Samakal:
2025-05-01@05:43:32 GMT

আওয়ামী লীগ কি আসবে নির্বাচনে?

Published: 23rd, March 2025 GMT

আওয়ামী লীগ কি আসবে নির্বাচনে?

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কোনো ‘পরিকল্পনা’ যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেই– সেটা প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন। এমনটিও বলেছেন, একটি বড় রাজনৈতিক দল (বিএনপি) আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে অসম্মত বলেও সরকার ওই দিকে যেতে অনাগ্রহী। এ অবস্থায় কে কাকে কোথায় ‘ডেকে’ এ প্রশ্নে কী বললেন, সেটার গুরুত্ব কমই। এ ক্ষেত্রে কারও বক্তব্যকে পরিপূর্ণ সত্য ধরে নিয়ে আলোচনা করাও অসংগত।  

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছুদিন পর থেকেই আলোচনা চলছে– জনপরিসরে প্রায় অনুপস্থিত দলটি রাজনীতিতে ফিরবে কিনা। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সিংহভাগই এখন ভারতে। দেশে আটক হয়েছেন কমই। তৃণমূল নেতাদের সিংহভাগও দেশ-বিদেশে পলাতক। কর্মীরা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে। দলটির সমর্থক কম নয় এবং তারা দেশেই আছেন। এদের একাংশ সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশের কোথাও কোথাও দলটির কর্মী-সমর্থকদের অতি ক্ষুদ্র অংশকে মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল বের করতে দেখা যায়। দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা তাদের উৎসাহ জোগান। কিন্তু এগুলো দলটির ‘রাজনীতিতে ফেরা’র কোনো লক্ষণ নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে ফেরাটা খুব কঠিন। 

এর আগে, নব্বইয়ের গণআন্দোলনে সেনাশাসক এরশাদের পতন ঘটেছিল। সেটি ছিল অনেক কম রক্তক্ষয়ী এবং এরশাদসহ জাতীয় পার্টির প্রায় সব নেতা তার পরও দেশেই অবস্থান করছিলেন। এরশাদ কারাগারে যান এবং সেখান থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন সর্বোচ্চ পাঁচ আসনে। প্রথমবারের মতো দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন জাপার জন্য ছিল কঠিন। ‘স্বাভাবিক পরিবেশ’ পেলে দলটি হয়তো আরও কিছু আসন পেত। জাপার প্রাপ্ত আসন ছিল ৩৫ এবং ভোট প্রায় ১২ শতাংশ। 
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অবশ্য নজিরবিহীন। অল্প সময়ের আন্দোলনে এত রক্তক্ষয়ের উদাহরণ কম। ক্ষমতাসীনদের পতনও ঘটে সশব্দে। ভয়াবহ প্রতিশোধের আশঙ্কায় সর্বস্তরের নেতাকর্মী, এমনকি সহযোগীদের মধ্যেও ছিল পালিয়ে যাওয়ার তাড়া। হাসিনা রেজিমের সহযোগী জনপ্রশাসনের লোকজন, গুরুতর আর্থিক অপরাধে জড়িত ব্যবসায়ীদেরও ছিল একই প্রবণতা। রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধাক্কায় ক্ষমতার সঙ্গে জড়িতদের এই মাত্রায় আত্মগোপন ও দেশত্যাগের ঘটনা সাম্প্রতিক দুনিয়ায় বেশি নেই। এ অবস্থায় দেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের আইনগত সুযোগ থাকলেও তা গ্রহণ করা কতখানি সম্ভব– সে প্রশ্ন রয়েছে। 

শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগকে অব্যাহতভাবে এসব কাজে ব্যবহার করায় দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিও কম জোরালো নয়। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে তেমন প্রতিক্রিয়া না হলেও মূল সংগঠন নিষিদ্ধ করাটা এত সহজ নয় বলেই মনে হচ্ছে। দলটির অপরাধীদের বিচারে দৃঢ়তা দেখালেও সরকার এটিকে সরাসরি নিষিদ্ধ করতে রাজি নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-সংক্রান্ত আইনে (আইসিটি) দল নিষিদ্ধকরণের প্রস্তাবিত ধারাটি রাখেনি সরকার। ‘নির্বাহী আদেশে’ দলটি নিষিদ্ধের সুযোগও তারা নেবে না বলে জানাচ্ছে। 

পতনের মাত্র ক’দিন আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হাসিনা সরকার নিষিদ্ধ করে জামায়াত-শিবিরকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অবশ্য আওয়ামী লীগই কার্যত হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ। সাত মাস পরও তারা নির্বিঘ্নে ন্যূনতম কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। গোপালগঞ্জের মতো অঞ্চলেও দলটির কার্যক্রম পরিচালনা এখন কঠিন। নিষিদ্ধ না হলেও এই ‘গ্রাউন্ড রিয়েলিটি’ তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দলের তস্য নেতাটিরও গ্রেপ্তারের খবর মিলছে নিয়তই। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দেওয়া হচ্ছে ‘অচিরেই’ ফিরে এসে প্রতিশোধ গ্রহণের ঘোষণা। দলনেত্রীও এমন বক্তব্য অব্যাহত রাখায় পরিস্থিতি উত্তেজনাকর থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনীতিতে ফিরবে; কীভাবে অংশ নেবে নির্বাচনে– তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। 

এমন পরিস্থিতিতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠনে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া বা পাওয়ার তাৎপর্য কী, কে জানে! প্রশ্ন হচ্ছে, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ ফিরলে মূল দল কি উপকৃত হবে কোনোভাবে? আর শেখ হাসিনা কি এটা অনুমোদন করবেন? বিদেশে অবস্থানরত হাসিনা অনুগত নেতারা বরং বলছেন, তারা ক্ষমতাচ্যুত নেতৃত্বের প্রতিই আস্থাশীল। সে ক্ষেত্রে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ তো কার্যত হবে ‘বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ’, যারা হাসিনার বিধ্বংসী ভূমিকার নিন্দা করেই এগোতে চাইবে। তেমন কিছু ঘটছে কিনা, সেটা মোটেও স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের ‘নিরপরাধ অংশ’ এবং এর বাইরের অনেকের মধ্যে অবশ্য এমন একটি আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা রয়েছে। বাতাসে কান পাতলেই সেটা শোনা যায়। 

এমন আলোচনাও রয়েছে, আওয়ামী লীগের নিরপরাধ অংশটি ভিন্ন নামে সংগঠিত হলে ভালো হয়। সেটা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। কেননা, সবকিছুর পরও আওয়ামী ধারার উল্লেখযোগ্য ভোটার রয়েছে। আর তারা দেশেই আছেন। ইউনূস সরকারও দৃশ্যত চাইছে নির্বাচনে জনগণের এ অংশটির অংশগ্রহণ। নিষিদ্ধ হয়ে গেলে কিংবা সেটা না হয়েও নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী ধারার এ ভোটারদের সবাই যে এতে অনুপস্থিত থাকবেন, তা নয়। তবে পছন্দসই কোনো দল মাঠে না থাকলে তাদের অংশগ্রহণটি জোরালো ও দৃশ্যমান হবে না। ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবি মেটাতে এমন অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বিশেষত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে ‘আগ্রহ’ রয়েছে, তাতে কোনো লুকোছাপা নেই। ইউনূস সরকারও কি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের কথা বলছে না? হালে সেনাপ্রধানও এক বহুল আলোচিত বক্তৃতায় আগামী নির্বাচনকে ‘ইনক্লুসিভ’ করার ওপর জোর দিয়েছেন। 
আওয়ামী লীগ ব্যাপক মানুষের কাছে তীব্রভাবে সমালোচিত হয়ে পড়লেও তার যে বিপুলসংখ্যক ভোটার রয়ে গেছে, সে বিবেচনায় দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা উচিত। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ পেলে দলটি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে বলেও অনেকের ধারণা। তবে নিরেট বাস্তবতা হলো, নির্বাচনে এলে জাপার চাইতেও অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে দলটিতে। এ অবস্থায় ইউনূস সরকারের পদত্যাগ চাইছেন প্রবাসে পলাতক কোনো কোনো আওয়ামী লীগ নেতা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ‘দলনিরপেক্ষ’ একটি সরকারও হয়তো তারা চাইবেন। তবে বাস্তবতা হলো, গণঅভ্যুত্থানের ফসল ইউনূস সরকারের অধীনেই হবে আগামী নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করবে বলেই অনুমেয়। ইউনূস সরকারও হয়তো এমনটাই ধরে নিয়ে বসে আছে। 

আওয়ামী লীগের অবশ্য সুবিধা হয় তাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করে দিলে। তাহলে দলটি অভিযোগ করতে পারবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে। তার ভোটারদেরও সহজে জানাতে পারবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান। জুলুমবাজ হয়ে ওঠা দলটিও এতে ‘মজলুমের ভাবমূর্তি’ পাবে– যতখানি সম্ভব। 

­হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ইউন স সরক র ন ষ দ ধ কর এ অবস থ য় পর স থ ত সরক র র র জন ত অপর ধ দলট র গ রহণ অবশ য আওয় ম ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ