বেস্টিনেটের আমিনুল, রুহুলকে প্রত্যর্পণে দুই দেশের পুলিশ সমন্বয় করছে: মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Published: 31st, October 2025 GMT
অর্থ পাচারের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় থাকা বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম আব্দুল নূর ও তাঁর সহযোগী রুহুল আমিনকে ফেরত আনতে চাইছে বাংলাদেশ। ঢাকার এই অনুরোধটি নিয়ে দুই দেশের পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল।
তিনি কুয়ালালামপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে বলেন, বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় সরকারি (জি-টু-জি) এবং পুলিশ পর্যায়ের সমন্বয়ের (পি-টু-পি) মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তিতে।
সংবাদ সংস্থা বারনামাকে উদ্ধৃত করে মালয় মেইল আজ এই খবর দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে চক্র গড়ে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশীয় নাগরিক আমিনুল ইসলাম এবং তাঁর বাংলাদেশি এজেন্ট রুহুল আমিন এই চক্রের হোতা বলে দাবি করছেন দেশের জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তাঁরা সরকারকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েক মাস আগে মালয়েশিয়া সফরে তাঁর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানান নাসুতিওন ইসমাইল। তিনি বলেন, উভয় পক্ষই একমত হয়েছে যে বিষয়টি দুই দেশের পুলিশ পর্যায়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।
এ নিয়ে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমি এতটুকুই বলতে পারি।’ ঢাকার পক্ষ থেকে এ দুই ব্যক্তির প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনি।
গত নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো আটকের অনুরোধপত্রটি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাইফুদ্দিন নাসুতিওন। আমিনুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগী রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি ও বিদেশি শ্রমিক পাচারের অভিযোগ রয়েছে বলে সেই অনুরোধপত্রে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় টাকা ‘পাচারে’ আমিনুল ও রুহুল আমিন১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪সাইফুদ্দিন নাসুতিওন তখন বলেছিলেন, মালয়েশিয়া সরকার এ আবেদন সম্পর্কে ঢাকার কাছ থেকে আরও স্পষ্ট জবাব চেয়েছে। বিশেষ করে তাঁদের আটকের উদ্দেশ্য প্রত্যর্পণ করানো নাকি আরও তদন্ত করা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এটি অভিযুক্তদের বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য, নাকি তদন্ত পরিচালনার জন্য, সেটাও মালয়েশিয়াকে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানানো উচিত।
মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের জন্য ফরেন ওয়ার্কার সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফসিএমএস) নামের একটি সিস্টেম ব্যবহার করে। সিস্টেমটি পরিচালনা করে বেস্টিনেট নামের কোম্পানিটি। আমিনুল ইসলাম বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান। তিনি বেস্টিনেটের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গেলেও এখনো কোম্পানিটিতে তাঁর অংশীদারত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট চান না বায়রার সদস্যরা, মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি জমা২১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম ন ল ইসল ম র হ ল আম ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।
নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।
গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।
‘আমরা আর পারছি না’
গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’
নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’
নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।
নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই
গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।
ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’
 লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ