ডেইলি স্টার-এইচএসবিসি সম্মাননা পেলেন কৃতী শিক্ষার্থীরা
Published: 27th, April 2025 GMT
ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে ডেইলি স্টার এবং এইচএসবিসি ব্যাংক। গতকাল শনিবার পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীর রাষ্ট্রনির্মাতাদের অভিবাদন’ (স্যালুটিং দ্য নেশন বিল্ডার্স অব টুমোরো)।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ছাড়াও তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম।
এ বছর এডেক্সেল এবং কেমব্রিজ কারিকুলামের অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৩, জানুয়ারি ২০২৪, মে–জুন ২০২৪ এবং অক্টোবর–নভেম্বর ২০২৪ সেশনের মোট ২ হাজার ৩৭৫ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ও-লেভেলে ১ হাজার ৮২৪ জন এবং এ-লেভেলে ৫৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ও-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ৬৭ জন এবং দেশসেরা ৬২ জন রয়েছেন। এ ছাড়া এ-লেভেলে বিশ্ব পর্যায়ে সেরা ১৫ জন এবং দেশসেরা ৩২ জন শিক্ষার্থীকে সম্মান জানানো হয়।
সারা দেশের ১১২টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। কেমব্রিজ পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরপর দুটি ও-লেভেল সেশনে কমপক্ষে ছয়টি এ গ্রেড এবং এ-লেভেলে তিনটি এ গ্রেড অর্জনকারীরা সংবর্ধনা পেয়েছেন। এ ছাড়াও আইজিসিএসই পরীক্ষায় এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে ছয়টি বিষয়ে সাত বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারী এবং আইএএল-এ এক বা দুটি ধারাবাহিক সেশনে তিনটি এ বা তার বেশি গ্রেড অর্জনকারীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম কৃতী শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলথ অ্যান্ড প্রিমিয়ার ব্যাংকিং /তানমি হক, আইডিপি এডুকেশন বাংলাদেশ লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজিব মাহবুবুল, পিয়ারসন এডেক্সেল, বাংলাদেশ ও নেপালের আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বড় স্বপ্ন দেখো এবং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টা করো। সব সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করো আমি কি শুধু নিজের জন্যই বাঁচব, নাকি অন্যদের জন্যও? আর যদি অন্যদের জন্য বাঁচার সিদ্ধান্ত নাও, তবে সেটা যেন তোমার দেশের মানুষের জন্য হয়।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তোমরা চাইলেই উন্নত কোনো দেশে গিয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারো, কিন্তু যদি তা করো, তবে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, তা কখনো বাস্তবায়িত হবে না। জাতি গঠনে আমাদের সবারই একটা ভূমিকা আছে, এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। আর আমার প্রধান অনুরোধ হলো, তোমরা দেশের সেবা করো।’
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘তোমরা যদি সত্যিকার অর্থেই আগামীর জাতি-নির্মাতা হতে চাও, তবে প্রথমেই তোমাদের দেশকে ভালোবাসতে হবে।’
অনুষ্ঠানে শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শাহির চৌধুরী, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা রাহাত আহমেদ এবং টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক তিনটি পৃথক অনুপ্রেরণামূলক সেশনে অংশ নেন।
এই আয়োজনের টাইটেল স্পনসর এইচএসবিসি ব্যাংক। একাডেমিক পার্টনার হিসেবে পিয়ারসন এডেক্সেল এবং এডুকেশন পার্টনারের দায়িত্বে ছিল আইডিপি।
ডেইলি স্টার ১৯৯৯ সাল থেকে এই ব্যতিক্রমী বার্ষিক আয়োজনটি করে আসছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।