কাশ্মীরের বৈসরন উপত্যকায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মাঝেও নজির গড়লেন দুই কাশ্মীরি বোন—রুবিনা ও মুমতাজ। মঙ্গলবারের ভয়াবহ জঙ্গিহামলার সময়ে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু পর্যটককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। তাদের সাহস মানবিকতার এই অনন্য উদাহরণ ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে।

বৈসরন উপত্যকার পাশেই থাকে দুই বোন। পেশায় পর্যটক গাইড রুবিনা ও মুমতাজ প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে ঘোরান, দেখান কাশ্মীরের সৌন্দর্য। রুবিনার একটি পরিচিত নামও রয়েছে—‘কাশ্মীরের খরগোশ কন্যা’, কারণ সে পর্যটকদের হাতে নিজের পোষা খরগোশ তুলে দিয়ে ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়।

হামলার দিন অন্যান্য দিনের মতোই, রুবিনা ও মুমতাজ চেন্নাই থেকে আগত একদল পর্যটকের গাইড হিসেবে ইকো পার্ক এলাকায় ছিলেন। দুপুরের দিকে আচমকা জঙ্গিরা হামলা চালালে আশেপাশের পরিবেশে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পর্যটকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। খবর- আনন্দবাজার 

যখন জঙ্গিরা আচমকা হামলা চালায়, তখন একাধিক পর্যটক, যার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাও ছিলেন, আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ হাঁটতে পারছিলেন না, কেউ কাঁদছিলেন। সেই সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন রুবিনা ও মুমতাজ—প্রত্যেককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। 

তারা প্রথমে পর্যটকদের আশ্বস্ত করেন এরপর প্রথমে একটি দলকে পাহাড়ি রাস্তা ও জঙ্গলের মধ্য দিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান, সেখান থেকে যোগাযোগ করে স্থানীয় হোটেলে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। এরপর ফিরে এসে আরও কয়েকটি দলকে একইভাবে নিয়ে যান। সেই সময় শুধু পথ দেখানোই নয়, পর্যটকদের মানসিকভাবে শান্ত রাখার কাজটাও তারা করে গিয়েছেন একনাগাড়ে। পর্যটকদের কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, সেই নির্দেশনা দিয়ে আশার আলো দেখিয়েছেন তারা।

শিশু ও বয়স্ক পর্যটকদের যেন কোনওরকম ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেন দুই বোন। আতঙ্কিত পর্যটকদের নিজেদের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেন এবং পরবর্তীতে তাদের হোটেলে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ারও যথাযথ ব্যবস্থা করেন। শুধু শারীরিক সহায়তা নয়, আতঙ্কিত মানসিক অবস্থায় থাকা পর্যটকদের সাহস ও মানসিক শক্তি জোগাতেও তারা ভূমিকা পালন করেন।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রুবিনা বলেন, “সেই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পর্যটকদের প্রাণ রক্ষা করা। আমরা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবিনি। সবাই কাঁপছিল, শুধু বলছিল, আমাদের বাঁচাও। আমরা সেই ডাকের প্রতিধ্বনি হতে পেরেছি — এটাই আমাদের প্রাপ্তি।”

দেশ জুড়ে এই দুই বোনের সাহসিকতা ও মানবিকতা এখন প্রশংসিত হচ্ছে। সাধারণ গাইডের ভূমিকায় যারা কাজ করছিলেন, তারা এক মুহূর্তে হয়ে উঠলেন রক্ষাকর্তা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ও ম মত জ আম দ র আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের কাছে এক প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর শহরটিতে এখনো থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অবশ্য সেখানে অল্প অল্প করে পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।

গত সপ্তাহে শহরের প্রধান মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, খালি হয়ে গিয়েছিল হোটেলগুলো। এখন সেখানে আবার অল্প অল্প করে প্রাণ ফিরছে।

গত মঙ্গলবার পেহেলগাম থেকে তিন মাইল (৫ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়চূড়ার উপত্যকা বৈসারানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর গুলি চালায় একদল বন্দুকধারী। এই বৈসারানকে অনেক সময় ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়।

বৈসারানের হামলাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে এবং ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কাশ্মীরের দুই অংশ দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তরে পুরো অঞ্চলকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।

দিল্লি এ হামলার কোনো সামরিক জবাব দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে কাশ্মীরে প্রায়ই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব ঘটনায় কখনো নিরাপত্তা বাহিনী আবার কখনো বেসামরিক নাগরিকদের নিশানা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের এভাবে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা বিরল এবং তা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের হতবাক ও আতঙ্কিত করেছে।

পেহেলগামের মতো এলাকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। হামলার জেরে সেখানে বহু মানুষের জীবিকা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১৮ ঘণ্টা আগেহামলার পরদিন (২৩ এপ্রিল) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেহেলগামের বৈসারান এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে মন্দিরের দেয়াল চাপা পড়ে ৮ জনের মৃত্যু
  • কাপ্তাই হ্রদের ‘দ্বীপে’ রিসোর্ট-কটেজ, টানছে পর্যটক
  • ভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট
  • হামলার পর আশা ও আতঙ্কের মধ্যে পেহেলগামে ধীরে ধীরে ফিরছেন পর্যটকেরা
  • কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো গোলাগুলি