ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিরুদ্ধে জেরুজালেমে রক্ষণশীল ইহুদিদের ব্যাপক বিক্ষোভ
Published: 31st, October 2025 GMT
ইসরায়েলের জেরুজালেমে গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েক লাখ অতি রক্ষণশীল ইহুদি (আলট্রা–অর্থোডক্স) বিক্ষোভ করেছেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদানের জন্য দেশটিতে সরকারিভাবে যে আদেশ জারি রয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
‘ডেমোনেস্ট্রেশন অব দ্য মিলিয়ন’ নাম পাওয়া এ বিক্ষোভে ইসরায়েলের সব আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষের মধ্যে বিরল এক ঐক্য দেখা গেছে।
গতকাল চাবাদ নামের একটি আলট্রা–অর্থোডক্স গোষ্ঠীর র্যাবাইরা (ইহুদি ধর্মীয় নেতা) ওই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন। চাবাদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
গতকাল বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২০ বছর বয়সী তরুণ ইয়েহুদা হির্শ বলেন, ‘আজ সব আলট্রা–অর্থোডক্স গোষ্ঠী একত্র হয়েছে। আমরা কোনো পরিস্থিতিতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেব না।’
ইয়েহুদা আরও বলেন, ‘আমরা দুই বিপরীত পক্ষ।’ এর মধ্য দিয়ে হির্শ মূলত বুঝিয়েছেন, আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষ একদিকে আর অন্যদিকে সেনা ও রাষ্ট্রপক্ষ।
ইয়েহুদা বলতে থাকেন, ‘সর্বশেষ লড়াইয়ের ১০ বছর পর প্রথমবারের মতো সবাই একত্র হয়েছেন। আমরা যেমন হামাসে যোগ দেব না, তেমনি আমরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতেও যোগ দেব না।’
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলেছে, গতকাল আলট্রা–অর্থোডক্সদের অনেকে ট্রেনে বিক্ষোভস্থলে গেছেন। এ জন্য রেলস্টেশনগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় ছিল।
পুলিশ জেরুজালেম যাওয়ার প্রধান সড়ক হাইওয়ে এক এবং শহরের অন্যান্য সড়ক বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা যেন বেশি না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের অনেকে পায়ে হেঁটে শহরের উদ্দেশে রওনা হন।
ইসরায়েলে বহু বছর ধরে আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগ দেওয়ার আদেশ নিয়ে জটিলতা চলছে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন তাঁদের সেনাবাহিনীতে আলট্রা–অর্থোডক্সদের বাধ্যতামূলক যোগদান থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন, তবে তা নিয়ে কোনো আইন হয়নি।
সত্তরের দশক থেকে আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। তখনো তাদের অন্তর্ভুক্ত করার কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
পরে গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন শুরু হলে এতে অংশ নেওয়ার জন্য লাখ লাখ ইসরায়েলি নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়। এমন অবস্থায় আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত সপ্তাহে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি না হওয়া কয়েকজন আলট্রা–অর্থোডক্স শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে সামরিক পুলিশ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
গতকাল ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েলভ নিউজের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক নতুন কমিটির চেয়ারম্যান বোয়াজ বিসমুথ একটি নতুন খসড়া আইন প্রস্তুত করেছেন।
নতুন পরিকল্পনাটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, এটিকে চলতি বছরের শুরুতে সরকার থেকে পদত্যাগকারী আলট্রা–অর্থোডক্স পক্ষগুলোকে শান্ত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কমিটির–পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান ইউলি এডেলস্টেইন জটিলতা তৈরি করায় তাঁকে সরিয়ে দিয়ে বিসমুথকে কমিটির প্রধান করা হয়। লিকুদ পার্টির দলের আরেকজন নেতা এবং আলট্রা–অর্থোডক্স ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র গতক ল আলট র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু কিছু ব্যাংক খুলেছে। তবে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে বড় সমস্যায় পড়েছেন গাজাবাসী। নগদ অর্থসংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
দুই বছর ধরে গাজায় নির্বিচার হামলায় ঘরবাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অনেক ব্যাংক ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক খোলা শুরু করে। এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তাঁদের বেশির ভাগকে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও গাজায় ইসরায়েলের সেনাদের হামলায় দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫২৭। যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণসহ যেকোনো কিছু ঢুকছে ইসরায়েলের নজরদারিতেই।
নগদ অর্থের জন্য মধ্য গাজার নুসেইরাতে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের বাইরে সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়ায়েল আবু ফারেস (৬১)। তিনি বলেন, ব্যাংকে কোনো অর্থ নেই। নগদ অর্থের সঞ্চালন নেই। হতাশার সুরে ছয় সন্তানের এই বাবা বলেন, ব্যাংকে এসে কাগজপত্রের লেনদেন করে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গাজায় খাবার কেনা বা বিভিন্ন পরিষেবার বিল দেওয়ার মতো প্রায় সব দৈনন্দিন লেনদেন নগদ অর্থে করতে হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরু হওয়ার পর গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা। ফলে সেখানে নিত্যপণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের মতো নগদ অর্থও ঢুকতে পারছে না। যদিও যুদ্ধবিরতির পর এখন কিছু কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে।
গাজাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জাইয়্যাব বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ব্যাংক খোলা আছে, শীতাতপ যন্ত্রও চালু আছে। কিন্তু ইলেকট্রনিক লেনদেন ছাড়া মূলত আর কিছুই হচ্ছে না। কারণ, কোনো আমানত নেই। তাই নগদ অর্থ তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
আবু জাইয়্যাব বলেন, ব্যাংক যেহেতু নগদ অর্থ দিতে পারছে না, তাই বেতন ক্যাশ করতে মানুষজন কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছেন। তাঁদের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি অর্থের বিনিময়ে বেতন ক্যাশ করতে হচ্ছে।
‘আমরা আর পারছি না’
গাজায় একসময় ব্যাংক লেনদেন এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যেত জানিয়ে সাত সন্তানের মা ইমান আল-জাবারি বলেন, ‘এখন ব্যাংকে লেনদেন করতে আপনাকে দুই বা তিন দিন যেতে হয়। একাধিকবার যাতায়াত করতে হয়। পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এত কিছু করে আপনি ৪০০-৫০০ শেকেলের (১২৩-১৫৩ ডলার) মতো তুলতে পারবেন। বর্তমানে অতি উচ্চমূল্যের বাজারে এই অর্থ দিয়ে কী কেনা যায় বলেন? আমরা আর পারছি না।’
নগদ অর্থের ঘাটতি অধিকাংশ গাজাবাসীর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও কিছু মানুষ এই সংকটকে জীবিকার উপায় হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। মানাল আল-সাইদির মতো কেউ কেউ ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংক নোট জোড়াতালি দেওয়ার কাজ করছেন। এতে তাঁদের রুটি-রুজি জুটছে। ৪০ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘কাজ করে আমি দৈনিক ২০-৩০ শেকেল (৬-৯ ডলার) আয় করতে পারি। যা আয় হয়, তা দিয়ে আমি একটি রুটি, অল্প শিম ও ভাজাপোড়াসহ টুকটাক কিছু কিনতে পারি।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সবজির দাম আকাশছোঁয়া। মানাল আল-সাইদি বলেন, ‘সবজি বা এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার মতো অর্থ আমি আয় করতে পানি না। আমার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়।’
নগদ অর্থসংকটে জর্জরিত গাজার অনেক মানুষকে ডিম বা চিনির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্যও ব্যাংক অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লেনদেনে ভরসা করতে হচ্ছে। এই সংকটে বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম আদায় করছেন।
নগদ অর্থ কখন ব্যাংকে আসবে ঠিক নেই
গাজায় বর্তমানে ত্রাণ সরবরাহ নজরদারি করছে ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটরিজ (সিওজিএটি)’ নামের একটি শাখা। কখন বা কীভাবে নগদ অর্থ গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়া হবে, তা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
নগদ অর্থের ঘাটতি গাজাবাসীর সংকটকে নানা দিক থেকে আরও নাজুক করে তুলেছে। তাঁবু, খাবার ও ওষুধ কিনতে অনেকে এরই মধ্যে সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন ও হাতের কাছে যে সম্বল ছিল, তা-ও বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু মানুষ টিকে থাকার জন্য বিনিময় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করছেন।
ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরাউতি (৫৩) জানান, এমন কিছু টাকা হাতে আসছে, যা অতিব্যবহারের ফলে চেনার উপায় নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি এসব টাকা নিচ্ছেন। নামরাউতির ভাষায়, ‘আমার কাছে নোটের সিরিয়াল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ সিরিয়াল নম্বর আছে, ততক্ষণ আমি নোটকে টাকা হিসেবে বিবেচনা করি।’
 লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে স্বর্ণালংকার লুটের জন্য মা-মেয়েকে হত্যা, জানাল পুলিশ