পাহাড় ও নদীর সর্বনাশ এভাবে ঠেকানো সম্ভব?
Published: 1st, November 2025 GMT
গোটা দেশের নদী, পাহাড়, টিলা তথা পরিবেশ হুমকির মুখে। সরকার যায় সরকার আসে, পরিবেশের ওপর আগ্রাসন থামছে না কোনোভাবেই। স্থানীয় ক্ষমতাবান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা পরিবেশ ধ্বংসের মূলে হলেও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও আইনের শাসনের অভাব বিষয়টিকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করছে। পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ আইন প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। এখানে সমস্যা বা সংকট কোথায়?
পাহাড়, নদী আর সাগরের মিতালিতে গড়া একসময়ের নান্দনিক শহর চট্টগ্রাম আজ নিজের প্রাকৃতিক প্রাণশক্তি হারাতে বসেছে। কর্ণফুলী নদীর মুমূর্ষু দশা, পাহাড়খেকোদের হাতে একের পর এক পাহাড়ের বিলুপ্তি এবং বায়ুদূষণের মারাত্মক শিকার হওয়া—এই চিত্রগুলো ইঙ্গিত দেয় যে চট্টগ্রামের পরিবেশকে পদ্ধতিগতভাবে ‘হত্যা’ করা হচ্ছে। অথচ এই পরিবেশবিধ্বংসী অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরার জন্য যে আইনি কাঠামো রয়েছে, তা কার্যত ‘কাগুজে বাঘ’-এ পরিণত হয়েছে। পরিবেশ আদালতে মামলার নগণ্যতা এবং অর্থদণ্ডের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা এই ধ্বংসযজ্ঞকে আরও উসকে দিচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চার দশকে চট্টগ্রামের ২০০টির বেশি পাহাড়ের মধ্যে ১২০টিই বিলীন হয়ে গেছে। আর চট্টগ্রাম শহরের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী নদী গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার বর্জ্যের ভাগাড় হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এর পানি ও পলিতে এখন ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ কণা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের পাশাপাশি মানবস্বাস্থ্যের জন্যও চরম হুমকি। এ ছাড়া দেশের অন্যতম দূষিত জেলার তালিকায় চট্টগ্রামের নাম উঠে এসেছে।
প্রকৃতির ওপর এমন নজিরবিহীন ‘অত্যাচার’ যখন চলছে, তখন প্রশ্ন ওঠে, আইন কী করছে? পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের মাধ্যমে কি পরিবেশ-অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে? চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালতের পরিসংখ্যান এই প্রশ্নের এক হতাশাজনক উত্তর দেয়। বর্তমানে এ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৩২৩ হলেও, এর মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের মামলা মাত্র ৭২টি, যা মোট মামলার মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। যে শহরে পাহাড় ও নদী দখলের এমন অবাধ উৎসব চলে, সেখানে পরিবেশ–সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা এত কম হওয়াটা অবিশ্বাস্য। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বিস্ময় প্রকাশ প্রমাণ করে, এই সংখ্যা বাস্তবের প্রতিফলন নয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনজীবীদের অভিযোগ, অধিদপ্তর নিজেরাই মামলা কম দেয়। তাদের ঝোঁক থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কেবল অর্থদণ্ড আদায়ের দিকে। অর্থদণ্ডের মাধ্যমে অপরাধীরা সহজে পার পেয়ে যায় আর সাধারণ মানুষ বা পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সহজে পরিবেশ আদালতে সরাসরি মামলা করতে পারে না। পরিবেশ আদালত চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি নিজেই স্বীকার করেছেন যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু পাহাড় বা নদী দখলকারী, শিল্পদূষণকারী শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলোর কাছে লাখ টাকা জরিমানা কোনো শাস্তি নয়, বরং তা দূষণ করার একটি ‘লাইসেন্স’ মাত্র। এর ভয়ংকর ফলস্বরূপ, বিগত তিন বছরে মাত্র একটি মামলায় কারাদণ্ড হলেও সেই মামলার আসামিরাও পলাতক।
শুধু চট্টগ্রাম শহর নয়, গোটা দেশেরই একই চিত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবশ্যই অর্থদণ্ডের ঝোঁক বাদ দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় কঠোর ফৌজদারি মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পরিবেশ আদালতকে কেবল নামেই নয়; বরং বাস্তবে কার্যকর করতে হবে। সরকারি কৌঁসুলি ও বিচারকদের পক্ষ থেকে পরিবেশ ধ্বংসকারী অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক কারাদণ্ডের রায় প্রদানের মনোভাব থাকতে হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা যেমনটি বলেছেন, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ বা সংগঠনগুলোর পরিবেশ আদালতে সরাসরি মামলা করার পথে আমলাতান্ত্রিক বাধা দূর করতে হবে। আমাদের নদী, পাহাড়, বন তথা পরিবেশকে বাঁচাতে নতুন করে ভাবতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ স আইন র সরক র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ডায়েট
আজ বিশ্ব ভেগান দিবস। জীবনযাপনের এই পদ্ধতিতে খাদ্য হিসেবে প্রাণিজ উৎস থেকে কোনো খাবার খাওয়া হয় না। খাওয়া হয় উদ্ভিজ্জ খাবার। শাকসবজি, ফল, ডাল, বীজ ও বাদাম নিরামিষ খাদ্যের একটি বড় অংশ গঠন করে। তারকা, ক্রীড়াবিদসহ অনেকে এখন ভেগান ডায়েটে অভ্যস্ত। তবে ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়। ভেজিটেরিয়ানরা উদ্ভিজ্জ খাবারের পাশাপাশি দুধ, ডিম ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষও খেয়ে থাকেন।
উপকারিতাওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গাউট বা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে ভেগান ডায়েট খুবই উপকারী।
ভেগান ডায়েট প্রদাহ প্রতিরোধী। এটি শরীরে ব্যথা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রাণিজ আমিষে চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে তা নেই।
ভেগান ডায়েট হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় ও হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
ভেগান ডায়েট উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অ্যানাল ফিসার, পাইলস, রেক্টাল ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়