পানির দাবিতে সুবর্ণচরে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রা
Published: 2nd, April 2025 GMT
এক সময়ের পানির আধার ছিল নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর। গত কয়েক বছরে রবিশস্যের এ জনপদের মাঠ-ঘাট শুকিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। ভূগর্ভের পানি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে বাড়িঘরের গভীর নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। এমন পরিস্থতিতে পানির জন্য দল-মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পথে নেমে জানান দিলেন, আর বসে থাকা নয় এখনই সচেতন হতে হবে। না হলে অবশ্যম্ভাবী বিপদের মুখে পড়তে হবে। স্লোগানে-প্ল্যাকার্ডে ফুটে ওঠে পানি সংরক্ষণ ও অপচয়রোধে সচেতনতামূলক নানান কথা। ‘পানিই জীবন পানিই প্রাণ/পানি বাঁচাতে হাত লাগান’ এমনই স্লোগানে মুখর ছিল পদযত্রা।
বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানি সংকট নিরসনের আহ্বান নিয়ে স্থানীয় কিছু তরুণ পদযাত্রার আয়োজন করে। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান সর্বস্তরের মানুষ। চরবাটা খাসের হাট রাস্তার মাথা ও চরজব্বার ডিগ্রি কলেজ থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
পদযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা সুপেয় পানির তীব্র সংকট নিরসনে নানা দাবি তুলে ধরেন। এ সময় পরিবেশবান্ধব কৃষি, পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, রবিশস্যে প্রণোদনা বাড়ানো, খাল খনন, সরকারি খাস দিঘি উদ্ধার করে পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি কাজে লাগানোর উপর জোর দেওয়া হয়।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন চন্দ্রকলির নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশ কর্মী মো.
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সহকারী অধ্যাপক মাইন উদ্দিন ফিরোজ বলেন, রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করার বিষয়ে কৃষি আইন আছে। অথচ স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ আইন মানছে না। কৃষি কাজ, ইটভাটাসহ নানা কাজে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলায় এখন পানির কষ্টে ভুগছে সুবর্ণচরের মানুষ।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সুবর্ণচরের চাষাবাদের জন্য ২৪৫টি গভীর নলকূপের (সেচপাম্প) অনুমোদন দিয়েছে। এর বাইরে তিন হাজারেরও বেশি অনুমদোনহীন সেচপাম্প আছে। গ্রামে গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় কমছে৷ ফলে গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে জল উঠছে না। তিনি বলেন, পানির ফুরিয়ে আসায় বিপদও বাড়ছে। পানি ও শস্য দুইই বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। মাটির নীচে পানি কমে গেলে আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু উপরে উঠে আসবে। এতে পানি শুধু দূষিত হবে না, জমির শস্যও বিষাক্ত হয়ে উঠবে।
বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের ওপর জোর দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তরিক উল্লাহ বলেন, চাষবাসে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব। চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। নইলে পানির অপচয় রোধ করা যাবে না।
সাংবাদিক কামাল উদ্দিন বলেন, পানির সংকট আগামী দিনে মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। পদযাত্রায় সহমত পোষণ করে যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ পা মিলিয়েছেন, তাতে আশা করি পানির অপচয় রোধ এবং সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন নাজির হাট কলেজের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সমাজকর্মী তালহা মুহাম্মদ সিফাত উল্লাহ, গবেষক মিজানুর রাকিব, সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, মোহাম্মদ হারুন, ছাত্র সংগঠক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদয ত র পদয ত র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস