পহেলা বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালটা যেন শাকিল ও তাকিয়া দম্পতির জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকল। এ দিন তাদের পরিবারে জন্ম নিয়েছে দ্বিতীয় ছেলে সন্তান। নতুন বছরের প্রথম দিন উদযাপনে বিশেষ প্রস্তুতি থাকলেও পান্তা-ইলিশ বাদ দিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেই দিনটি উদযাপন করেছেন হাসপাতালের কেবিনে।

কক্সবাজার সি-সাইড হাসপাতালে ১৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় তাদের দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়। শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুম দম্পতির প্রথম সন্তানও ছেলে। শাকিল সরওয়ার কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার বাসিন্দা।

শাকিল সরওয়ার সমকালকে জানান, নববর্ষের শুরুতে তার শিশু জন্ম নেওয়ায় তিনি অনেক খুশি। ভবিষ্যতে তার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি আদর্শবান সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে চান। 

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুম দম্পতির বিয়ে হয় পারিবারিক ভাবে। তারা দু'জনই মাস্টার্স শেষ করেছেন। 

শাকিল সরওয়ার কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল মনুপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক কোম্পানির ছেলে। তাকিয়া তাবাসসুম কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিকের মেয়ে। তবে শ্বশুর - শাশুড়িকে নিয়ে শাকিল ও তাকিয়া দম্পতি বর্তমানে বসবাস করেন কক্সবাজার পৌরসভার ঝাউতলা এলাকায়।

বিয়ের প্রায় দুইবছর পর ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তবে দুই সন্তানই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে হয়েছে।

শাকিল সরওয়ার ছাত্রজীবনে তুখোড় খেলোয়াড় ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিয়ের পর থেকে তিনি পুরোপুরি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

শাকিল সরওয়ার জানান, দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণের পর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাকিয়াকে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। তাকিয়া তাবাসসুম শুরু থেকেই ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। ডাক্তারের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সন্তান জন্ম নিয়েছে। 

শাকিল সরওয়ার আরও জানান, ১৪ এপ্রিল ভোরে তাকিয়ার হঠাৎ ব্যথা শুরু হলে কক্সবাজার শহরের সি-সাইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিষয়টি ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামানকে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। এরমধ্যে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার। সকাল ৯টায় অপারেশন সফলভাবে শেষ হয়। এরমধ্যে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। 

পহেলা বৈশাখ সন্তানের জন্ম, তাই অন্যরকম আনন্দ লাগছে জানিয়ে শাকিল সরওয়ার বলেন, বিয়ের পর প্রতিবছর আমরা পরিবারের সবাই মিলে জাকজমকপূর্ণ ভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করে থাকি। এ বছর অন্যান্য বারের মতো পালন করতে না পারলেও নতুন বছরে আরেকটা ছেলে সন্তান পাওয়ায় অন্যরকম খুশি পরিবারের সবাই। 

ডাক্তার খোন্দকার আসাদুজ্জামান (গাইনি এন্ড অবস) বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়াটাই আসলে অনেক কঠিন কাজ। আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া যা কখনো সম্ভব নয়। তাকিয়া শারীরিক ভাবে একটু দুর্বল হওয়ায় গর্ভকালীন পুরো সময়টাতে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়েছে। সাধারণ ডেলিভারি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও প্রথম সন্তান সিজারিয়ান অপারেশনে হওয়ার কারণে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায়নি কেউ। তাই অপারেশন করতে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা- সন্তান সুস্থ থাকায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। 

তাকিয়া তাবাসসুমের বাবা মোহাম্মদ রফিক বলেন, সন্তান মা-বাবার কাছে সবসময় ছোট। সে হিসেবে তাকিয়া এভাবে সাংসারিক হবে তা আমি কখনো ভাবিনি। শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবার মতো করে সেবা করে পুরো পরিবারকে আগলে রেখে যেভাবে সংসার করছে তা এককথায় প্রশংসনীয়।   

শাকিল সরওয়ার ও তাকিয়া তাবাসসুমের উদ্ধৃতি দিয়ে মোহাম্মদ রফিক বলেন, তারা চায়, দুই ছেলে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।  

সি-সাইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মোহাম্মদ আবদুল মালেক বলেন, পহেলা বৈশাখে হাসপাতালে কোনো সন্তান প্রসব করলে তাদেরকে মিষ্টিমুখ করানোর নির্দেশনা আগে থেকেই দেওয়া ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারই প্রেক্ষিতে পহেলা বৈশাখে হাসপাতালে জন্ম নেওয়া চারটি পরিবারকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া প্রত্যেক রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া হয় বলেও জানান হাসপাতালের এমডি মীর মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ল সরওয় র ম হ ম মদ জন ম ন য় পর ব র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ: এবার কাদের বিপক্ষে, কবে খেলবে বাংলাদেশ?

আইসিসির বৈশ্বিক টেস্ট লিগ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তিনটি সফল চক্র শেষে চতুর্থ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র, ২০২৫-২৭ মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা। মঙ্গলবার (১৭ জুন) গলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্ট দিয়ে শুরু হবে চতুর্থ চক্রের খেলা।

প্রতিটি দল দুই বছরের মধ্যে ছয়টি সিরিজ খেলবে। যার তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে কমপক্ষে দুই টেস্টের। সর্বোচ্চ পাঁচটি টেস্ট থাকতে পারবে এক সিরিজে। এই সময়ে সিরিজ হবে মোট ২৭টি, যেখানে টেস্টের সংখ্যা ৭১টি। ২০২৭ সালের জুনে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দলকে নিয়ে হবে ফাইনাল। শেষ তিন আসরের মতো ইংল্যান্ডেই বসবে সাতাশের ফাইনাল। সম্ভাব্য ভেন্যু লর্ডস।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলেছিল। জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। ড্র করেছিল একটি। হেরেছিল ছয়টি। পরের চক্রে ১২ ম্যাচে মাত্র ১ জয়, ১০টাতেই হার।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান

বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দল ঘোষণা

সর্বশেষ টেস্ট চক্রে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ দেশের বাইরে, একটি দেশের মাটিতে জিতেছে। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে চারটিতে জিতেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল। এছাড়া নিউ জিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিদেশে হারিয়েছিল।

এবারের চক্রে বাংলাদেশ ১২টি ম্যাচ খেলবে। মোট ছয়টি সিরিজ। তিনটি দেশের বাইরে, তিনটি দেশের মাটিতে। দেশের বাইরে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কেননা দুটি সফরই শেষবারের দুই ফাইনালিস্টদের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে দেশের মাটিতে।    

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই টেস্টের পর বাংলাদেশকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরের ম্যাচের জন্য ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পাকিস্তান ২০২৬ সালের মার্চে বাংলাদেশ সফর করবে। ২টি টেস্ট বাদেও ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলবে। ওই বছরের অক্টোবরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথেয়তা দেবে। নভেম্বর বাংলাদেশ যাবে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

এরপর ২০২৭ সালে ইংল্যান্ড দুই টেস্টের জন্য আসবে ফেব্রুয়ারিতে। মার্চে বাংলাদেশ যাবে অস্ট্রেলিয়া সফরে। ২০০৩ সালের পর ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। আর এই সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র শেষ হবে।

নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা গত বছর (চক্রে) ৭ নম্বরে শেষ করেছি। এই বছর তো অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে যেন ৪-৫-৬ নম্বরের মধ্যে আসতে পারি। তাহলে খুব ভালো হয়।”

“গত বছর (চক্রে) জয়ের হার সম্ভবত ৪৫ শতাংশ (আসলে ৪৫ পয়েন্ট ও ৩১.২৫ শতাংশ) ছিল। এখান থেকে যদি বাড়াতে পারি—৫০-৫৫ বা ৬০ শতাংশ হলে, একজন অধিনায়ক হিসেবে আমার মনে হয়, ভালো একটা ফল হবে আমাদের।”– যোগ করেন শান্ত।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ