খামারবাড়িতে কৃষি ডিপ্লোমা ও শেরেবাংলার শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপ মুখোমুখি
Published: 21st, April 2025 GMT
এগ্রি ব্লকেড কর্মসূচির নামে কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থী রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মূল ফটক বন্ধ করে দিয়েছেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে ডিএই'র কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেননি। সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থার পর দুপুর দেড়টার দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খামারবাড়ির সামনে জড়ো হন। এ সময় ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা খামার বাড়ির ভেতরে স্লোগান দিচ্ছে আর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খামারবাড়ির গেটের বাইরে স্লোগান দিচ্ছেন। এতে যে কোনো সময় সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলছেন, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে খামারবাড়ি অচল করছে।
খামারবাড়ির সামনে কথা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো.
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে খামারবাড়ির সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য দেখা গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ আট দফা দাবিতে তারা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা রায়হান উদ্দিন শামীম বলেন, আমাদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই। ডিপ্লোমা পাশ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হয়। আমাদের এই দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূরণ করার কথা। কিন্তু তারা টালবাহানা করছে।
কৃষিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য বাংলাদেশে সরকারি ১৮টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ ২৬০টি বেসরকারি কৃষি কলেজ রয়েছে, যেখানে কৃষিতে ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়ন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী আছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে গেজেট করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং প্রতিবছর নিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে।
বাকি দাবিগুলো হলো— কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীন থেকে বের করে সম্পূর্ণভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আলাদা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। সব কৃষি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদটি শুধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দশম গ্রেডের পে-স্কেলে বেতন দিতে হবে। কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের মাঠ সংযুক্তি ভাতা প্রদান করতে হবে এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের চাকরিতে প্রবেশের পর ছয় মাসের ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দাবি পূরণ করা হয়েছে। কিছু দাবি অন্য মন্ত্রণালয়কে দেখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার পরও এ আন্দোলন অযৌক্তিক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ম রব ড় ম খ ম খ অবস থ ন কর মকর ত খ ম রব ড র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।