ধুলামাখা সাদা কাপড়ের নিচে রাখা আছে রোগনির্ণয় যন্ত্রটি। আধুনিক যন্ত্রটি দেখতে সাধারণ। তবে দাম প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এই যন্ত্র দিয়েই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের দ্রুত রোগ নির্ণয় করার পরিকল্পনা ছিল। তবে তা হয়নি। সাড়ে পাঁচ বছর আগে কেনা যন্ত্রটি এক দিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানারের অবস্থা এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। দাম নিয়েছিল ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। একই বছরের ডিসেম্বরে যন্ত্রটি চিকিৎসাকেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়েছিল। বর্তমানেও এটি চিকিৎসাকেন্দ্রের ডায়াগনস্টিক ল্যাবে রয়েছে।

প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা, চুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্র

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার যন্ত্রটি চালু না থাকায় তাঁরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দামি এ যন্ত্র এভাবে ফেলে রাখার পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। এই উদাসীনতার কারণে বাড়তি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা খালিদ বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘যন্ত্রটি চালু করা না গেলে এত টাকা দিয়ে তা কেনার দরকার ছিল না। যন্ত্রটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এত দিনে এটি থেকে অনেকেই উপকৃত হতেন।’

যন্ত্রটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এর কার্যক্ষমতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমিত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো যন্ত্রই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার ছাড়া ফেলে রাখলে তার বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রতিটি যন্ত্র ক্রয়ের পর তার ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ থাকে। সেটি পার হলে মেরামতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে।

যন্ত্রটির কাজ কী

আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান বা ইউএসজি একটি মেডিকেল ইমেজিং (চিত্র) পরীক্ষা। এটি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের অঙ্গের চিত্র তৈরি করে। আলট্রাসাউন্ড চিত্রগুলো একজন চিকিৎসককে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ দেখতে ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে সহায়তা করে।

চুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন,‘আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় পেট ফোলা, ব্যথা বা এ–জাতীয় নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। তখন আমরা তাঁদের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু এখানে প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.

সাইফুল ইসলাম। যন্ত্রটি চালু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। শূন্য পদ না থাকায় নতুন চিকিৎসকও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের আওতায় এনে এটি চালু করার পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে।

প্রশাসনের গাফিলতির কারণে যন্ত্রটি চালু হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই যন্ত্রটি পড়ে আছে। যেকোনো যন্ত্র কেনার আগে সেটা কীভাবে চালানো হবে, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী আগাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে সেটি করা হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র পর ক

এছাড়াও পড়ুন:

নয়াদিল্লির ১৭০ কোটি রুপির নিজামের প্রাসাদে থাকছেন পুতিন, কী আছে এতে

ভারতের হায়দরাবাদের শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর সংগ্রহশালায় থাকা মণিমুক্তার ভান্ডার নিয়ে প্রচলিত ছিল নানা গল্প। বলা হতো, তাঁর মণিমুক্তা রাখা হলে অলিম্পিকে যে আকারের সুইমিংপুল থাকে, তা ভরে যাবে। তো ব্রিটিশরা ভারতের রাজধানী যখন কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নেন, তখন নিজের ঐশ্বর্য প্রদর্শনের এক মহাসুযোগ পেয়েছিলেন ওসমান আলী খান।

দিল্লিতে যখন ব্রিটিশ-ভারতের নতুন রাজধানীর নকশা করা হচ্ছিল, তখন সেখানে রাজাশাসিত রাজ্যগুলো (প্রিন্সলি স্টেট) নিজেদের স্বকীয়তার ছাপ রাখতে চেয়েছিল। এসব রাজ্যের মহারাজারা দিল্লিতে নিজেদের প্রাসাদ তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁদের এমন আগ্রহে তৎকালীন ভাইসরয় আনন্দচিত্তে রাজি হয়েছিলেন। তাঁর মতে, মহারাজাদের এ মনোভাব নতুন রাজধানীর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতে দুই দিনের সফরে আসা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হায়দরাবাদের শেষ নিজামের বানানো সেই প্রাসাদে থাকছেন, যা ‘হায়দরাবাদ হাউস’ নামে পরিচিত। প্রায় শতবর্ষী এ ঐতিহাসিক প্রাসাদের কিছু টুকিটাকি নিয়ে এই আয়োজন।

হায়দরাবাদ হাউস নকশায় জটিলতা

হায়দরাবাদের নিজাম নতুন রাজধানীর যেকোনো এলাকার একটি যেনতেন জমি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন ভাইসরয়ের বাড়ির কাছে প্রিন্সেস পার্কের কিছু জমি, যেখানে তিনি নিজের প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। কিন্তু ব্রিটিশরা এতে রাজি হননি।

ব্রিটিশরা মাত্র পাঁচজন মহারাজাকে ভাইসরয়ের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কিং পঞ্চম জর্জের ভাস্কর্যের আশপাশে জমি বরাদ্দ দিতে রাজি হয়েছিলেন। রাজ্যগুলো হলো হায়দরাবাদ, বরোদা, পাতিয়ালা, জয়পুর ও বিকানার।

পাঁচ মহারাজার মধ্যে হায়দরাবাদের নিজাম এবং বরোদার গায়কোওয়াড় তাঁদের দিল্লির প্রাসাদের নকশা করার জন্য বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্সকে নিয়োগ দেন। ব্রিটিশ-ভারতে রাজাশাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে হায়দরাবাদের মর্যাদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই ওসমান আলী খান ভাইসরয়ের প্রাসাদের সমান একটি বিশাল বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে জমি বরাদ্দের জন্য সরকার শর্ত দিয়েছিল, সব প্রাসাদের নকশার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে। তাই নিজামের নির্দেশ সত্ত্বেও নিজের মতো করেই হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করেছিলেন স্থপতি লুটিয়েন্স। ভাইসরয়ের বাড়ির নকশা থেকে নিজামের প্রাসাদের জন্য তিনি কেবল মধ্যভাগের একটি গম্বুজ নিয়েছিলেন।

প্রজাপতি আকৃতির নকশা

একটি দুর্লভ প্রজাপতির আকৃতিতে হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করা হয়েছে। চট করে দেখলে মনে হয়, প্রাসাদটির সম্মুখভাগের ষড়্‌ভুজ প্রবেশপথ রাস্তার দিকে যেন তাকিয়ে আছে। প্রজাপতির ডানা দুটি পাশের রাস্তার সঙ্গে মিশে গেছে।

নয়াদিল্লিতে ওই সময়ে যত প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে হায়দরাবাদ হাউস ছিল সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ। ১৯০৩ সালে ইংল্যান্ডের লেস্টারশায়ারের পাপিলন হলের জন্য প্রজাপতি আকৃতির একটি নকশা করেছিলেন লুটিয়েন্স। সেটার আদলেই হায়দরাবাদ হাউসের নকশা করা হয়েছিল।

১৯২০-এর দশকে হায়দরাবাদ হাউস নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২ লাখ পাউন্ড। মূল্যস্ফীতিকে আমলে নিলে ২০২৩ সালে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৭০ কোটি রুপি।

২০২১ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের সময় হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ