দাদা জাপটে ধরে রাখেন, বিষ প্রয়োগ করেন চাচা
Published: 18th, April 2025 GMT
নওগাঁর আত্রাইয়ে বিষ প্রয়োগ করে সানজিদা (১৬) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে। শুক্রবার নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। জমি নিয়ে কলহের জেরে সিরিঞ্জের মাধ্যমে কিশোরীর শরীরে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করেছেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত কিশোরীর মামা ফজলুর রহমান। এতে বলা হয়, ৯ এপ্রিল সকালে সানজিদা প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরে। সাংসারিক কাজে মা বাইরে ছিলেন। এ সুযোগে দাদা ও চাচা তার ঘরে যান। দাদা মোসলেম মণ্ডল তার পাশে বসে জাপটে ধরেন। চাচা সাজিম মণ্ডল পকেট থেকে ইনজেকশন বের করে তার বাঁ হাতের শিরায় প্রয়োগ করেন। এ কথা কাউকে বললে বাবা ও ভাইকেও হত্যার হুমকি দেন।
মা খুশি বেগম বাড়িতে ফিরে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে প্রতিবেশীর সহযোগিতায় নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে সানজিদাকে হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা।
স্বজনদের ভাষ্য, মৃত্যর আগে তার শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে দাদা ও চাচা বিষ প্রয়োগ করেছেন বলে জানিয়ে গেছে সানজিদা। তার বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করা আছে। এ ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সানজিদার মা খুশি বেগম, নানা মোসলেম প্রামাণিক, চাচা সাইফুল ইসলাম ও মামা হামিদুল প্রামাণিক উপস্থিত ছিলেন। নিহত কিশোরী উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী শামসুল মণ্ডলের মেয়ে। সে ঘোষগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করছেন।
শামসুলের স্ত্রী খুশি বেগম মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকতেন জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, বাড়ির উত্তরে বাবা মোসলেম মণ্ডলের কাছ থেকে জমি কিনে চার বছর আগে তৈরি মাটির বাড়িতে তারা থাকতেন। সেখানে পাকা বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে শামসুলের বাবা মোসলেম ও ভাই সাজিম মণ্ডল বাধা দেন। তারা দক্ষিণে নিচু জায়গায় বাড়ি করতে বলেন। এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
বাবা ও ভাই বিদেশে থাকায় বাড়ি করা নিয়ে বিরোধের জেরে সানজিদা ও তার মায়ের সঙ্গে দাদা ও চাচার কলহ লেগে থাকত বলে অভিযোগ করেন ফজলুর রহমান। এর জেরে মোসলেম ও সাজিম গত ৯ এপ্রিল হত্যার উদ্দেশ্যে সানজিদার শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঘটনার পর থেকে মোসলেম ও সাজিম মণ্ডল পলাতক রয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাজিম মণ্ডলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে গিয়েও দু’জনকে পাওয়া যায়নি।
আত্রাই থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!
দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ।
এদিকে, চিকিৎসক সঙ্কটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তাদের।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকসহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল।
বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে ভরা থাকে হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬টি পদের মধ্যে ২৭টি পদই শূন্য। বাকি ৯ জনের মধ্যে দুজন ঢাকায় সংযুক্তিতে, দুজন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ও একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
বর্তমানে মাত্র চার জন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এছাড়া দুজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন গাইনি ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনি বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা।
সীমবদ্ধার মধ্যে এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করেই চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চার চিকিৎসকই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা।
কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারণে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না।”
শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) নানি হোসনেয়ারা বলেন, “এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীর কীভাবে সেবা দিবেন? নার্সরা তো সব বোঝে না। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ওষুধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান চাই।”
কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আসলে এভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।”
অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, “আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা না। তারপরও সঙ্কটের কারণে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সঙ্কটে আসলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটের ব্যাপারে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- এমনকি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।”
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “শুধু কলাপাড়া নয়, পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস