গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের প্রথম বর্ষবরণের যাবতীয় আয়োজনে থাকছে অন্ধকার কাল থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার বার্তা; সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদ ও নিপীড়নের কালপর্ব শেষে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার মুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত এক বৈশাখ এবার দেখা যাবে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান আয়োজকরা।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও নববর্ষ বরণ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ভাবনার কথা তুলে ধরেন চারুকলার ডিন অধ্যাপক মো.

আজহারুল ইসলাম শেখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে বৈশাখ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

আরো পড়ুন:

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’

কিরিবাতি থেকে বাংলাদেশ, পঁচিশের বর্ণিল বরণ

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বর্ষবরণ শোভাযাত্রার নামের আগের ‘মঙ্গল’ বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। 

অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, “এবারের বর্ষবরণ ফ্যাসিবাদ ও নিপীড়নের কালপর্ব শেষে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার মুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত বৈশাখ। নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে চারুকলা অনুষদ বৃহৎ কর্মযজ্ঞ পালন করছে, যা এরইমধ্যে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।”

 “এ বছর চারুকলা অনুষদের এই আয়োজনকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। বাক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মননের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে অন্ধকার কাল থেকে উত্তীর্ণ হবার বার্তা দিতে হবে,” যোগ করেন তিনি। 

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, “এবারের নববর্ষের আয়োজন সব অন্যায্যতাকে বিনাশ করে ন্যায্য ও সত্যকে নবআলোর গতিধারায় একতাবদ্ধ করবে গোটা সমাজকে। বৈশাখে ধ্বংস এবং সৃষ্টির সুর দুই-ই গতি প্রাপ্ত হয়। নববর্ষ পালন জীর্ণ জীবনকে সৃষ্টি দ্বারা বিদীর্ণ করে বেঁচে থাকবার প্রেরণা তৈরি করে দেয়। আর সেজন্যই ফ্যাসিবাদের বিনাশ নতুন আলোর পথটাকে উন্মুক্ত করে দেবে, অন্ধকার ছায়াকে বিদায় জানাবে।”

তিনি বলেন, “বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রাকে সফল ও সার্থক করে তুলতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই আবেগ, ভারোবাসা ও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। শোভাযাত্রায় সাংবাদিক ভাই-বোনদের অংশগ্রহণ এবং আপনাদের মাধ্যমে সকল বয়সি ও শ্রেণির এই ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনকে সফল করে তুলবার আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।”

২৮ জাতিগোষ্ঠীর অংশ গ্রহণ থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় বাঙালি ছাড়াও সারা দেশের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর উপস্থিতি থাকবে। এসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছ- ম্রো, মারমা, লুসাই, বম, খিয়াং, চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, রাজোয়াড়, সাঁওতাল (দাঁসাই), মাহালী, কোল, মালপাহাড়িয়া, সাঁওতাল (ডম), মাহাতো, ওঁরাও, মনিপুরী, খাসিয়া, চা জনগোষ্ঠী, কোচ, গারো, হাজং, বানাই, তুরী, মালো, মুন্ডা, রাখাইন।

শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের প্রবেশেপথ
নববর্ষের দিন সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হবে। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু নীলক্ষেত-পলাশী ফটক দিয়ে জনসাধারণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। বাকি ফটকগুলো বন্ধ থাকবে। শোভাযাত্রার শেষ অংশ যখন শাহবাগ মোড়ে পৌঁছাবে তখন জনসাধারণ শাহবাগ অংশের প্রবেশ পথ দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

শোভাযাত্রার পথ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় প্রদক্ষিণ করে টিএসসি-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি-টিএসসি দিয়ে আবার চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হবে।

শোভাযাত্রার বিন্যাস
এবার শোভাযাত্রার সামনে কোনো পুলিশ বা সোয়াত সদস্য থাকবেন না। তার পরিবর্তে পুলিশ সদস্যরা শোভাযাত্রার দুই পাশে থাকবে। পুলিশের ৮ ঘোড়ার পর শোভাযাত্রায় পর্যায়ক্রমে ২৮টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৪৬৪ জন সদস্যবৃন্দ, চারুকলা অনুষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বান্দরবানের কিশোর ব্যান্ডদল, বামবা ব্যান্ডসংগীত শিল্পীর দল, বাউল সাধু, কৃষকদল ও মূলধারা শিল্পীগোষ্ঠী, সাধনা নৃত্য সংগঠন, রংধনু পোশাকশ্রমিক শিল্পী সংগঠন, নারী ফুটবলার, অ্যাক্রোবেটিক শিল্পী, রিকশা র‍্যালি, ঘোড়ার গাড়ির বহর এবং সব শেষে সাধারণ মানুষ থাকবে।

শোভাযাত্রার অনুষঙ্গ 
বড় মোটিফ: ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শহীদ মুগ্ধর পানির বোতল, শান্তির পায়রা,পালকি, তরমুজের ফালি।

মাঝারি মোটিফ: সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ ১০টি, রঙিন চরকি ২০টি, তালপাতার সেপাই ৮টি, তুহিন পাখি ৫টি, পাখা ৮টি, ঘোড়া ২০টি, লাঙল ৫টি, ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস।

ছোট মোটিফ: ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ৮০টি, মাছের ডোলা ৫টি, বাঘের মাথা ২০০টি, পলো ১০টি, মাছের চাই ৬টি, মাথাল ২০টি, লাঙল ৫টি।

টিএসসি ও শাহবাগ মেট্রো স্টেশন সাময়িক বন্ধ থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, নববর্ষের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিএসসি ও শাহবাগ মেট্রো স্টেশন সাময়িক বন্ধ থাকবে।

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী প্রথম নববর্ষ এটি, যার কারণে স্বাভাবিকভাবে এবারের নববর্ষ ঘিরে জনসাধারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এবারের বর্ষবরণের  উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ, শোভাযাত্রাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক এ এম কাওসার হাসান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পয়ল ব শ খ শ হব গ ম র চ র কল নববর ষ সদস য ট এসস গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

রাজবাড়ীর পাংশায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর মা ও বাবা গতকাল পৃথকভাবে বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পাংশা থানায় দুটি মামলা করেন। এতে হাসমত আলী (২২) ও শিহাব মণ্ডল (২০) নামের দুই তরুণকে আসামি করা হয়। তাঁদের বাড়ি উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে। মামলা করার পর পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে শিহাবকে গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের একজনের বয়স ১৪ বছর এবং অপরজনের বয়স ১৫ বছর।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষে দুই বান্ধবী একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। পথে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে তাদের পথ রোধ করে হাসমত ও শিহাব। ধারালো ব্লেড বের করে স্কুলছাত্রী দুজনকে জিম্মি করে রাস্তার অদূরে একটি পানের বরজে জোর করে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে পৃথক স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন ওই দুই তরুণ। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যান তাঁরা।

গতকাল রাতে পাংশা মডেল থানায় মামলা করতে আসা ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রীর পরিবার জানায়, হাসমত ও শিহাব ওই দুই স্কুলছাত্রীকে মাঝেমধ্যে উত্ত্যক্ত করতেন। এ ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের মা এবং অপরজনের বাবা বাদী হয়ে রোববার রাতে হাসমত আলী ও শিহাব মণ্ডলকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। রাতেই আসামি শিহাব মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি হাসমতকে গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

ওসি সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, গ্রেপ্তার শিহাব পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁর পোশাকেও ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাঁকে সোমবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হবে। দুই স্কুলছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ