যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম দুই মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। বড় এই বাজারের আমদানি করা মোট তৈরি পোশাকের সাড়ে ৯ শতাংশ বর্তমানে বাংলাদেশের দখলে রয়েছে।

গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সর্বোচ্চ। তবে এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে কি না, সেটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ক্রেতাদের ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা ক্রয়াদেশ ও ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ থেকেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, উচ্চ শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে। আবার শুল্কের কারণে খরচ কমাতে দীর্ঘ মেয়াদে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করতে পারেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে নতুন শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে সংকট তৈরি হতে পারে।

বর্তমানে মার্কিন ক্রয়াদেশ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলোর জাহাজীকরণ পাল্টা শুল্কের কারণে পিছিয়ে কিংবা স্থগিত করে দিতে পারেন ক্রেতারা। আবার যেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করার অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোর একটা অংশও সরিয়ে নিতে পারেন তাঁরা।—মোহাম্মদ হাতেম, সভাপতি, বিকেএমইএ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলো হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া। ২ এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি চীনা পণ্যে ৩৪ (মোট শুল্ক ৫৪ শতাংশ), ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬, ভারতীয় পণ্যে ২৬, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২, হন্ডুরাসের পণ্যে ১০ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯, পাকিস্তানি পণ্যে ২৯ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ১৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। মেক্সিকোর ওপর এবার পাল্টা শুল্ক আরোপ না করা হলেও গত ফেব্রুয়ারিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় ট্রাম্প প্রশাসন।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে তিনটির ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ভারত ২৫ দশমিক ৭০ ও পাকিস্তান ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশি পণ্যে বেশি পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ হিস্যা নিয়ে এখন চীন শীর্ষে অবস্থান করছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৭৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে চীন। এতে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এদিকে ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের পর চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর সমান হারে (৩৪ শতাংশ) শুল্ক বসিয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হলো ভিয়েতনাম। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

ভারত গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প, যা বাংলাদেশের চেয়ে কম (৩৪%)। এতে বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ ভারতে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা রপ্তানিকারকদের।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে মার্কিন ক্রয়াদেশ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। যেসব ক্রয়াদেশের পণ্য উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলোর জাহাজীকরণ পাল্টা শুল্কের কারণে পিছিয়ে কিংবা স্থগিত করে দিতে পারেন ক্রেতারা। আবার যেসব ক্রয়াদেশ চূড়ান্ত করার অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোর একটা অংশও সরিয়ে নিতে পারেন তাঁরা।’

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ইতিমধ্যে আগামী শীতের ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমতে পারে। কারণ, শুল্কের কারণে পোশাকের চাহিদা কমবে। আবার কম শুল্কের কারণে অন্য দেশেও ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করতে পারেন ক্রেতারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম দ ই ম স বছর র একই সময় র প রব দ ধ আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

রাবিপ্রবিতে ‘ফ্রম ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ বিষয়ক সেমিনার

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) ক্যারিয়ার গঠনে ‘ফ্রম ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ এর সভা কক্ষে ম্যানেজমেন্ট বিজনেস সোসাইটির (এমবিএস) আয়োজনে এবং খাগড়াছড়ির অ্যাডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি: ইউপিডিএফ

রাঙামাটিতে পিসিসিপির ডাকা হরতাল প্রত্যাহার

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, “যেকোনো ক্যারিয়ারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গকে- অন্তর্ভুক্তি, স্বাধীনতা এবং প্রাধিকার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যে চাকরিতে এই তিনটি জিনিস থাকবে, সেসব চাকরি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ হবে।”

শিক্ষার্থীদেরকে তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্কিলে উন্নত করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “দক্ষতার ঘাটতিগুলো শনাক্ত করে সেগুলো কাটিয়ে উঠে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততা দিয়ে ক্যারিয়ারে সফল হতে হবে। এছাড়াও নিজেদের যে পেশায় আগ্রহ ও দক্ষতা আছে, তা বেছে নিতে হবে।”

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জুনাইদ কবির, প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন, ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহিম উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সূচনা আখতার প্রমুখ।

এছাড়া অ্যাডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটের সিইও আমির হোসেন রোজেলসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তারা ক্যারিয়ার গঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

ঢাকা/শংকর/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ