তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের, তবে সামনে সংকট
Published: 6th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম দুই মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। বড় এই বাজারের আমদানি করা মোট তৈরি পোশাকের সাড়ে ৯ শতাংশ বর্তমানে বাংলাদেশের দখলে রয়েছে।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সর্বোচ্চ। তবে এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে কি না, সেটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্রেতাদের ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা ক্রয়াদেশ ও ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ থেকেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, উচ্চ শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে। আবার শুল্কের কারণে খরচ কমাতে দীর্ঘ মেয়াদে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করতে পারেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে নতুন শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে সংকট তৈরি হতে পারে।
বর্তমানে মার্কিন ক্রয়াদেশ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলোর জাহাজীকরণ পাল্টা শুল্কের কারণে পিছিয়ে কিংবা স্থগিত করে দিতে পারেন ক্রেতারা। আবার যেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করার অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোর একটা অংশও সরিয়ে নিতে পারেন তাঁরা।—মোহাম্মদ হাতেম, সভাপতি, বিকেএমইএ।যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ২ এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি চীনা পণ্যে ৩৪ (মোট শুল্ক ৫৪ শতাংশ), ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬, ভারতীয় পণ্যে ২৬, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২, হন্ডুরাসের পণ্যে ১০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯, পাকিস্তানি পণ্যে ২৯ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ১৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। মেক্সিকোর ওপর এবার পাল্টা শুল্ক আরোপ না করা হলেও গত ফেব্রুয়ারিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় ট্রাম্প প্রশাসন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে তিনটির ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ভারত ২৫ দশমিক ৭০ ও পাকিস্তান ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশি পণ্যে বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ হিস্যা নিয়ে এখন চীন শীর্ষে অবস্থান করছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৭৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। এতে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এদিকে ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর সমান হারে (৩৪ শতাংশ) শুল্ক বসিয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হলো ভিয়েতনাম। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
ভারত গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প, যা বাংলাদেশের চেয়ে কম (৩৪%)। এতে বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ ভারতে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা রপ্তানিকারকদের।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে মার্কিন ক্রয়াদেশ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলোর জাহাজীকরণ পাল্টা শুল্কের কারণে পিছিয়ে কিংবা স্থগিত করে দিতে পারেন ক্রেতারা। আবার যেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করার অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোর একটা অংশও সরিয়ে নিতে পারেন তাঁরা।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ইতিমধ্যে আগামী শীতের ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমতে পারে। কারণ, শুল্কের কারণে পোশাকের চাহিদা কমবে। আবার কম শুল্কের কারণে অন্য দেশেও ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করতে পারেন ক্রেতারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম দ ই ম স বছর র একই সময় র প রব দ ধ আমদ ন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়া ১০টি গরু আটক করেছিল বিএসএফ। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে গরুগুলো বাংলাদেশে ফেরত দেওয়া হয়। রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১টার দিকে গরুগুলো বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টার দিকে আখাউড়ার কালিকাপুর এলাকায় কাঁটাতারের কাছাকাছি ঘাস খাওয়ানোর জন্য স্থানীয়রা গরু চড়ান। এসময় কয়েকটি গরু ঘাস খেতে খেতে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে। পরে বিএসএফ সদস্যরা ১০টি গরু ধরে নিয়ে গিয়ে কাঁটাতারের কাছে বেঁধে রাখেন। স্থানীয়রা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করলে গরুগুলো ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘শূন্য রেখার কাছে গরু চড়ানোর কারণে সম্প্রতি প্রায়ই গরু ভারতের অংশে ঢুকে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। আজ কিছু গরু ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ায় বিএসএফ তা আটক করেছিল। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে গরুগুলো ফেরত আনা হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ
চার ভারতীয়সহ ১৬ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
ঢাকা/পলাশ/রাজীব