নোয়াখালীতে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থামান
Published: 5th, April 2025 GMT
পুলিশি তৎপরতা আগের তুলনায় বাড়লেও এখনো চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য শহরেও এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা অচল থাকায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে নোয়াখালীতে। সেখানকার পৌর শহরের বেশির ভাগ ক্যামেরাই অচল থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পৌর বাসিন্দারা দ্রুত এ পরিস্থিতির উত্তরণ চান।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে প্রথম আলো জানাচ্ছে, পৌর শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ২০২২ সালে জেলা পুলিশের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলের নেতা, শহরের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সহায়তায় প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। এসব ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণকক্ষ ছিল সুধারাম মডেল থানায়। একজন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় নজর রাখতেন। এতে শহরে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা অনেকটাই কমে আসে।
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া নানা কারণে অকেজো হয়ে পড়ে বেশ কিছু ক্যামেরা। ভেঙে ফেলা কিংবা অকেজো হয়ে পড়া ক্যামেরাগুলো আর সচল করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো নষ্ট হয়ে পড়ায় আবারও অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের মোহাম্মদীয়া মোড়, সুধারাম থানার সামনে, হাসপাতাল সড়ক, মাইজদী বাজার, নতুন বাসস্ট্যান্ড, টাউন
হল মোড়, জেলা জামে মসজিদ মোড়, পৌর বাজার, বিশ্বনাথ ও মফিজ প্লাজা, স্টেডিয়াম পাড়া, নাপিতের পোলসহ বিভিন্ন এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর বেশির ভাগই ভাঙা কিংবা সংযোগবিচ্ছিন্ন। এসব ক্যামেরা এখন আর তেমন কোনো কাজেই আসছে না।
পৌর বাসিন্দারা বলছেন, কেবল চুরি, ছিনতাই নয়; নারী ও স্কুলগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনাও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কারণে কমে এসেছিল। এখন আবার নতুন করে শহরে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ঘটনা ঘটছে। সিসিটিভি ক্যামেরার কারণে অপরাধীরা আগে আতঙ্কের মধ্যে থাকত। এখন ক্যামেরা নষ্ট হওয়ায় সেই ভয় তাদের আর নেই। আবার এসব ক্যামেরা সচল করতে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অচল সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, অচল ক্যামেরা সচল করে আগের মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির ব্যবস্থা করা হবে।
আমরা আশা করব, দ্রুত অচল ক্যামেরাগুলো সচল করা হবে। আগের মতোই বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত ছ নত ই অপর ধ শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।