শুধু মা-বাবার নামটুকু বলতে পারছে আহত শিশু আরাধ্য
Published: 2nd, April 2025 GMT
ছোট্ট শিশুটির বয়স বড়জোর সাত কি আট বছর। পরনে নতুন জামা। সেখানে নকশা করা দুটি রঙিন ফুল। রঙিন ফুল দুটি কেমন যেন বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে ছোপ ছোপ রক্ত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। কপালে, মুখে ও হাতেও শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা শিশুটির শরীরজুড়ে তীব্র যন্ত্রণা। ব্যথায় কাতর। ঘুমের কোলে বারবার ঢলে পড়ছিল সে। ঘুম ভাঙলে চারপাশে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছিল! একটুক্ষণের জন্য চোখ মেলে এরপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে।
একটু পর ঘুম ভাঙে তার। পাশে থাকা ব্যক্তিটি ফিসফিস করে নাম জানতে চায় শিশুর। সঙ্গে মা-বাবা আর বাড়ির ঠিকানা। উত্তরে নিজের নাম বলতে পারে শিশুটি। জানায়, তার নাম আরাধ্য বিশ্বাস। আবার একটু থমকে যায়। মনে করার চেষ্টা করতে থাকে মা-বাবার নাম। কোনোভাবে জানাতে পারে, বাবার নাম দিলীপ বিশ্বাস, আর মা সাধনা বিশ্বাস। এরপর আর কিছু মনে পড়ে না ছোট্ট শিশু আরাধ্যর। মা-বাবার নাম বলতে বলতে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে। যন্ত্রণার ছাপ চেহারাজুড়ে।
আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
দুর্ঘটনাটি ঘটে আজ সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায়। এই দুর্ঘটনায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মারা গেছে ১০ জন। বাসটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে এবং মাইক্রোবাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী বলে জানায় পুলিশ। আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসও এই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিল। ভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পায় সে। তবে আহত হয়েছে গুরুতরভাবে। মা-বাবার নাম বলতে পারলেও মাইক্রোবাসটিতে তাঁরা ছিলেন কি না, থাকলেও কী অবস্থা, পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কেননা, গাড়িতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে দুজন। একজন শিশু আরাধ্য বিশ্বাস, বয়স সাত থেকে আট বছর। অন্যজন ২৩-২৪ বছরের একজন নারী। দুর্ঘটনার পর থেকে ওই নারীর জ্ঞান ফেরেনি। ফলে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি তাৎক্ষণিকভাবে।
আহত অবস্থায় দুজনকে লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসাধীন আছে দুজন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা যুক্ত হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, শিশুটি কোনোভাবে তার নাম ও মা-বাবার নাম বলতে পারছে। আর কিছুই মনে করতে পারছে না। শিশুটির আঘাত সম্পর্কে বলেন, মুখের বাঁ পাশে আঘাত পেয়েছে। দুটি পা ভেঙেছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আর কোথায় আঘাত লেগেছে তা জানা যাবে।
হাসপাতালে ভর্তি নারী সম্পর্কে জানানো হয়েছে, তাঁর অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালে আনার পর থেকে এখনো (বেলা ৩টা) পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি। আঘাতের ধরন ও বিস্তারিত জানার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুজনের সেবায় এগিয়ে এসেছে সনাতন স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ধারণা করছেন, মাইক্রোবাসের যাত্রীরা কুষ্টিয়া অথবা ঝিনাইদহ থেকে আসছিলেন। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। হতাহত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত পরিচয় জানতে তাঁরা স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ন ম বলত দ র ঘটন আর ধ য
এছাড়াও পড়ুন:
চার দিনের জ্বরে ভুগে মারা গেল কিশোর
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের ফকিরহাট এলাকায় আশরাফুর রহমান (১৪) নামের এক কিশোর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গত শুক্রবার সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে পৌর সদরের জেনারেল হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
আশরাফুর রহমান ওই এলাকার মিজানুর রহমানের একমাত্র ছেলে। সে সীতাকুণ্ড আলিয়া মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সীতাকুণ্ডে এই প্রথম একজন মারা গেল।
আশরাফুর রহমানের দাদা এম এ আলীম আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার তাঁর নাতির জ্বর আসে। সামান্য ব্যথাও ছিল। জ্বর কমছে না দেখে রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর আশরাফুরকে পৌর সদরের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল সোমবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হয়। আজ ভোর পাঁচটার দিকে সে মারা যায়। দুপুরে মডেল মসজিদ এলাকায় জানাজার নামাজ শেষে ফকিরহাট নলুয়া দিঘি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আশরাফকে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হাসপাতালের দায়িত্বগত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই কিশোর ভালো ছিল। আজ ভোর চারটার দিকে তার পাতলা পায়খানা ও খিঁচুনি হয়। এরপর তারা দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেওয়ার পথে কিশোরটি মারা যায়।
সীতাকুণ্ডে আজ এক দিনেই ৬ জনের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন।