Samakal:
2025-05-01@05:46:52 GMT

পরিবারটির কেউ বেঁচে রইল না

Published: 5th, April 2025 GMT

পরিবারটির কেউ বেঁচে রইল না

এক সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার। মা-বাবা ও দুই বোনের পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রফিকুল ইসলাম শামীম, তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানার (৮)।

তবে সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান পরিবারের একমাত্র সদস্য প্রেমা। তার পর থেকেই তিনি ছিলেন সংজ্ঞাহীন। তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর আর ঘুম ভাঙেনি। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

গত বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রেমা (১৮) বেঁচে গেলেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁর মস্তিষ্ক। তার পরও জ্ঞান ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা। প্রথমে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই প্রথম রোগী হিসেবে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও ফেরেনি জ্ঞান; মেলেনি কোনো সাড়াও। চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না-ফেরার দেশেই চলে যান তিনি। মা-বাবা ও দুই বোনের পর তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইল না। এ নিয়ে লোহাগাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। 

পরিবারের সবার মৃত্যুর কারণে হাসপাতালে প্রেমাকে ভর্তির পর থেকেই পাশে ছিলেন তাঁর ছোট মামি জেসমিন রহমান। গতকাল প্রেমার মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকেই তাঁর বিলাপ ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেসমিন বলেন, আল্লাহ পরিবারের শেষ অবলম্বনটুকুও রাখল না। কী অপরাধ ছিল তাদের? 

চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.

হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রেমাকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টাই করেছি আমরা। দুর্ঘটনায় তাঁর মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে ঘটনার পর থেকেই তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। 

হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল বলেন, হাসপাতালে আনার পর থেকেই তাঁর মস্তিষ্কের মাত্রার অবস্থা ছিল খুব খারাপ। প্রাণে বাঁচলেও বাসের ধাক্কায় তাঁর মাথা গুরুতরভাবে আঘাতগ্রস্ত। 

প্রেমার স্বজন জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পরিবারের সদস্যরা নানা পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেন। অবশেষে ছুটিতে রফিকুল ও লুৎফুন দম্পতি তাদের তিন মেয়ে এবং রফিকুলের সহকর্মী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিলীপ বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডল ও ছয় বছরের শিশুসন্তান আরাধ্যা বিশ্বাসসহ পর্যটননগরী কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে গত বুধবার সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আটজনের। 

রফিকুল ইসলাম ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাদের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা এলাকায়। ভাতিজা পারভেজ ফকির বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসার কথা বলে আসছিলেন। এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার কথা বড় ভাইকে জানিয়েছিলেন। পরে বাড়িতে যাওয়া বাতিল করে অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাতে চাচা মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে কথাও বলেন। কে জানত এই কথা শেষ কথা হবে! সেখান থেকে আর বাড়িতে ফিরতে পারলেন না তিনি। 

ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো শিশু আরাধ্যাকে

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এ কারণে গতকাল দুপুরের দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবারের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তার বাবা ও মা। দুর্ঘটনায় আরাধ্যার দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আঘাত পেয়েছে মাথা, হাত, বুকসহ বিভিন্ন অংশে। রক্ত জমাট বেঁধেছে শরীরের নানা অঙ্গে। 

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় আরাধ্যার সঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালে থাকা আত্মীয় অসিত কুমার বাড়ৈ মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, আরাধ্যাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তির পর থেকে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর থ ক ই ত দ র ঘটন য় পর ব র র আর ধ য ন র পর ত র পর অবস থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ