চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে বাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। শুধু তাই নয়, বহু আবাদি জমি তলিয়ে ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পানিতে ভেসে গেছে অনেক পুকুর। এতে মৎস্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ৮টার পর শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। যা গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জ ১৭৫ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১৮০ মিলিমিটার, নাচোলে ১৭৫ মিলিমিটার ও ভোলাহাটে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গড়ে জেলায় মোট বৃষ্টিপাতর রেকর্ড ১৯১ মিলিমিটার। 

রেকর্ড ভঙ্গ করে জেলায় স্মরণকালের ভারিবৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.

মো.ইয়াছিন আলী বলেন, “অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছুটা ফসলের ক্ষতি হবে। বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে। এর পাশাপাশি শাক-সবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।” 

তিনি আরো বলেন, “জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে বা আর বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।”

লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সারাদিনই মেঘলা ছিল। এদিন সন্ধ্যার পরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপরেই রাত ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারিবৃষ্টিপাত হতে থাকে। যা চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের নিউ মার্কেট, বালু বাগান, নিমতলা, অক্টোমোড়, ফুড অফিস, বাতেনখার মোড়, কোট চত্বরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও অতিবৃষ্টিতে ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, “সারারাত বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর ও পানি ঢুকে পড়েছে। শহরে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। ড্রেন নির্মাণ কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর ফলে রাস্তাগুলোতে হাঁটু পানি জমে গেছে। এর পাশাপাশি বাড়িঘর পানি ঢুকে পড়েছে।”

ভারি বৃষ্টিপাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে। এছাড়াও ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী ৫ আপ রাজশাহী কমিউটার ট্রেনটি অতিরিক্ত পানির কারণে ৪ ঘণ্টা বড় পুকুরিয়া এলাকায় আটকা পড়ে। এর ফলে শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, সারারাত বৃষ্টিতে আমনুরা থেকে সদর উপজেলা বড় পুকুরিয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার ট্রেনের লাইন পানির নিচে তলিয়ে যায়। এর ফলে পুকুরিয়া এলাকায় ট্রেন চলাচল করতে পারছিল না। সেখানে ৫ আপ কমিউটার ট্রেনটি সারারাত আটকা ছিল। 

তিনি আরো জানান, বৃষ্টির পানি নামার পর শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কমিউটার ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করে। শনিবার বনলতা ট্রেনটি নির্ধারিত শিডিউল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ভারি বৃষ্টিতে শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় অন্তত ৫০টি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহীনূর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে বৃষ্টির কারণে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাগলা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গেছে। এতে ব্রিজটি দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ঢাকা/শিয়াম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ ট র নট

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে বাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। শুধু তাই নয়, বহু আবাদি জমি তলিয়ে ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পানিতে ভেসে গেছে অনেক পুকুর। এতে মৎস্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ৮টার পর শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। যা গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলিমিটার, শিবগঞ্জ ১৭৫ মিলিমিটার, গোমস্তাপুরে ১৮০ মিলিমিটার, নাচোলে ১৭৫ মিলিমিটার ও ভোলাহাটে ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গড়ে জেলায় মোট বৃষ্টিপাতর রেকর্ড ১৯১ মিলিমিটার। 

রেকর্ড ভঙ্গ করে জেলায় স্মরণকালের ভারিবৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো.ইয়াছিন আলী বলেন, “অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছুটা ফসলের ক্ষতি হবে। বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে। এর পাশাপাশি শাক-সবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।” 

তিনি আরো বলেন, “জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে বা আর বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।”

লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সারাদিনই মেঘলা ছিল। এদিন সন্ধ্যার পরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপরেই রাত ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারিবৃষ্টিপাত হতে থাকে। যা চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের নিউ মার্কেট, বালু বাগান, নিমতলা, অক্টোমোড়, ফুড অফিস, বাতেনখার মোড়, কোট চত্বরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়াও অতিবৃষ্টিতে ঘর বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, “সারারাত বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর ও পানি ঢুকে পড়েছে। শহরে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। ড্রেন নির্মাণ কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর ফলে রাস্তাগুলোতে হাঁটু পানি জমে গেছে। এর পাশাপাশি বাড়িঘর পানি ঢুকে পড়েছে।”

ভারি বৃষ্টিপাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে। এছাড়াও ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী ৫ আপ রাজশাহী কমিউটার ট্রেনটি অতিরিক্ত পানির কারণে ৪ ঘণ্টা বড় পুকুরিয়া এলাকায় আটকা পড়ে। এর ফলে শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, সারারাত বৃষ্টিতে আমনুরা থেকে সদর উপজেলা বড় পুকুরিয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার ট্রেনের লাইন পানির নিচে তলিয়ে যায়। এর ফলে পুকুরিয়া এলাকায় ট্রেন চলাচল করতে পারছিল না। সেখানে ৫ আপ কমিউটার ট্রেনটি সারারাত আটকা ছিল। 

তিনি আরো জানান, বৃষ্টির পানি নামার পর শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কমিউটার ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করে। শনিবার বনলতা ট্রেনটি নির্ধারিত শিডিউল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

ভারি বৃষ্টিতে শুধুমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় অন্তত ৫০টি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহীনূর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে বৃষ্টির কারণে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পাগলা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে গেছে। এতে ব্রিজটি দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

ঢাকা/শিয়াম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ