এক সময়ের পানির আধার ছিল নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর। গত কয়েক বছরে রবিশস্যের এ জনপদের মাঠ-ঘাট শুকিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। ভূগর্ভের পানি অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে বাড়িঘরের গভীর নলকূপে এখন আর পানি ওঠে না। এমন পরিস্থতিতে পানির জন্য দল-মত নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পথে নেমে জানান দিলেন, আর বসে থাকা নয় এখনই সচেতন হতে হবে। না হলে অবশ্যম্ভাবী বিপদের মুখে পড়তে হবে। স্লোগানে-প্ল্যাকার্ডে ফুটে ওঠে পানি সংরক্ষণ ও অপচয়রোধে সচেতনতামূলক নানান কথা। ‘পানিই জীবন পানিই প্রাণ/পানি বাঁচাতে হাত লাগান’ এমনই স্লোগানে মুখর ছিল পদযত্রা।

বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানি সংকট নিরসনের আহ্বান নিয়ে স্থানীয় কিছু তরুণ পদযাত্রার আয়োজন করে। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান সর্বস্তরের মানুষ। চরবাটা খাসের হাট রাস্তার মাথা ও চরজব্বার ডিগ্রি কলেজ থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

পদযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে বক্তারা সুপেয় পানির তীব্র সংকট নিরসনে নানা দাবি তুলে ধরেন। এ সময় পরিবেশবান্ধব কৃষি, পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, রবিশস্যে প্রণোদনা বাড়ানো, খাল খনন, সরকারি খাস দিঘি উদ্ধার করে পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি কাজে লাগানোর উপর জোর দেওয়া হয়।

স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন চন্দ্রকলির নির্বাহী পরিচালক ও পরিবেশ কর্মী মো.

সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, সুবর্ণচরে কখনই সুপেয় পানির সংকট ছিল না। এই জনপদকে বলা হতো পানির আধার। অথচ এখন পানির হাহাকার গ্রামে গ্রামে। এখন ১ হাজার ২০০ ফুট নিচেও পানি মিলছে না। পানিতে লবণের পরিমাণ হঠাৎ বেড়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের পানি সংকট সমাধানে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভূগর্ভের পানির মজুতের পরিমাণ জরিপ করতে হবে। অন্যথায় পানির পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সুবর্ণচরে বড় বড় খাল ও নদী সেচের আওতায় আনা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর সহকারী অধ্যাপক মাইন উদ্দিন ফিরোজ বলেন, রবিশস্য অধ্যুষিত এলাকায় বোরো ধান চাষ না করার বিষয়ে কৃষি আইন আছে। অথচ স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ আইন মানছে না। কৃষি কাজ, ইটভাটাসহ নানা কাজে  ভূগর্ভের পানি ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি সংস্থার দায়িত্বহীনতা ও অবহেলায় এখন পানির কষ্টে ভুগছে সুবর্ণচরের মানুষ।
 
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সুবর্ণচরের চাষাবাদের জন্য ২৪৫টি গভীর নলকূপের (সেচপাম্প) অনুমোদন দিয়েছে। এর বাইরে তিন হাজারেরও বেশি অনুমদোনহীন সেচপাম্প আছে। গ্রামে গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় কমছে৷ ফলে গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে জল উঠছে না। তিনি বলেন, পানির ফুরিয়ে আসায় বিপদও বাড়ছে। পানি ও শস্য দুইই বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। মাটির নীচে পানি কমে গেলে আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু উপরে উঠে আসবে। এতে পানি শুধু দূষিত হবে না, জমির শস্যও বিষাক্ত হয়ে উঠবে। 

বিকল্প পদ্ধতিতে চাষের ওপর জোর দিয়ে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তরিক উল্লাহ বলেন, চাষবাসে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির ব্যবহার অর্ধেক করে ফেলা সম্ভব। চিরাচরিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। নইলে পানির অপচয় রোধ করা যাবে না। 

সাংবাদিক কামাল উদ্দিন বলেন, পানির সংকট আগামী দিনে মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। পদযাত্রায় সহমত পোষণ করে যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ পা মিলিয়েছেন, তাতে আশা করি পানির অপচয় রোধ এবং সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন নাজির হাট কলেজের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, সমাজকর্মী তালহা মুহাম্মদ সিফাত উল্লাহ, গবেষক মিজানুর রাকিব, সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, মোহাম্মদ হারুন, ছাত্র সংগঠক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদয ত র পদয ত র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল

ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। 

ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।

গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। 

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। 

ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়। 

সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের  মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল
  • এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল