ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস ঘিরে ইসরায়েলের শীর্ষ আইনি কর্মকর্তার পদত্যাগ
Published: 1st, November 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার সময় গ্রেপ্তার একজন ফিলিস্তিনি বন্দীর ওপর সৈন্যদের নির্যাতনের একটি ভিডিও ফাঁসের ফৌজদারি তদন্তকে ঘিরে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রধান আইন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
মেজর-জেনারেল পদমর্যাদার অ্যাডভোকেট জেনারেল ইয়াফাত তোমের-ইয়েরুশালমি বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করছেন। কারণ, তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভিডিওটি প্রকাশ করার অনুমোদন দিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের ফলে পাঁচজন ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ওই তদন্তের ব্যাপক নিন্দা জানিয়েছেন ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদেরা। তদন্তকারী কর্মকর্তারা যখন অভিযুক্ত সৈন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন, তখন বিক্ষোভকারীরা দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছিল।
ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশের এক সপ্তাহ পর নির্যাতনের মুহূর্তগুলোর ধারণ করা একটি নিরাপত্তা ক্যামেরার ভিডিও ইসরায়েলের এন১২ নিউজ ফাঁস করে দেয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সৈন্যরা এক বন্দীকে আলাদা স্থানে নিয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের সঙ্গে একটি কুকুর রয়েছে। তাঁরা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিজেদের কার্যকলাপ এমনভাবে আড়াল করে রেখেছেন, যাতে কেউ দেখতে না পারে।
বুধবার ইসরায়েলের কট্টরপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ভিডিও ফাঁসের বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত চলছে। তোমের-ইয়েরুশালমিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
তোমের-ইয়েরুশালমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, সামরিক বাহিনীর আইন বিভাগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। যে বিভাগকে আইনের শাসন বজায় রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যুদ্ধের সময় সেটা কলঙ্কের শিকার হয়েছে।
সহিংসতারঅবশ্যই তদন্ত করা উচিত, বলছেন কর্মকর্তাভিডিও ফুটেজটি সদে তেইমান আটক কেন্দ্র থেকে পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলায় অংশ নেওয়া কিছু হামাস যোদ্ধা এবং পরে গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস অভিযানের সময় আটক ফিলিস্তিনিদের এই আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি হেফাজতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর গুরুতর নির্যাতনের খবর দিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কয়েক ডজন ঘটনার তদন্ত করছে। তবে তারা দাবি করেছে, ওইসব নির্যাতন পদ্ধতিগত ছিল না।
তোমের-ইয়েরুশালমি তাঁর পদত্যাগপত্রে সদে তেইমান আটক কেন্দ্রে বন্দী ব্যক্তিদের ‘নিকৃষ্টতম ধরনের সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি আরও যোগ করেছেন, এর মাধ্যমে সন্দেহজনক নির্যাতনের তদন্ত করার বাধ্যবাধকতাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায় না।
ইসরায়েলের কিছু রাজনীতিবিদ দ্রুত তোমের-ইয়েরুশালমির পদত্যাগকে কাজে লাগান। কাৎজ বলেছেন, যাঁরা ‘ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটান, তাঁরা আইডিএফের পোশাক পরার অযোগ্য।’
ইসরায়েলের উগ্রপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন-গভির আইন কর্মকর্তা তোমেরের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জড়িত আরও আইন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বেন–গভির নিজে ইসরায়েলি কারাগারে মেঝেতে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, ৭ অক্টোবরের হামলাকারী ও তাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
চলতি মাসে যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীর বিনিময়ে গাজার প্রায় ১ হাজার ৭০০ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ বন্দিদশায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন।
হামাসের কাছে বন্দী ইসরায়েলিদের মধ্যে তিনজন দেশটির সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দম্ভ প্রকাশ করা বেন-গভিরের মন্তব্যের কারণে কখনো কখনো পরিস্থিতি খারাপ হতো। তাদের জিম্মিকারীরা তাঁদের মারধর করত।
অবশ্য জবাবে চরমপন্থী মন্ত্রী বেন-গভির বলেন, এসব অভিযোগ উল্টো হামাসের পক্ষেই যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন কর মকর ত ইসর য় ল র র পদত য গ দ র ওপর বল ছ ন কর ছ ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক’: আইজিপি
পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক ও কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
গেল এক বছর পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাহারুল আলম বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে আইজিপি হিসেবে দায়িত্বপালনের সময়টা মোটেই সুখকর নয়। আমাকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেই শুরু করতে হয়েছে এবং আমাকেও মাঝে মধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কী আমাদের লোক?’ ধারাবাহিকভাবে এমন কথা শুনতে হয় বলে জানান তিনি।
আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বাহারুল আলম। যৌথভাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
রাজনৈতিক সরকারই দেশ চালাবে এবং তারাই অভিভাবক উল্লেখ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘উনারাই (রাজনৈতিক সরকার) তো আমাদের অভিভাবক, আমি মনে করি; সে জায়গাটায় কেন আমি যেতে পারছি না এবং সে ভয় থেকেই আমরা (পুলিশ) বলি, আমাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করে একটা ইনডিপেনডেন্ট বডির আন্ডারে (স্বাধীন বিভাগের অধীনে) আমাকে নিয়ে যান, ওই ভয় থেকেই; ওই আস্থাটা কেন আমি পাচ্ছি না যে, উনারাই করবেন। উনারা দেশ চালাবেন, কিন্তু উনারা কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না, সে জায়গাটায় কবে যাব আমি?’
আরও পড়ুনগোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার না হলে পুলিশ সংস্কার অর্জিত হবে না: ইফতেখারুজ্জামান১ ঘণ্টা আগেপ্রথম আলো-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়