জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কাউকে দেবে না মস্কো
Published: 26th, March 2025 GMT
জাপোরিঝঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্র রুশ স্থাপনা। তাই এর নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেন বা অন্য কোনো দেশের কাছে দেওয়া অসম্ভব। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি যৌথভাবে পরিচালনার বিষয়টিও প্রত্যাখ্যান করা করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, যৌথভাবে পরিচালনায় পারমাণবিক কেন্দ্রের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া জাপোরিঝঝিয়া এখন আংশিকভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর যে চারটি অঞ্চলে রুশ সেনারা নিয়ন্ত্রণে নেয় তার মধ্যে জাপোরিঝঝিয়া একটি। অভিযান শুরুর সাত মাস পরে এসব অঞ্চলে গণভোট আয়োজন করে রাশিয়া। পরে সেগুলোকে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রুশ ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি তুলে ধরেছে।
পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য এই গণভোটকে ভুয়া বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, জাপোরিঝঝিয়া কেন্দ্রটি ফেরত দেওয়া অনেক দিন ধরেই আর বাস্তবসম্মত নয়। বিশেষ করে ইউক্রেনের কাছে স্থানান্তর বা অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দেওয়া অসম্ভব।
আক্রমণের শুরুতেই রুশ বাহিনী কেন্দ্রটি দখল করে নেয়। ছয়টি চুল্লিসহ ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এর পর থেকে নিয়মিতভাবে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
বর্তমানে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে জাতিসংঘের পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউক্রেনের অন্য পারমাণবিক কেন্দ্রের সঙ্গে এটিরও নজরদারি করে থাকে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ কেন্দ্রটিকে তাদের এখতিয়ারে ফিরিয়ে আনার দাবি করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাপোরিঝঝিয়াকে রুশ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপের সময় ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাব দেন।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ইউক্রেনের জনগণের। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে এসব কেন্দ্রে সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন।
হামলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপরাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশটির তিনটি পৃথক এলাকায় বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলাচেষ্টায় ইউক্রেনকে দায়ী করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এ ধরনের হামলা বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্রিমিয়ায় গ্যাস সংরক্ষণাগারে হামলার চেষ্টা করে ইউক্রেন। এ ছাড়া কুরস্ক ও ব্রাইনস্ক এলাকায়ও হামলা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার ক্রেমলিন জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই তেল শোধনাগার, তেল ও গ্যাস পাইপলাইন এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ৩০ দিনের জন্য হামলা বন্ধে রাজি হয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করে বলা হয়, তারা মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাশিয়ায় ১১৭টি ড্রোনের সাহায্যে হামলা চালায়। এর মধ্যে ৫৬টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাইকোলাইভ বন্দরে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ বন্দর দিয়ে কৃষ্ণসাগরে যুক্ত হয় ইউক্রেন।
গত মঙ্গলবার সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে নৌপথ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। সমঝোতা অনুযায়ী, এই নৌপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালানো হবে না। তবে কবে নাগাদ এ চুক্তি কার্যকর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জার্মানির আহ্বান
জার্মানির পক্ষ থেকে গতকাল রাশিয়াকে শর্ত ছাড়াই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মস্কো দাবি করেছে, কৃষ্ণসাগরে হামলা বন্ধ করার চুক্তির বিষয়টি তাদের ওপর পশ্চিমাদের দেওয়া কিছু বিধি–নিষেধ তুলে নেওয়ার পরেই কার্যকর হতে পারে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, ‘শর্ত ছাড়াই রাশিয়াকে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প য় ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ