বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আবারও মাইন বিস্ফোরণে একজন পা হারিয়েছেন
Published: 8th, April 2025 GMT
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির আশারতলী এলাকার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে একজনের পা উড়ে গেছে। তাঁকে উদ্ধার করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই নিয়ে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে সাতজন পা হারিয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে আশারতলী সীমান্তের ৪৬ ও ৪৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে মো.
কমবনিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মো. তৈয়ব দরিদ্র দিনমজুর। দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে নানা কাজ করেন তিনি। শূন্যরেখা থেকে ৩০০–৩৫০ মিটার মিয়ানমারের ভূখণ্ডের ভেতরে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আশারতলী–সংলগ্ন চাকঢালা চেরারমাঠে প্রায় এক সপ্তাহ আগে গত ২৯ মার্চ মাইন বিস্ফোরণে আরেকজনের পা উড়ে গেছে বলে নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চাকঢালা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল আলম জানিয়েছেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, জামছড়ি ও আশারতলীতে ছয়টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন পা হারিয়েছেন। সাতজনেরই বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ উড়ে গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক জানিয়েছেন, সব কটি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা শূন্যরেখা থেকে ৩০০–৪০০ মিটার মিয়ানমারের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ঘটেছে। আজ মো. তৈয়বও ৩০০ থেকে ৪০০ মিটারের ভেতরে গিয়ে আহত হয়েছেন। মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বর্তমানে সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য তাঁরা সীমান্তের কাছাকাছি মাইন পুঁতে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নানা প্রয়োজনে সীমান্তের লোকজন শূন্যরেখা পার হলে মাইন বিস্ফোরণের শিকার হচ্ছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫