জুলাই আন্দোলনকে ‘তথাকথিত’ বলায় ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির দুঃখপ্রকাশ
Published: 22nd, April 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত আন্দোলন’ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতির ‘র’ও বোঝেনা বলায় সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দুঃখপ্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শাখা ছাত্রদল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছিলেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ১১টার দিকে নিজের ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে বক্তব্যের দুটি অংশ অসাবধানতাবশত বলেছেন দাবি করে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
‘আল্লামা ইকবাল ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক সূত্রে গাঁথা’
‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ইসলামবিরোধী’
গণেশ চন্দ্র রায় তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে আমার দেওয়া বক্তৃতার দুইটি অংশ নিয়ে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা লক্ষ্য করছি। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির অনেক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়নি। কেননা ফ্যাসিবাদের আমলে সে পরিবেশ ছিল না। কিন্তু অসাবধানতাবশত বলে ফেলেছি সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাজনীতির ‘র’ নিয়েও মাথা ঘামায় না। আমি আমার বক্তব্যে অসাবধানতাবশত এ বাক্যটি বলেছি।”
তিনি বলেন, “আমি এ বাক্য দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তুলিনি। আমি আমার পুরো রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরকম মনোভাব কখনো কোথাও পোষণ করিনি। বরং আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট ধারণ করি এবং আজীবন তা ধারণ করার জন্য বদ্ধপরিকর।”
তিনি আরও বলেন, “আমার এই কথায় কেউ মনোক্ষুণ্ন হয়ে থাকলে, তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।”
একইসঙ্গে বক্তব্যের আরেকটি অংশে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন নিয়ে ‘তথাকথিত’ শব্দটি ব্যবহার করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমার আরও বেশি সচেতন হতে হবে। আমার অনাকাঙ্ক্ষিত এ কথাটি সেই আবেগের জায়গায় যদি আঘাত দিয়ে থাকে, আমি সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমি আশা রাখবো আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আরো অধিক পরিমাণে রাজনীতি সচেতন হব। গঠনমূলক সমালোচনা ও তার যুক্তিযুক্ত জবাবের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুস্থ চর্চাকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
এদিকে, জুলাই-আগস্টের গৌরবময় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত আন্দোলন’ বলায় গণেশের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী শুরু হয় সমালোচনা। এ ব্যক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, জাতীয় ঐক্য বিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান বলেন, জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসর ব্যতীত বাংলাদেশের সব মত ও পথের মানুষকে একত্রিত করেছিল। পিলখানা থেকে শাপলার গণহত্যা, জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিচারিক হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অবিচারের ভয়াবহ সংস্কৃতি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি এদেশে কায়েম করেছিল। তার বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষ তার অধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে।
তারা আরো বলেন, ছাত্রদলের এমন বক্তব্য শহীদদের রক্তকে অপমান, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারী গাজীদের সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে খাটো করে দেখার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ ও ছাত্রসমাজের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও গণমুখী সংগ্রামকে আওয়ামী বাকশালীদের মতো অপমানসূচক শব্দ ব্যবহার করে হেয় প্রতিপন্ন করার ধৃষ্টতা দেখানো অন্যায্য ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। ছাত্রদলের কাছ থেকে আমরা আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র জন ত র ছ ত রদল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে জুম্মাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁর অনুসারীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নন্দনপুর বাজারে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে নন্দনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন ওরফে মিমকে বিদ্যালয়ে যেতে না দেওয়ার অভিযোগে গত বুধবার পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে জেলা বিএনপি।
বুধবার দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের পরও সেদিন বিকেলেই আয়োরুল ইসলাম পুঠিয়ার জিউপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত এক কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নেন।
‘পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সর্বস্তরের জনসাধারণ’–এর ব্যানারে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের দোসর নন্দনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে দলীয় কার্যালয় বানিয়েছিলেন। শিক্ষার পরিবর্তে সেখানে প্রতিদিন চলত আওয়ামী লীগের মিছিল–সভা, আর বিএনপি নিধনের পরিকল্পনা।
বক্তারা দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর স্থানীয় লোকজন মনোয়ার হোসেনকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এরই জের ধরে বিএনপির ত্যাগী নেতা আনোয়ারুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অবিলম্বে অবৈধ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান বক্তারা। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ার করেন।
এ বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।’