টটেনহ্যামকে উড়িয়ে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের শিরোপা উৎসব
Published: 28th, April 2025 GMT
অ্যানফিল্ডে শিরোপা উৎসবের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন লিভারপুলের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা। আর্নে স্লটের দলকে শিরোপা নিশ্চিত করতে দরকার ছিল মাত্র এক পয়েন্ট। তবে ম্যাচের শুরুতেই টটেনহ্যাম হটস্পারের গোলে স্তব্ধ হয়ে যায় স্টেডিয়াম। কিন্তু দ্রুতই ছন্দে ফেরে অলরেডরা। একের পর এক গোল করে উল্লাসে ভাসায় অ্যানফিল্ডকে। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই রঙিন উৎসবে মেতে ওঠে লিভারপুল। গায়ে ছিল ‘চ্যাম্পিয়নস ২০২৪-২৫’ লেখা বিশেষ জার্সি। মোহাম্মদ সালাহ ও ভার্জিল ফন ডাইকও উদযাপনে যোগ দেন।
রেকর্ড ছুঁয়ে ২০তম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পাশে বসে লিভারপুল। রোববার রাতে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ২০২৪-২৫ মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছে অলরেডরা।
ম্যাচের ১২ মিনিটে ডমিনিক সোলাঙ্কের হেডে গোল হজম করে লিভারপুল। তবে চার মিনিটের মধ্যেই লুইস দিয়াজ সমতা ফেরান। এরপর ২৪ মিনিটে অ্যালেক্স ম্যাক অ্যালিস্টার ও ৩৪ মিনিটে কোডি গ্যাকপোর গোলে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পুরো অ্যানফিল্ড তখন উৎসবের মঞ্চে রূপ নেয়।
বিরতির পর ৬৩ মিনিটে সোবোসলাইয়ের পাস থেকে গোল করেন মোহাম্মদ সালাহ। চলতি প্রিমিয়ার লিগে এটি ছিল মিশরীয় ফরোয়ার্ডের ২৮তম গোল। একই সঙ্গে ১৮৫ গোল নিয়ে সালাহ উঠে যান প্রিমিয়ার লিগের সর্বকালের গোলদাতাদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে টটেনহ্যামের উডোগির আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান আরও বাড়ায় লিভারপুল।
এতে ৩৪ ম্যাচে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে লিভারপুল। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের সংগ্রহ ৬৭ পয়েন্ট। ফলে চার ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত করে অলরেডরা।
প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়েছেন লিভারপুলের নতুন কোচ আর্নে স্লট। এর আগে হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি ও আন্তোনিও কোন্তে এই কীর্তি গড়েছিলেন।
শিরোপা নিশ্চিতের পর উচ্ছ্বসিত স্লট বলেন, ‘কিছু জেতা সবসময় বিশেষ। আর সেটা আরও বিশেষ হয়ে ওঠে, যদি আপনি প্রথম হন। আরও বিশেষ হওয়ার কারণ এমন একটি ক্লাবে এই সাফল্য পাওয়া, যাদের প্রত্যেক বছর লিগ জেতা হয়ে ওঠে না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব। পূর্ণিমার তিথিতে পুণ্যস্নান ও পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়। এরই মধ্যে সাগরতীরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এবারও রাস উৎসবে কোনো মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে না।
রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে প্রবেশে কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে বন বিভাগ। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই বন বিভাগের নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে আলোরকোলে যেতে পারবেন। অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
খুলনার কয়রা উপজেলার কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে আজ সকালে ৩০ জনের একটি পুণ্যার্থী দল রওনা হয় দুবলার চরের উদ্দেশে। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা। তিনি বলেন, ‘৩৫ হাজার টাকায় ট্রলার ভাড়া করেছি। তিন দিনের বাজার-সদাই সব সঙ্গে নিয়েছি। ট্রলারেই রান্না ও খাওয়া চলবে। সবাই আনন্দ নিয়ে যাচ্ছেন। ভালোভাবে ফিরে এলেই আমাদের সফলতা।’
কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনজিত কুমার রায় বলেন, ‘সুন্দরবনের বাটুলা নদী পেরিয়ে দুবলার চরের দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে (মুঠোফোন) নেটওয়ার্ক থাকবে না। তবে সবাই খুব আনন্দে আছে। পূর্ণিমায় জোয়ারের নোনাজলে স্নান করলে পাপমোচন হয় এই বিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছি।’
কয়রার গুড়িয়াবাড়ী গ্রামের সুব্রত কুমার মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। মাঝারি আকারের ট্রলার ভাড়া করেছেন তিন দিনের জন্য। বাজার-সদাই সব করে সকালে রওনা দিয়েছেন ২০ জন পুণ্যার্থী নিয়ে।
রাস উৎসব উদ্যাপন কমিটি ও দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিথি অনুযায়ী আজ থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির তৈরি করা হয়েছে। ৫ নভেম্বর ভোরে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবেন। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এ বছর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই অংশ নিতে পারবেন। পর্যটকদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুণ্যার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পাঁচটি নির্ধারিত রুটে টহল দল মোতায়েন আছে। সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও নৌযান থামানো যাবে না। এ বছরও রাস উৎসব উপলক্ষে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে জানান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী সাধু হরিভজন প্রথম দুবলার আলোরকোলে রাস পূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই ধর্মীয় পূজাই লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ রয়েছে।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, অতীতে কিছু পুণ্যার্থী বা জেলের ছদ্মবেশে হরিণশিকারিরা বনে ঢোকার সুযোগ নিতেন, তাই এবার উৎসব চলাকালীন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলে, পর্যটক ও সাধারণ মানুষের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে সুন্দরবনের গহিনে ট্রলারে বন বিভাগের পতাকা লাগিয়ে হরিণ শিকারের চেষ্টা করার সময় সাতজনকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা। তাঁদের কাছ থেকে ১০০টি ফাঁদ, ২টি ট্রলার, ১টি বন বিভাগের পতাকা ও ৪টি মাংস রান্নার পাতিল জব্দ করা হয়েছে।