রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে ছাত্রদল নেতার একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত
Published: 31st, October 2025 GMT
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতাকে সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে মারধর করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের হৃদয় গাজী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সিদ্ধান্তে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের নির্দেশে হৃদয় গাজীকে একাডেমিক কার্যক্রমে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১–এ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির কথোপকথন চলছিল। সে সময় পাশেই চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। পরে আমরা জানতে পারলাম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
এ ছাড়া হৃদয় গাজীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর শহরের হাজির পাড়া রামবাড়ি এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিন ইখতিদার ওরফে নিপুনকে মারধর করে বহিরাগত এক যুবক। বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পুলিশ বুধবার দুপুরে ঘটনায় জড়িত এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে প্রশাসনিক ভবন–১–এ তালা ঝুলিয়ে দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১-এ গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। পরে রাত আটটার দিকে তালা খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী একাডেমিক ভবন–১–এ ফিরে আসেন। এ সময় ফেসবুকে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের বিষয়টি ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চাইতে রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে কথা বলে। এ সময় অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১–এর পাশে জাহিদুল ইসলামকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম আলী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে বহিরাগত এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তী ঘটনা শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ। এ বিষয়ে আমার অবগত নই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ড ম ক ভবন ১ এ ল ইসল ম ঘটন য় ম রধর ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।
নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।
গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।
‘আমরা আর পারছি না’
গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’
নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’
নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।
নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই
গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।
ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’
 লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ