলে মেয়ে ফাতেমার গলায় হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে শ্লীলতাহানিও করা হয়। ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাকে বাঁচাতে গেলে প্রতিবেশী বকুলকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।
ভুক্তভোগী আল্লাম আরো জানান, হামলাকারীরা তাদের আহত অবস্থায় ফেলে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা এখনো তাদের বাড়ি ঘিরে রেখেছেন। জমির দাবি করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। হাসপাতাল থেকে তাদের ছুটি দেয়া হলে এ ঘটনায় তারা মামলা করবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত জামিলুর রহমানকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ঘটনা তিনি শুনেছেন। আহতরা থানায় অভিযোগ করতে চেয়েছেন। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঢাকা/কেয়া/বকুল