৩২ লাখ টাকার রোগনির্ণয় যন্ত্র পড়ে আছে সাড়ে পাঁচ বছর
Published: 18th, October 2025 GMT
ধুলামাখা সাদা কাপড়ের নিচে রাখা আছে রোগনির্ণয় যন্ত্রটি। আধুনিক যন্ত্রটি দেখতে সাধারণ। তবে দাম প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এই যন্ত্র দিয়েই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের দ্রুত রোগ নির্ণয় করার পরিকল্পনা ছিল। তবে তা হয়নি। সাড়ে পাঁচ বছর আগে কেনা যন্ত্রটি এক দিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানারের অবস্থা এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। দাম নিয়েছিল ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। একই বছরের ডিসেম্বরে যন্ত্রটি চিকিৎসাকেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়েছিল। বর্তমানেও এটি চিকিৎসাকেন্দ্রের ডায়াগনস্টিক ল্যাবে রয়েছে।
প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা, চুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রশিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানার যন্ত্রটি চালু না থাকায় তাঁরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দামি এ যন্ত্র এভাবে ফেলে রাখার পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দায়ী। এই উদাসীনতার কারণে বাড়তি টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোস্তফা খালিদ বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘যন্ত্রটি চালু করা না গেলে এত টাকা দিয়ে তা কেনার দরকার ছিল না। যন্ত্রটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এত দিনে এটি থেকে অনেকেই উপকৃত হতেন।’
যন্ত্রটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এর কার্যক্ষমতা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমিত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো যন্ত্রই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার ছাড়া ফেলে রাখলে তার বিভিন্ন অংশের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রতিটি যন্ত্র ক্রয়ের পর তার ‘ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ থাকে। সেটি পার হলে মেরামতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে।
যন্ত্রটির কাজ কীআলট্রাসাউন্ড স্ক্যান বা ইউএসজি একটি মেডিকেল ইমেজিং (চিত্র) পরীক্ষা। এটি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের অঙ্গের চিত্র তৈরি করে। আলট্রাসাউন্ড চিত্রগুলো একজন চিকিৎসককে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ দেখতে ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে সহায়তা করে।
চুয়েট চিকিৎসাকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন,‘আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় পেট ফোলা, ব্যথা বা এ–জাতীয় নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসেন। তখন আমরা তাঁদের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিন্তু এখানে প্রশিক্ষিত অপারেটর না থাকায় যন্ত্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন যদি আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এটি চালু করা সম্ভব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.
প্রশাসনের গাফিলতির কারণে যন্ত্রটি চালু হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই যন্ত্রটি পড়ে আছে। যেকোনো যন্ত্র কেনার আগে সেটা কীভাবে চালানো হবে, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী আগাতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখানে সেটি করা হয়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র পর ক
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি