আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় পোস্টারের ব্যবহার না রাখার প্রস্তাবনা রেখে নির্বাচনি আচরণবিধির একটি খসড়া তৈরি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনে অনুমোদনের পর তা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো.

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, আচরণ বিধিমালার খসড়া করার জন্য বসেছিলাম। প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। চূড়ান্ত করে খুব শিগগিরই কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। এরপর কমিশন চূড়ান্ত করবে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আশা করি চমৎকার একটি আচরণবিধি হবে। বৈঠকে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ নির্বাচনের ছয়টি বিষয় নিয়ে গঠিত সাব কমিটির সভায় এসব নিয়ে আলোচনা হয়।

ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনি ব্যয় যথাসম্ভব কম রেখে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও মাঠ পর্যায়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনি প্রচারণার নীতিমালা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরপিও সংশোধনের প্রযোজন হলে তা করা হবে।

তিনি বলেন, ভোটের সময় শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োগে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে কাজ চলছে।

খসড়া আচরণবিধিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় পোস্টার থাকছে না বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব এরকমই। এ প্রস্তাবকে ভালোই মনে করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টিও আছে। গুজব যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেগুলো নিয়ে ভাবছি। আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতার জন্য যে টুলসগুলো আছে সেগুলোকে শক্তিশালী করবো। দুইশ, পাঁচশ টাকা জরিমানার বিষয়গুলো আরও বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানান তিনি।

ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, দল নিবন্ধনের যে গণবিজ্ঞপ্তি এতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছে। এটা শুধু তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া ইতিমধ্যে দুই একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি দল আবেদন করার জন্য প্রস্তুত। বর্তমান আইন অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনে করণিক ভুলটি সংশোধনের জন্য করা প্রস্তাবটা মন্ত্রীপরিষদের পাঠানো হয়েছে। এখনও কেবিনেট থেকে তার অনুমোদন পাওয়া যায়নি। না পেলে বিদ্যমান আইনেই সীমানা নির্ধারণ হবে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের তো এমন প্ল্যান আছে কবে কি করব। আমরা মিটিং করছি এটাও প্ল্যানিংয়ের অংশ।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের ঈদযাত্রায় প্রাণহানি গত ঈদের চেয়ে বেশি: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। বিগত ঈদুল আজহার সাথে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আহত ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।

সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এতথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।”

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি, অপহরণ ৩

রামুতে বাস-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৩

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব  দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।

সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বাস, ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০ দশমিক ৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ দশমিক ০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, দশমিক ৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও দশমিক ৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

ঢাকা/এম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ