উদ্যোক্তারা চেয়েছেন প্লট, বিসিক দিচ্ছে ‘পুকুর’
Published: 1st, November 2025 GMT
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাটি ভরাট থেকে শুরু করে অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ না করেই প্লট হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা এখন বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনের কাজে এগোতে পারছেন না।
বিসিকের নিয়ম অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন, মাটি ভরাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ-সংযোগ স্থাপন, পানিনিষ্কাশন ও বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে তবেই প্লট হস্তান্তরের কথা। কিন্তু সিরাজগঞ্জ শিল্পপার্কে এসব কাজের অনেকটাই শেষ হয়নি। আধা খেঁচড়াভাবে প্লট দেওয়ায় সেখানে শিল্প স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
দীর্ঘসূত্রতা আর ব্যয় বৃদ্ধি
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী, পশ্চিম মোহনপুর, বনবাড়িয়া, বেলটিয়া ও মোরগ্রাম মৌজা নিয়ে প্রায় ৪০০ একর জমিতে এই শিল্পপার্ক গড়ে তোলা হয়। ২০১০ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুনে। কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ সাতবার বাড়ানো হয়।
বিসিক ও উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে অনেক কাজ এখনো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
নৌ, রেল ও সড়কপথের সুবিধা থাকায় এই শিল্পপার্ক হতে পারে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল। তাই অনিয়মের অভিযোগগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা উচিত।সাইদুর রহমান, সভাপতি, সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।মাঠে দেখা বাস্তবতা
সম্প্রতি সরেজমিনে শিল্পপার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও নিচু জমি পুকুরের মতো পড়ে আছে, কোথাও আবার অর্ধসমাপ্ত রাস্তা। ড্রেনের পাইপ পড়ে আছে খোলা মাঠে, বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বেশির ভাগ প্লটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ এখনো দেওয়া হয়নি।
বিসিক কার্যালয়ের তথ্যমতে, এই প্রকল্পে ২৭৫ একর জমিতে এ, বি ও এস—এই তিন ক্যাটাগরিতে ৮২৯টি প্লট তৈরি করা হয়েছে। এসব প্লটে ৫৭০টি শিল্প স্থাপনের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি বিদেশি ও ২৭৯টি প্লট দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা হয়েছে। এ-ক্যাটাগরির প্লট ২০ হাজার বর্গফুট, বি-ক্যাটাগরির ১০ হাজার ও এস-ক্যাটাগরির ৬ থেকে ২৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের। প্রথম পর্যায়ে ১৯৬টি প্লট দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু প্লট অসমাপ্ত হওয়ায় উদ্যোক্তারা কাজে নামতে পারছেন না। ৮৩টি প্লট এখনো বরাদ্দ ও হস্তান্তর কোনোটাই হয়নি। বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে যোগাযোগ চলছে।
জিলানি অয়েল মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আতিউর রহমান বলেন, ‘ছয়টি প্লট পেয়েছি। আমাদের কারখানার যন্ত্রপাতির শিপমেন্ট হয়ে গেছে। কিন্তু সব প্লটেই মাটি ভরাট অসম্পূর্ণ। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের খরচে মাটি ভরাট শুরু করেছি।’
যমুনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইকবাল হাসান বলেন, ‘সমবায় সমিতির মাধ্যমে দুটি প্লট বরাদ্দের টাকা দিয়েছি। কিন্তু মাটি ভরাট হয়নি। প্লট বুঝে নিয়ে কী করব। অসম্পূর্ণ প্লটে তো আর ব্যাংক বিনিয়োগ করবে না।’
উদ্যোক্তাদের যত ক্ষোভ
এই শিল্পপার্ক নিয়ে উদ্যোক্তাদের অভিযোগের যেন শেষ নেই। যমুনা পেপার অ্যান্ড বোর্ড ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কে চারটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছি, কিন্তু সেগুলো অসম্পূর্ণ। অনেক জায়গায় নিচু জমি ও গর্ত আছে। এখন মাটি ভরাট করব, নাকি শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগ করব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
সরকার আর্ট প্রেসের মালিক সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্লটের বদলে যেন পুকুর দিয়েছে। এখানে ফ্যাক্টরি নয়, মাছ চাষই করা যাবে।’ আবার গোল্ডেন প্রিমিয়াম অয়েল মিলসের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্লট রাস্তার চেয়ে ৫-৬ ফুট নিচু। প্রায় ৫ লাখ ঘনফুট বালু কম ফেলা হয়েছে।’
আবদুর রাজ্জাক নামের আরেক উদ্যোক্তা বলেন, ‘এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছি। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই।’
অসম্পূর্ণ প্লট বরাদ্দের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে এমনটি হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সভাপতি, সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক ও জেলা প্রশাসক।চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন
সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ক শিল্প উদ্যোক্তা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, প্রকল্পের শুরুতে নৌবাহিনীর নারায়ণগঞ্জ শিপইয়ার্ড মাটি ভরাটের কাজ পায়। পরে ১৭ কোটি টাকা নিরাপত্তা অর্থ জমা দিয়ে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ২৭ কোটি ঘনফুট মাটি ভরাটের চুক্তি করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করেনি।
আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘বিসিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া না পেয়ে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কিছু প্লটে মাটি ভরাট করতে রাজি হয়েছে, তবে ১ কোটি টাকার বেশি দেবে না বলে জানিয়েছে।’
তবে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের উপমহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, যেসব প্লটে বালু কম, সেগুলোর কাজ ঠিকাদারই শেষ করবেন। তাঁদের সিকিউরিটি মানি বা নিরাপত্তা জামানত এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
কাজ ঠিকমতো না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হাসান বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমরা যথাযথভাবে মাটি ভরাট করেছি। নতুন করে ভরাটের বিষয়ে কিছু জানি না।’
সম্ভাবনার জায়গায় অনিশ্চয়তা
ভৌগোলিক অবস্থান সুবিধাজনক হওয়ায় সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্ককে বেশ সম্ভাবনা বলে মনে করা হয়। যদিও সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পরিবর্তে অনিশ্চয়তা বড় হয়ে উঠেছে।
এ নিয়ে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, নৌ, রেল ও সড়কপথের সুবিধা থাকায় এই শিল্পপার্ক হতে পারে দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল। তাই অনিয়মের অভিযোগগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা উচিত।
জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পপার্কের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অসম্পূর্ণ প্লট বরাদ্দের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে এমনটি হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, শিল্পপার্কটি সম্পূর্ণ চালু হলে এখানে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু অসমাপ্ত কাজের কারণে সেই সম্ভাবনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ য ক ত দ র অসম প র ণ ব যবস থ প রকল প ল ইসল ম ন বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
ওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ডায়েট
আজ বিশ্ব ভেগান দিবস। জীবনযাপনের এই পদ্ধতিতে খাদ্য হিসেবে প্রাণিজ উৎস থেকে কোনো খাবার খাওয়া হয় না। খাওয়া হয় উদ্ভিজ্জ খাবার। শাকসবজি, ফল, ডাল, বীজ ও বাদাম নিরামিষ খাদ্যের একটি বড় অংশ গঠন করে। তারকা, ক্রীড়াবিদসহ অনেকে এখন ভেগান ডায়েটে অভ্যস্ত। তবে ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়। ভেজিটেরিয়ানরা উদ্ভিজ্জ খাবারের পাশাপাশি দুধ, ডিম ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষও খেয়ে থাকেন।
উপকারিতাওজন কমাতে ও ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গাউট বা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে ভেগান ডায়েট খুবই উপকারী।
ভেগান ডায়েট প্রদাহ প্রতিরোধী। এটি শরীরে ব্যথা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রাণিজ আমিষে চর্বি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে তা নেই।
ভেগান ডায়েট হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় ও হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
ভেগান ডায়েট উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অ্যানাল ফিসার, পাইলস, রেক্টাল ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
ভেজিটেরিয়ান আর ভেগান কিন্তু এক নয়