যৌন কেলেঙ্কারি: প্রিন্স উপাধি হারানো অ্যান্ড্রু কবে রাজকীয় বাড়ি ছাড়বেন, কোথায় যাবেন
Published: 1st, November 2025 GMT
প্রিন্স উপাধি বাতিল হওয়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুকে আপাতত তাঁর রাজকীয় বাড়ি ‘রয়েল লজ’ ছাড়তে হবে না। ফলে নতুন বছর শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁকে আর স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে স্থানান্তর হতে হবে না। বিবিসি এমনটাই জানতে পেরেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ছোট ভাই অ্যান্ড্রুর প্রিন্স উপাধি ও সম্মাননা বাতিল করেন। বলেন, অ্যান্ড্রুকে এখন থেকে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে ডাকা হবে। উইন্ডসরে বরাদ্দ পাওয়া রাজকীয় বাড়ি ‘রয়েল লজ’ ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। রয়েল লজ ছাড়ার পর অ্যান্ড্রু রাজা-নিয়ন্ত্রিত স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের একটি বাড়িতে উঠবেন। রাজা নিজেই এর খরচ বহন করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কয়েক মাস ধরে নিজ দেশে তীব্র সমালোচনার মধ্যে আছেন অ্যান্ড্রু। আর এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস এসব সিদ্ধান্ত নেন। যদিও অ্যান্ড্রু বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
ব্রিটিশ সরকার বলেছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। অ্যান্ড্রু এখনো ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। রাজকীয় কাতারে তাঁর এ অবস্থানটাই এখন আর অবশিষ্ট আছে।ব্রিটিশ সরকার বলেছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। অ্যান্ড্রু এখনো সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। রাজকীয় কাতারে তাঁর এ অবস্থানটাই এখন আর অবশিষ্ট আছে।
এদিকে অ্যান্ড্রুর যেন রাজা হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। তবে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করতে চাইলে পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করতে হবে, যা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। সেই আইনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিও প্রয়োজন হবে।
অ্যান্ড্রু ২০০৪ সাল থেকে রয়েল লজে বসবাস করছেন। এর আগের বছর তিনি রয়েল লজে থাকার বিষয়ে ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ৭৫ বছরের একটি ইজারা চুক্তি সই করেন। ক্রাউন এস্টেট একটি স্বাধীন প্রপার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।
বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব উইন্ডসরের রয়েল লজ থেকে স্যান্ড্রিংহামে অ্যান্ড্রু সরে যাবেন।
তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর মতে, স্যান্ড্রিংহামে অ্যান্ড্রুর স্থানান্তর নতুন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলে বড়দিনের সময় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। কারণ, ক্রিসমাসে রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন, আর সে সময়ে সেখানে তাঁর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।
অ্যান্ড্রু স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের কোন বাড়িতে উঠবেন, তা এখনো জানা যায়নি। বাড়িটির সব খরচ বহন করবেন রাজা চার্লস নিজেই। তিনি তাঁর ভাইয়ের জন্য ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তাও দেবেন।
রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর মতে, অ্যান্ড্রুর স্থানান্তর নতুন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলে বড়দিনের সময় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। কারণ, ক্রিসমাসে রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন, আর সে সময় সেখানে অ্যান্ড্রুর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।নরফোকে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেট ১৮৬২ সালে তৎকালীন ওয়েলসের প্রিন্স (পরবর্তী সময়ে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) ব্যক্তিগত গ্রামীণ বিশ্রামস্থল হিসেবে কিনেছিলেন।
ঐতিহাসিক এ সুবিশাল এস্টেটটি প্রায় ৩১ বর্গমাইল (প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যা আয়তনে প্রায় নটিংহাম বা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ শহরের সমান।
এর আগে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমালোচনার মুখে গত মাসের শুরুতে ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ রাজকীয় নানা পদবি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেন অ্যান্ড্রু। বিশেষ করে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের একটি স্মৃতিকথা প্রকাশের পর তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়ে যায়।
জিউফ্রের মৃত্যুর পর গত মাসের শুরুর দিকে এ স্মৃতিকথা প্রকাশ করা হয়েছে। স্মৃতিকথায় জিউফ্রে অভিযোগ করেছেন, কিশোরী বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁর কয়েকবার যৌন সম্পর্ক হয়েছে। তবে অ্যান্ড্রু বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
আরও পড়ুনব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুর প্রিন্স উপাধি বাতিল, ছাড়তে হবে রাজকীয় বাড়িও৩১ অক্টোবর ২০২৫জীবিত থাকাকালেও জিউফ্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। অ্যান্ড্রু ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসা করেন।
এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৮ বছরের কম বয়সী একজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌনপণ্য পাচার মামলায় বিচারাধীন থাকাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জপর ব র র সদস য প র ন স উপ ধ হ ম এস ট ট র জন য এপস ট আইন প
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।
‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’
সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।