বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে তিন দিনের এই আয়োজন। শেষ দিনের আয়োজনে বক্তরা বলেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে বারবার জয় পেলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এবার উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন হয়েছে দুই অংশে ভাগ হয়ে। আজ বিকেলে আয়োজিত হয় কেন্দ্রীয় সংসদের আলোচনা পর্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

শুরুতে জাতীয় পতাকা ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের পর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্মরণ করা হয় সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, কলিম শরাফী, গোলাম মোহাম্মদ ইদু, কামাল লোহানী, পান্না কায়সার, যতীন সরকার ও বদিউর রহমানকে।

আজকের আয়োজনে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ৫৬ বছর ধরে মুক্তির ব্রত নিয়ে উদীচী কাজ করছে। হতাশা, নিরাশা আর সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তিই উদীচীর চাওয়া। এ সময় সাবেক সংগঠক মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, আদর্শচ্যুতি হলে ঐক্য হয় না। উদীচীতে পারস্পরিক সংকট সব সময়ই ছিল। কিন্তু উদীচী কখনো রাজনৈতিক সংগঠন হয়নি।

উদীচীর সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারীর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৬৮ সালে একজন শিল্পীর নারিন্দার বাসায় উদীচী শুরু হওয়ার স্মৃতিকথা। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদীচীর কার্যক্রম আরও বেগবান করা প্রয়োজন। সত্যেন সেনের গানের কথা উল্লেখ করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

আয়োজনে উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানাসহ অন্য বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে উদীচী। যখনই দেশে কোনো সংকট দেখা দেয়, তখনই উদীচী আলোকবর্তিকা হয়ে মানুষকে পথ দেখানোর চেষ্টা করে। মানুষ বারবার আন্দোলন করে আত্মাহুতি দিয়ে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বারবারই সে জয় হাতছাড়া হয়ে যায়। এই জয় যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আলোচনা পর্ব সমাপ্ত করেন উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশটি সাম্প্রদায়িক করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু গোটা উপমহাদেশের ঐতিহ্য হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। সেই ঐতিহ্য এখন নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে—বিশেষ “মব” তৈরি করে।’ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।

‘ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান’ স্লোগানে উদীচীর একাংশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হয় ২৯ অক্টোবর। ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ে উদীচী’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠের পর সেদিন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাজধানীর ডিআরইউতে। একই দিনে আরেক অংশের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তাদের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতির পথে জীবনের গান’। দেশে ও বিদেশে উদীচীর সাড়ে তিন শতাধিক জেলা ও শাখা সংসদে এবার একযোগে উদ্‌যাপন করেছে ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উদ চ র স

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে  মাদকবিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে: জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেছেন, “যুব সমাজকে যদি মাদকের অপশক্তি থেকে দূরে রাখতে না পারি, তবে এ জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যেককে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে।”

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে মাদকবিরোধী প্রচারণা কমিটির তত্ত্বাবধানে এবং মাদকবিরোধী ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘মাদকবিরোধী স্লোগান প্রতিযোগিতা’র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

তদন্ত প্রতিবেদন: ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পর উদ্ধার হন সায়মা

জাপানের এনইএফ বৃত্তি পেলেন বাকৃবির ২০ শিক্ষার্থী

উপাচার্য বলেন, “দুঃখজনকভাবে দেখা যায়, কেউ কেউ মাদক বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করে বা প্ররোচিত করে অন্যের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে—এটি চরম অন্যায়। সমাজে অনেক কিছু বৈধ হলেও, প্রকাশ্যে বা গোপনে এসবের অপব্যবহার সবার জন্যই ক্ষতিকর। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা একটি সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব।”

তিনি বলেন, “যুব সমাজকে মাদকের অপশক্তি থেকে দূরে রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। প্রত্যেক পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই আমরা একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারব।”

জবি ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক ও গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হকের সভাপতিত্বে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মাদকবিরোধী স্লোগান প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৭৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম তিনজনকে শুভেচ্ছা উপহার ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। 

প্রতিযোগিতায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাশেদুজ্জামান লিমন প্রথম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মোস্তাফিজুর রহমান দ্বিতীয় এবং অর্থনীতি বিভাগের কনিকা রাণী তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মাদকবিরোধী ফোরামের সভাপতি অমৃত রায় এবং সাধারণ সম্পাদক জীবন মিয়া।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে  মাদকবিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে: জবি