গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দিল দুর্বৃত্তরা
Published: 10th, April 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন ছাত্র আন্দোলন চত্বরে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’ অঙ্কিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংবলিত গ্রাফিতি রাতের কোনো এক সময় মুছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেও গ্রাফিতিগুলো রঙিন ছিল। রাতের কোনো এক সময় গ্রাফিতির ওপর কালো রঙের স্প্রে দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।
পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন জানান, গণহত্যার ইতিহাসকে যদি ভুলে যাওয়া হয়, তাহলে গণহত্যা বারবার হবে। তাই পাটাতন থেকে জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে গ্রাফিতি আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকেই এ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিল, বাংলা ব্লকেড এখান থেকেই করা হয়। এখানে এমন ঘৃণ্য কাজ করা কেবল গণহত্যার দোসরদের দ্বারাই সম্ভব। এ ধরনের কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে জুলাইয়ের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে একটি ‘স্মৃতি মিনার’ তৈরি করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘গ্রাফিতি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা জুলাইকে মুছতে চায়, ছাত্র আন্দোলন চত্বরকে মুছতে চায়, তারা জানে না– যা কিছু রক্ত দিয়া লেখা হয়, তা মুছা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, পাশাপাশি জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।’
কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর ভাষ্য, গণআন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ আন্দোলনে অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতিতে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য ‘পাটাতন’ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। ছাত্রদলও এমন কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যারা এগুলো মুছে দিতে চাইছে, হয়তো তারা ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসর। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, স্বৈরাচার এখনও বিদ্যমান।
কুবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, ‘পাটাতন যে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছিল, সেগুলো যারাই মুছে দিয়েছে, তারা ফ্যাসিস্টের পদলেহী বলেই আমরা মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ জানান, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দাবি এলে হয়তো প্রশাসন আমলে নেবে। গণআন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এর স্মৃতি সংরক্ষণে দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।
প্রক্টর অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে সিলেটের জাফলংয়ের পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কবজায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর রাজত্ব বদলেছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীর হাতে এখন পাথর কোয়ারির চাবি। ইজারা স্থগিত থাকলেও রাতদিন বোমা মেশিন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাথর তোলা থেমে নেই। গত ৫ আগস্টের পর ৯ মাসে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার বালু পাথর লুট হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে।
লুটের অভিযোগে একাধিক নেতাকর্মী দলের পদ পদবি হারালেও এ পথ থেকে তারা ফিরছেন না। থানায় মামলা করেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। সর্বশেষ শনিবার সরকারের দুই উপদেষ্টা জাফলংয়ে পরিদর্শনে গেলে তাদের গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের একাধিক নেতাকেই ঘটনাস্থলে দেখা যায়।
শনিবার দুপুরে জাফলংয়ের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) পরিদর্শনে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে ফেরার পথে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে একদল মানুষ পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে উপদেষ্টাদের গাড়িবহরের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন, যুবদল নেতা সুমন আহমদ ও শ্রমিক দলের দেলওয়ার হোসেনকে দেখা যায়। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদসহ আরও কয়েক নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিলেটের নান্দনিক ও নৈসর্গিক আবেদন আছে। এ রকম জায়গায় আমরা আর পাথর তোলার অনুমতি দেব না। এখানকার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করছি। পরে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার কারণে পরিবেশের ধ্বংস হচ্ছে। আপাতত পাথর তুলতে দেওয়া হবে না।
গাড়িবহরে বাধার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, হঠাৎ কিছু লোক উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে।
শুরুতে জাফলং নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত গোয়াইনঘাটের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর রফিকুল ইসলামের দলীয় পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ ৯ জুন জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবদল। বালু ও পাথর তোলার দায়ে গত ২৫ মার্চ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে দলের নাম ভাঙিয়েও অপরাধ করছে।
আজিরের নেতৃত্বে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।