নির্বাচন হলো আর্জেন্টিনায়, বিজয় দাবি ট্রাম্পের!
Published: 1st, November 2025 GMT
গত রোববার আর্জেন্টিনার নাগরিকেরা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দেন। এই নির্বাচন এত বেশি আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়ে, যেটা অস্বাভাবিক। এর একটি কারণ হলো, আর্থিক সংকটে থাকা বুয়েনস এইরেসকে দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচাতে সম্ভাব্য ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেই বলেন যে আর্জেন্টিনার মুমূর্ষু অর্থনীতিতে এই অর্থ দেওয়া হবে কেবল ভোটের ফলাফল দেখে।
ট্রাম্পের চরম ডানজুড়ি জাভিয়ের মিলেই ট্রাম্পকে সেই ফলাফল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হননি। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, মিলেইয়ের দল লা লিবার্টাদ আভানজা আশ্চর্য জয় পেয়েছে। ৪০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করে তাঁর দল। আর্জেন্টিনার পার্লামেন্টের অর্ধেক ও সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনও জয় করেছে দলটি।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্প একটুও দেরি না করে এই সাফল্যকে তাঁর ব্যক্তিগত ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মিলেই আমাদের কাছ থেকে প্রচুর সাহায্য পেয়েছে।’
আরও পড়ুনসি চিন পিংয়ের কাছে লড়াইয়ে পরিষ্কারভাবে হেরে যাচ্ছেন ট্রাম্প২১ অক্টোবর ২০২৫নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে মিলেইয়ের প্রতি এই উদারতা ছিল তাঁর নিজস্ব উপায়ে, ‘একটি মহান দর্শন যাতে একটি মহান দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে’ তার জন্য সহায়তা করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও একইভাবে দাবি করেন যে মিলেইয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াসের কারণ হলো, ‘যাতে আর্জেন্টিনা আবার মহান হতে পারে’। এটিকে আপনারা লাতিন আমেরিকা ‘মাগা’(মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সংস্করণ বলে ডাকতে পারেন।
কিন্তু (যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বলা যায়) ঠিক কখন আর্জেন্টিনা এত ‘মহান’ ছিল, তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য অতীতের কথিত ‘ভালো দিনগুলো’ বলতে মনে করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলা ডানপন্থী সামরিক শাসন। তখন অনেক বামপন্থীকে হত্যা ও গুম করে ফেলা হয়েছিল। অনেককে উড়োজাহাজে করে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে অথবা রিও দে লা প্লাটা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ গ্রেগ গ্র্যান্ডিন দেখিয়েছেন, ১৯৭৬ সালে মার্কিন কূটনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার তৎকালীন আর্জিন্টাইন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডমিরাল সিজার অগাস্টো গুজেট্টিকে বলেছিলেন, ‘যদি কোনো কাজ করার থাকে, তা দ্রুত সেরে ফেলা উচিত।’
হ্যাঁ, এটি অবশ্যই আরেকটি ‘মহান দর্শন’।
এখন ট্রাম্প লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় আবার মার্কিন প্রভাবের যুগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও উড়োজাহাজে করে মানুষকে সমুদ্রে ফেলে আসার দিন সম্ভবত শেষ হয়েছে; কিন্তু তবু ডানপন্থীদের সামনে তাদের নৃশংসতা দেখানোর এখনো অনেক সুযোগ আছে।
মিলেই নিজেকে অ্যানারকো-ক্যাপিটালিস্ট বা নৈরাজ্যবাদী পুঁজিবাদী বলেন। ২০২৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক সমাবেশে চেইনশো (শিকল ঘুরিয়ে হামলা করার অভিনয়) দেখানো তাঁর অভ্যাস। এটি তাঁর সরকার পরিচালনার প্রতীকও বটে। ক্ষমতায় বসে তিনি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য সমাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেট কমিয়েছেন, বড় সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেছেন, কমিয়েছেন অবসর ভাতা।
স্বাভাবিকভাবেই মিলেইয়ের এই মানবিক অনুভূতিহীন প্রয়াস ট্রাম্পের কাছে খুবই প্রিয় বিষয়। ট্রাম্প বারবার তাঁর পক্ষ নিয়ে বলেছেন, ‘সবাই জানে, তিনি সঠিক কাজ করছেন। কিন্তু এখন একদল উগ্র বাম ও অসুস্থ সংস্কৃতির লোক আছে, যারা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তারা তাঁকে খারাপ বলে দেখানোর চেষ্টা করছে।’মিলেইয়ের কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির প্রথম ছয় মাসে আর্জেন্টিনায় দারিদ্র্যের হার বেড়ে প্রায় ৫৩ শতাংশে পৌঁছেছে। মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে বটে, কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। জরিপগুলো বলছে, অধিকাংশ আর্জেন্টিনাই এখন মাসিক ব্যয় মেটানোর মতো আয় করতে পারছেন না।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে এই জয় (মাফ করবেন, ট্রাম্পের ভাষায় বিজয়) ছিল তাঁর ‘শিকল ঘোরানোর’ শাসন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই নীতি, যা–ই হোক, আর্জেন্টিনার কিছু অভিজাত শ্রেণির জন্য বরাবরই বেশ ফলপ্রসূ।
নির্বাচনের আগপর্যন্ত মিলেইয়ের দলের হাতে কংগ্রেসের ১৫ শতাংশেরও কম আসন ছিল। ফলে প্রেসিডেন্টকে এমন একটি বিরোধী পক্ষের করুণার ওপর নির্ভর করে শাসন চালাতে হয়েছে, যাঁরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতা বাড়ানো, শিশুস্বাস্থ্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল পুনরুদ্ধার—এমন নানা বিষয়ে মিলেইয়ের ভেটো বাতিল করতে মরিয়া ছিলেন।
আরও পড়ুনআর্জেন্টিনা কেন ইসরায়েলের এত বড় বন্ধু হয়ে গেল০৭ জুলাই ২০২৪স্বাভাবিকভাবেই মিলেইয়ের এই মানবিক অনুভূতিহীন প্রয়াস ট্রাম্পের কাছে খুবই প্রিয় বিষয়। ট্রাম্প বারবার তাঁর পক্ষ নিয়ে বলেছেন, ‘সবাই জানে, তিনি সঠিক কাজ করছেন। কিন্তু এখন একদল উগ্র বাম ও অসুস্থ সংস্কৃতির লোক আছে, যারা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তারা তাঁকে খারাপ বলে দেখানোর চেষ্টা করছে।’
নিশ্চয়ই শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা থাকা উচিত বা প্রতিবন্ধীদের সাহায্য পাওয়া উচিত—এসব কথা বলা যদি ‘উগ্র বাম ও অসুস্থ সংস্কৃতি’ হয়, তাহলে এমন সংস্কৃতির প্রয়োজন সম্ভবত আরও বেড়েছে।
মিলেই সরকার কার্যত আর্জেন্টিনায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর কাজটা করছে। অবসর ভাতাভোগী এবং অন্য যাঁরা কৃচ্ছসাধানের নীতির কারণে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। মার্চ মাসে এ রকম একটি কর্মসূচিতে রাবার বুলেটে এক চোখ অন্ধ হয়ে যায় ৩৩ বছর বয়সী জনাথন নাভাররোর।
ট্রাম্প নিজেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে। সম্প্রতি মিলেইয়ের সঙ্গে রসিকতার ছলে আর্জেন্টিনায় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আপনার বিরোধীদের জন্যই এটা (টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র) লাগবে, মনে হয়।’ ইসরায়েল প্রশ্নেও ট্রাম্প ও মিলেই একই সুরে কথা বলেন।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের পর মনে হচ্ছে, মিলেই তাঁর বেসামাল মুক্তবাজারি নীতি নতুন করে পরীক্ষা করার সুযোগ পেলেন। কিন্তু এতে আর্জেন্টিনার দরিদ্র লোকদের অনেক কিছু হারাতে হবে। এই নির্বাচন ওয়াশিংটনের জন্য অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। ট্রাম্প নিজেই তাঁর ‘বিজয়’ বক্তৃতায় বলেছেন, ‘এই নির্বাচনের কারণে আমরা অনেক অর্থ উপার্জন করেছি। কারণ, বন্ডের দাম বেড়ে গেছে। তাদের পুরো ঋণ রেটিং বেড়ে গেছে।’
ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুধু টাকার জন্য এই পরিস্থিতির সঙ্গে নেই।’ ফলে আর্জেন্টিনার আবার মহান হওয়ার দিনগুলোয় ট্রাম্পের এ কথাগুলো স্মরণে রাখুন।
বেলেন ফের্নান্দে আল–জাজিরার কলাম লেখক
আল–জাজরিা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আর জ ন ট ন য় আর জ ন ট ন র র জন য বল ছ ন ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
ওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ডায়েট
আজ বিশ্ব ভেগান দিবস। জীবনযাপনের এই পদ্ধতিতে খাদ্য হিসেবে প্রাণিজ উৎস থেকে কোনো খাবার খাওয়া হয় না। খাওয়া হয় উদ্ভিজ্জ খাবার। শাকসবজি, ফল, ডাল, বীজ ও বাদাম নিরামিষ খাদ্যের একটি বড় অংশ গঠন করে। তারকা, ক্রীড়াবিদসহ অনেকে এখন ভেগান ডায়েটে অভ্যস্ত। তবে ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়। ভেজিটেরিয়ানরা উদ্ভিজ্জ খাবারের পাশাপাশি দুধ, ডিম ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষও খেয়ে থাকেন।
উপকারিতাওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গাউট বা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে ভেগান ডায়েট খুবই উপকারী।
ভেগান ডায়েট প্রদাহ প্রতিরোধী। এটি শরীরে ব্যথা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রাণিজ আমিষে চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে তা নেই।
ভেগান ডায়েট হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় ও হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
ভেগান ডায়েট উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অ্যানাল ফিসার, পাইলস, রেক্টাল ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়