ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পরও বাড়েনি সরবরাহ
Published: 17th, April 2025 GMT
বেশ কয়েকদিন ধরে বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ কম। আমদানিকারক ও বাজারজাতকারীর দাবির প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়। এর পরও বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়েনি। বিশেষ করে ছোট-বড় সব বাজারেই পাঁচ লিটার তেলের বোতল সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। গতকাল বুধবার ঢাকার মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুল্কছাড় সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রতি লিটারে তাদের এ বাবদ খরচ বেড়েছে ২১ টাকা। সরকার ১৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে তাদের ৭ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তারা।
এদিকে তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি বলছে, সয়াবিন তেলের দর বাড়ানো অন্যায্য ও অযৌক্তিক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রমজান উপলক্ষে গত ডিসেম্বরে সব ধরনের পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। এই সুবিধা ছিল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুল্ক-কর ছাড়ের এসব সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ১ এপ্রিল থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় আমদানিকারকরা। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই গত মঙ্গলবার দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাতে এক লিটার বোতলের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮৯ টাকায়। আর পাঁচ লিটার বোতলের দাম পড়বে ৯২২ টাকা। এ ছাড়া লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর ফলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হবে ১৬৯ টাকা।
তবে দাম বাড়ার পরও বাজারে বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়েনি। সরেজমিন কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল নেই। কয়েকটি দোকানে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের নতুন দরের তেল দেখা গেছে। যদিও রূপচাঁদাসহ দু-একটি কোম্পানি নতুন ক্রয়াদেশ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সাধারণত বাজারে পাঁচ লিটার বোতলের তেলের চাহিদা বেশি থাকে।
বোতলের সংকট থাকলেও খোলা ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতি নেই। তুলনামূলক কম দরে মিলছে পাম অয়েল। সরকার প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করলেও কেনা যাচ্ছে ১৬৫ বা এর চেয়ে কিছুটা কম দরে।
কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো.
তবে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারে ৪ টাকা কমে পাম অয়েল বিক্রি করছেন বলে জানান একই বাজারের আব্দুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাঈম। তিনি বলেন, খোলা পাম ও সয়াবিনের সংকট নেই। ক্রেতারা পাঁচ লিটার বোতলের বেশি খোঁজ করেন। তবে সেগুলোর সরবরাহ বাড়াচ্ছে না কোম্পানিগুলো।
তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ক্যাব। সংগঠনটি বলছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অযৌক্তিক। এ কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। সাধারণ ভোক্তারা আর্থিক চাপে পড়েছেন। ক্যাব মনে করে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল থাকার পরও দেশে এভাবে দাম বাড়ানো ভোক্তাবিরোধী ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়।
এদিকে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণের এক দিনের মাথায় এ পণ্যের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করেছে এনবিআর। একই সঙ্গে অপরিশোধিত পাম অয়েলের ক্ষেত্রেও এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এক বিশেষ আদেশে আগাম কর প্রত্যাহার করে আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদেশটি প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল।
তবে এতে তেল আমদানি ও পরিশোধনকারী মিলগুলোর লাভ-লোকসান নেই বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিলাররা বলছেন, তাদের আমদানিতে আগাম কর নেই। যারা ছোট আকারে আমদানি করে অন্য মিলে পরিশোধন করতে চান তাদের জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম সমকালকে বলেন, শুল্কছাড়ের সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় লিটারে ২১ টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু সরকার ১৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ৭ টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
তিনি বলেন, দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ, ব্যবসা পর্যায়ে অসহযোগিতাসহ নানা কারণে বাজার থেকে তেল পরিশোধনকারী ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের এখন যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তাতে কেউ এককভাবে তেল ব্যবসা করতে পারবেন না, যদি পাশাপাশি তার অন্য ব্যবসা না থাকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল ল র সরবর হ ব ড় ত ল র সরবর হ ভ জ যত ল র পর শ ধ ত ব যবস য় ব তলজ ত পর য য় ১৪ ট ক র পরও সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।