ছোট্ট শিশুটির বয়স বড়জোর সাত কি আট বছর। পরনে নতুন জামা। সেখানে নকশা করা দুটি রঙিন ফুল। রঙিন ফুল দুটি কেমন যেন বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে ছোপ ছোপ রক্ত ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। কপালে, মুখে ও হাতেও শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা শিশুটির শরীরজুড়ে তীব্র যন্ত্রণা। ব্যথায় কাতর। ঘুমের কোলে বারবার ঢলে পড়ছিল সে। ঘুম ভাঙলে চারপাশে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছিল! একটুক্ষণের জন্য চোখ মেলে এরপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে।

একটু পর ঘুম ভাঙে তার। পাশে থাকা ব্যক্তিটি ফিসফিস করে নাম জানতে চায় শিশুর। সঙ্গে মা-বাবা আর বাড়ির ঠিকানা। উত্তরে নিজের নাম বলতে পারে শিশুটি। জানায়, তার নাম আরাধ্য বিশ্বাস। আবার একটু থমকে যায়। মনে করার চেষ্টা করতে থাকে মা-বাবার নাম। কোনোভাবে জানাতে পারে, বাবার নাম দিলীপ বিশ্বাস, আর মা সাধনা বিশ্বাস। এরপর আর কিছু মনে পড়ে না ছোট্ট শিশু আরাধ্যর। মা-বাবার নাম বলতে বলতে আবার ঘুমিয়ে পড়ে সে। যন্ত্রণার ছাপ চেহারাজুড়ে।

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিশুটিকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।

দুর্ঘটনাটি ঘটে আজ সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায়। এই দুর্ঘটনায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মারা গেছে ১০ জন। বাসটি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দিকে এবং মাইক্রোবাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী বলে জানায় পুলিশ। আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসও এই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিল। ভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পায় সে। তবে আহত হয়েছে গুরুতরভাবে। মা-বাবার নাম বলতে পারলেও মাইক্রোবাসটিতে তাঁরা ছিলেন কি না, থাকলেও কী অবস্থা, পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কেননা, গাড়িতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে দুজন। একজন শিশু আরাধ্য বিশ্বাস, বয়স সাত থেকে আট বছর। অন্যজন ২৩-২৪ বছরের একজন নারী। দুর্ঘটনার পর থেকে ওই নারীর জ্ঞান ফেরেনি। ফলে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি তাৎক্ষণিকভাবে।

আহত অবস্থায় দুজনকে লোহাগাড়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসাধীন আছে দুজন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা যুক্ত হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, শিশুটি কোনোভাবে তার নাম ও মা-বাবার নাম বলতে পারছে। আর কিছুই মনে করতে পারছে না। শিশুটির আঘাত সম্পর্কে বলেন, মুখের বাঁ পাশে আঘাত পেয়েছে। দুটি পা ভেঙেছে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আর কোথায় আঘাত লেগেছে তা জানা যাবে।

হাসপাতালে ভর্তি নারী সম্পর্কে জানানো হয়েছে, তাঁর অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালে আনার পর থেকে এখনো (বেলা ৩টা) পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি। আঘাতের ধরন ও বিস্তারিত জানার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুজনের সেবায় এগিয়ে এসেছে সনাতন স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ধারণা করছেন, মাইক্রোবাসের যাত্রীরা কুষ্টিয়া অথবা ঝিনাইদহ থেকে আসছিলেন। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। হতাহত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত পরিচয় জানতে তাঁরা স্থানীয়ভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ন ম বলত দ র ঘটন আর ধ য

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার