সিরিয়ার অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে বার্তা পাঠিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে তিনি সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে মস্কোর ‘কার্যকর সহযোগিতা’ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের। 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পুতিন আল-শারাকে জানিয়েছেন- তিনি সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করার স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন।

পুতিন নিশ্চিত করেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ রুশ-সিরীয় সম্পর্ক জোরদার করার জন্য দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডার বিভিন্ন বিষয়ে সিরিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে সহযোগিতা বিকাশের জন্য মস্কো প্রস্তুত রয়েছে।  

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসনকারী আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ক্রেমলিন চলতি মাসের শুরুতে বলেছিল, তারা একটি ‘ঐক্যবদ্ধ’ এবং ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সিরিয়া দেখতে। কারণ সেখানের অস্থিতিশীলতা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর ডিসেম্বরে আল-শারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহীদের হাতে আল-আসাদের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে তার সামরিক ঘাঁটিগুলো সুরক্ষিত করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।  এছাড়া সম্প্রতি সিরিয়ায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড নিয়েও মস্কো বেশ উদ্বিগ্ন। 

ডিসেম্বরে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া উত্তর সিরিয়ার সম্মুখ সারির এবং আসাদের আলাউইত সম্প্রদায়ের অধ্যুষিত পাহাড়ের ঘাঁটিগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে।  কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত তার দুটি প্রধান ঘাঁটি - লাতাকিয়ার হামিমিম বিমানঘাঁটি এবং তারতুসে নৌঘাঁটি  ত্যাগ করছে না।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গল্পের সাঁকো পেরিয়ে নক্ষত্রমুখী ইফতেখার মাহমুদ

ইফতেখার মাহমুদের কথা মনে এলেই প্রথম যে ছবিটি আমার মনে ভেসে ওঠে, তা হলো এক শান্ত, সংযত, নিভৃত আলোয় ভরা মানুষ—খুব ধীরে, খুব কোমলভাবে কথার ভাঁজে ভাঁজে মানুষের ভেতর আলো জ্বেলে দেন, যেন তাঁর পাশে দাঁড়ালেই মন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

১৯৮০ সালের ৬ মে রংপুরের নানাবাড়িতে তাঁর জন্ম। শৈশব-কৈশোর কেটেছে নাটোরে, যেখানে তিনি প্রথম পড়াশোনার হাতেখড়ি পান। স্কুল শেষে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ তাঁকে দিয়েছে শৃঙ্খলার প্রথম পাঠ। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্র অধ্যয়নের ভেতর দিয়ে খুলে গেছে নতুন দরজা—সমাজ, মানুষ ও ন্যায়ের গভীর অন্বেষা। পরে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন তিনি। শিক্ষকতার পরিসর তাঁর কাছে শুধু পাঠদান ছিল না, বরং সাধারণ মানুষের জীবন-বাস্তবতাকে গভীরভাবে খুঁড়ে দেখার এক নীরব গবেষণাও ছিল। তাঁর বোধ—লেখা ও অ-লেখা—দুটোই জীবনকে বোঝার ভিন্ন ভুবন। লেখা দিয়ে তিনি বিশ্বকে স্পর্শ করেছেন, আর অ-লেখা দিয়ে পৃথিবীকে অনুভব করেছেন।

বাংলা কথাসাহিত্যের বিবর্তন লক্ষ করলে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গল্পের নির্মাণশৈলী ও রূপবোধ বিস্তর পাল্টেছে। আধুনিক গল্পকারদের অনেকেই কাহিনি বলার চেয়ে আঙ্গিক-পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে গল্প হয়ে ওঠে কেবল বয়ান, কিন্তু তার প্রাণগভীরতা ক্ষীণ হয়ে যায়। একক আখ্যান, মানবিক দ্বন্দ্ব, সময়-স্থানের সুসংবদ্ধ বোধ—এগুলো অনেক সময় কৌশলপ্রিয়তার আড়ালে চাপা পড়ে যায়।

ইফতেখার মাহমুদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘শিকড়ে শাখায় মেঘে’, ‘কথা আর গল্পের জীবন’, ‘হে দিগ্বিদিক, হে অদৃশ্য’, ‘হুমায়ূন আহমেদের ভঙ্গি এবং ভঙ্গুরতা’, ‘অসমাপ্ত সাঁকো’, ‘অনুপস্থিত’ ও ‘কথা কাগজে’।

এই প্রেক্ষাপটে ইফতেখার মাহমুদ এক সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কথাশিল্পী, নিজেকে যিনি আলাদা করে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আঙ্গিক কিংবা ভাষার নতুনত্ব অনুসন্ধান করলেও কখনোই তাঁর গল্পে গল্পের মৌল উপাদান হারায় না। তাঁর কাছে গল্প কেবল শৈলীর প্রদর্শনী নয়, বরং চরিত্রের অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা ও অনুভবকে বুনন করে এক অখণ্ড কাহিনি-জগৎ নির্মাণ। তাঁর ‘অসমাপ্ত সাঁকো’ গল্পগ্রন্থের প্রথম গল্প ‘ইন দ্য মেকিং’-এর কথা বলা যেতে পারে। এই গল্পে তিনি নির্মাণের অনুষঙ্গ প্রয়োগ করলেও গল্পের কেন্দ্রে থাকে একটি সম্পূর্ণ ও গ্রাহ্য কাহিনি। ফলে পাঠক যেমন ভাষাগত বৈচিত্র্যের স্বাদ পান, তেমনি পান একটি সুসংহত গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা। তাঁর এই গল্প একটি প্রেমের গল্প, কিন্তু বিষয়টি সরল নয়। এখানে প্রেমকে দেখা হয়েছে আত্মহানি, আত্মবিসর্জন ও স্বীকৃতির প্রশ্নের মধ্য দিয়ে। প্রেমের প্রতি চরিত্রের আকাঙ্ক্ষা তাকে কীভাবে অপরের নিকট ‘অত্যন্ত প্রিয়’ হতে প্ররোচিত করে—গল্পটি এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আখ্যানটি মঞ্চের বিন্যাসে সাজানো—একটি নাট্যচিত্ররূপ। সংলাপ, দৃশ্যান্তর ও নেপথ্যস্বরের সমন্বয়ে যে পাঠভুবন গড়ে ওঠে, তা বাংলা গল্পে তুলনামূলকভাবে ব্যতিক্রম। অর্থাৎ তিনি আঙ্গিক নিয়ে নতুন করে ভাবলেও কখনোই তা আখ্যানকে প্রতিস্থাপন করে না, বরং আখ্যানকে নতুন সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড় করায়।

ইফতেখার মাহমুদ (৬ মে ১৯৮০—৩০ অক্টোবর ২০২৫)

সম্পর্কিত নিবন্ধ