জনমানুষের ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে পারব: আলী রীয়াজ
Published: 28th, April 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন, মতামত বা সুপারিশমালায় যথেষ্ট নয়; রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক শক্তিসহ জনমানুষের ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে পারব।’
সোমবার সংসদ ভবনস্থ এল. ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড.
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে, সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে৷ শুধুমাত্র কাগজে আমরা কী লিখছি তা নয়, জনগণের প্রতি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে৷ তিনি আরো বলেন, ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। যার মাধ্যমে ক্ষমতার বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং বাংলাদেশ তার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে।’
আলোচনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু এর নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ছাড়াও আরো আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, অ্যাডভোকেট খালিদ হোসেন, সাকিব হোসাইন, শাকিল উজ্জামান, ফাতেমা তুজ জোহরা রেসা এবং মুনতাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। গণঅধিকার পরিষদসহ এ পর্যন্ত ২০টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হতে আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল র য় জ
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই ধাপের ২৩তম দিনের মতো আলোচনা হয়। এর মধ্য দিয়ে মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আগেই যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হয়েছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে এই ধাপের আলোচনার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। এই ১৯টি বিষয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) রয়েছে।
এই ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, বিশেষত উচ্চকক্ষ গঠন, সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের আলোচনায় অর্থবিল ও আস্থা ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে বিএনপি উচ্চ আদালতের সঙ্গে আলোচনা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রশ্নে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংযোজন না করে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট, এনডিএম, আম জনতার দল ও বিএনপি।
সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দল ও জোট একমত হলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং আম জনতার দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতির বিষয়ে সব দল একমত হলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভিন্নমত পোষণ করেছে।
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ ও জেএসডি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা থেকে ওয়াকআউট করেন।
সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এসেছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বেশির ভাগ দল জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ধাপে ধাপে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে একমত হলেও কিছু দল সরাসরি নির্বাচন এবং কিছু দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা শেষ করার লক্ষ্য ছিল, আমরা তা সফলভাবে করতে পেরেছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব।’
আলোচনার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে এবং কমিশনকে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনার অনুরোধ জানিয়েছে দলগুলো। কমিশন মনে করে, বাস্তবায়নের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ প্রয়োজন।