সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে জনসমাগম ঢাবিতে
Published: 12th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর নৃসংসহ গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় এ গণজামায়াতে শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই জমায়েত হতে শুরু করেন দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু করে ঢাবি এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ছোট-বড় অসংখ্য মিছিল শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, মেডিকেল ও নীলক্ষেত মোড় দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করছে। প্রায় প্রত্যেকের হাতে রয়েছে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা। অধিকাংশ মানুষ কপালে ফিলিস্তিন বা কালিমার পতাকা বেঁধেছেন। সবার লক্ষ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। একটু পরপর মানুষ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছেন।
আরো পড়ুন:
ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগকারীর মুখে কালো মাস্ক ছিল
ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিতে আগুন
হুমকি পেয়েও নিরাপত্তা জোরদার করেনি ঢাবি প্রশাসন
রাজু ভাস্কর্য এলাকা সকাল ১০টা থেকেই জনসাধারণের পদচারণা ও স্লোগানে মুখরিত রয়েছে। জনসাধারণ রাজু ভাস্কর্য ম্যুরালের উপরে উঠে ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা উড়াচ্ছেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
গাজায় চলমান বর্বরোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এ গণজমায়েত। বিকেল ৩টা থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি চলবে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ময়মনসিংহ থেকে আগত কয়েকজন বলেন, ফিলিস্তিনে সন্ত্রাসী ইসরাইলি বাহিনী যে বর্বরোচিত হামলা করেছে, তা নজিরবিহীন। নিয়মিত নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব মানবতা আজ নিশ্চুপ। বিশ্ব মোড়ল এবং মুসলিম বিশ্ব এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। উল্টো আমেরিকা এ হামলায় সরাসরি মদদ দিচ্ছে। আমরা হয়তো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে পারছি না। কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ সারাদেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে গোটা বিশ্বেই। এর সঙ্গে তালমিলিয়ে বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর গাজা’।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ