চাকসুর শপথ এবং কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই
Published: 1st, November 2025 GMT
২২ অক্টোবর সন্ধ্যার ফ্লাইটে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। রাতের খাবার চট্টগ্রাম শহরে সেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত প্রায় ১২টা বেজে গেল।
পরদিন ছিল নবনির্বাচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেলগুলোর নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদের শপথ গ্রহণ। এযাবৎকাল যাঁরা যাঁরা চাকসুর ভিপি–জিএস নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাওয়াত করেছিল। আমাদের আসা–যাওয়া, থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থা তাঁরাই করেছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার গভীর আবেগের জায়গা। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চারটি বিভাগে দুই শ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দুই বছর পর ১৯৬৮ সালে আমি ভর্তি হয়েছিলাম অর্থনীতিতে অনার্সে। অনার্সে সর্বমোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৮১ জন। একমাত্র প্রশাসনিক ভবন, ছোট আকারে একটি লাইব্রেরি, কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে যাত্রা করেছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। শিক্ষক ছিলেন যত দূর মনে পড়ে; মোট ৬ জন।
একটা ছোটখাটো বিদ্যালয় বলা যায়। একটি মাত্র হল ছিল। আলাওল হল। একতলা ভবন। তার আবার কংক্রিটের ছাদ ছিল না। অ্যাসবেস্টস টিনের চাল ছিল। সর্বমোট আবাসিক ছাত্রসংখ্যা শ খানেকের মতো হবে। সবুজ ঘাস, লতাগুল্ম ছাওয়া ছোট ছোট অনেকগুলো টিলা (যাকে আমরা সাধারণত ‘পাহাড়’ বলতাম)। পাহাড়ের ওপরে বা পাদদেশে নির্মিত ছোট ছোট সব ভবন।
সেখানেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়–জীবন। সেখানেই বেড়ে ওঠা। কলেজজীবন পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়ে পরিণত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সংগ্রাম।
আমার বাড়ি বগুড়ায়। পাহাড় দূরের কথা, কোনো টিলাও নেই সেখানে। বোধ হয় এ জন্যই আমার তখনই খুব ভালো লাগত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রকৃতি, প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য আর আমাদের উঠতি যৌবনের রং মাখা সময়ে এক মনোরম পরিবেশ।
ছাত্র–শিক্ষক সবাই সবাইকে চিনতাম। এক পরিবারের মতো মেলামেশাও ছিল। একই সঙ্গে সাপখোপ অন্যান্য প্রাণীও বাস করত। আমার মনে আছে, এক সন্ধ্যায় যখন আঁধার নেমে এসেছে, তখন এক আবাসিক ছাত্র বাথরুমের বেসিনে ট্যাপ খোলার সঙ্গে সঙ্গে বেসিনে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা সাপ ফোঁস করে উঠেছিল। আর তাতে শিক্ষার্থীটি চিৎকার করে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম–হাটহাজারী সড়কের জিরো পয়েন্টের বাঁ দিক দিয়ে পাহাড় কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা করা হয়েছে। ওই রাস্তায় প্রবেশ করে, আমরা রাত প্রায় ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে লাগলাম। ১ নম্বর গেটের কাছে তখনো শিক্ষার্থী এবং দোকানিদের ভিড়।
আমি এ বছরেই ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে এসেছিলাম। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
চাকসুর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে চাকসুর সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক’: আইজিপি
পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক ও কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
গেল এক বছর পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাহারুল আলম বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে আইজিপি হিসেবে দায়িত্বপালনের সময়টা মোটেই সুখকর নয়। আমাকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেই শুরু করতে হয়েছে এবং আমাকেও মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক?’ ধারাবাহিকভাবে এমন কথা শুনতে হয় বলে জানান তিনি।
আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বাহারুল আলম। যৌথভাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
রাজনৈতিক সরকারই দেশ চালাবে এবং তারাই অভিভাবক উল্লেখ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘উনারাই (রাজনৈতিক সরকার) তো আমাদের অভিভাবক, আমি মনে করি; সে জায়গাটায় কেন আমি যেতে পারছি না এবং সে ভয় থেকেই আমরা (পুলিশ) বলি, আমাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করে একটা ইনডিপেনডেন্ট বডির আন্ডারে (স্বাধীন বিভাগের অধীনে) আমাকে নিয়ে যান, ওই ভয় থেকেই; ওই আস্থাটা কেন আমি পাচ্ছি না যে, উনারাই করবেন। উনারা দেশ চালাবেন, কিন্তু উনারা কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না, সে জায়গাটায় কবে যাব আমি?’
আরও পড়ুনগোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার না হলে পুলিশ সংস্কার অর্জিত হবে না: ইফতেখারুজ্জামান১ ঘণ্টা আগেপ্রথম আলো-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়