মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়া ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে: আসিফ নজরুল
Published: 28th, April 2025 GMT
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই গেজেট প্রকাশ করেছে।
সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা ড.
তিনি আরও বলেন, ইশরাক হোসেনের গেজেট নোটিফিকেশন হবে কিনা, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। নির্বাচন কমিশনতো আসলে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, আমাদের মতামত জানার প্রয়োজন ছিল না। এজন্য তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরই নেওয়ার কথা। আমাদের কাছে যখন মতামত নিতে পাঠিয়েছিলেন তখন আমরা সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এতে আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচনী যে প্লেইন্ড আছে সেটা নাকি পরিবর্তন করা যায় না। কারণ সেখানে নাকি হাইকোর্টের রায় রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ইশরাক সাহেব নাকি পরবর্তী সময়ে প্লেইন্ড পরিবর্তন করেছিলেন। সেজন্য আমরা দ্বিধান্বিত ছিলাম এটা কি গেজেট নোটিফিকেশন হবে নাকি আপিল করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেনি। ওনারা নিজেরা গেজেট নোটিফিকেশন করেছেন। এখানে আমার বলার কিছু নাই।
এ সময় ন্যাটব্যক্তিত্ব ইরেশ যাকেরে বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, এ মামলাগুলো বাণিজ্যিক বা বিদ্বেষমূলক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের আইনে কোথাও মামলা করার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয় নাই। যে যার মতো করে মামলা করতে পারে। এখানে অনেক হয়রানিমূলক, বিদ্বেষমূলক মামলা হচ্ছে। অন্যের জায়গা জমি দখল, ব্যবসা দখলের জন্য মামলা হচ্ছে। এগুলো অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। মামলা হওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা করছি। এখন এতো মামলা হচ্ছে, এতে আমাদের জন্য কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মামলা করতে আমরা কাউকে বাধা দিতে পারি না, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার বার বলা হচ্ছে অভিযোগের সুনির্দিষ্টতা পাওয়া না গেলে কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়। আমরাও আদলতের মাধ্যমে আইনগত প্রতিকার দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইরেশ যাকেরসহ কিছু কিছু মামলা হয়েছে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো যারা মামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে সবার সামনে উন্মোচন করেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আরো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করছি। প্রয়োজনের আইনগত পরিবর্তন আনতে হলে চেষ্টা করবো।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার অপরাধীদের এক মাসের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য একটি সংগঠনের আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, মেজর সিনহা হত্যা একটা পাশবিক হত্যা ছিল। এতে আমরা সবাই বিচার চেয়েছি। এটাও বুঝতে হবে কোনো মামলা উচ্চ আদালতে বা হাইকোর্টে থাকে তখন এটা সম্পূর্ণভাবে হাইকোর্টের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এটা কার্যতালিকায় কত নম্বরে আসবে, কবে বিচার হবে সেটা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে হাইকোর্ট ঠিক করে। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, কাউকে দোষী করার আগে ভালো করে জেনে করতে হয়। আপনাদের মতো আমিও আশা করি যাতে এটার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হয়। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।
আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। এখন আগের সরকার কি করেছে, তারা ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল তাদের কোনো নীতি ছিল না। তারা চিফ জাস্টিসকে পর্যন্ত গলা ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা সে সরকার না। উচ্চ আদালতের স্বাধীনতার ওপর আমরা অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল।
আছিয়া হত্যা মামলা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আছিয়া হত্যা মামলার বিচার কাজ গত বুধবার শুরু হয়েছে। চার্জশিট পেতে একটু দেরি হয়েছে। এটা ছাড়া বিচার কাজ শুরু হতে পারে না। আগামী বুধবার হবে ষষ্ঠ কার্যদিবস এবং আগামী রোববার হবে সপ্তম কার্যদিবস। আমি বলেছিলাম সপ্তম কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম। এটা নিম্ন আদালতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। আমার মনে হয় না খুব একটা ব্যত্যয় হবে। আমার মনে হয় আমরা খুব দ্রুত একটা রায় পাব।
এর আগে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিচারকাজে বিড়ম্বনা কমানো, সময় বাঁচানো ও অর্থ ব্যয় কমানো। এজন্য ইতোমধ্যেই আমরা বেশকিছু সংস্কারকাজ করেছি। এটা হয়তো খুব বেশি বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু যারা আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের বুঝার কথা।
আসিফ নজরুল বলেন, দেওয়ানী কার্যবিধির যুগান্তকারী বেশকিছু সংশোধন করা হয়েছে যা উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদের আগামী সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে।
আইন সচিব শেখ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন আইন উপদেষ্টা। বক্তব্য রাখেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রধান সংস্থার পরিচালক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আজাদ সুবহানী, ব্লাস্টের প্রধান নির্বাহী সারা হোসেন, সন্মাননাপ্রাপ্ত সিলেটের আইনজীবী পল্লবী রায় এবং আইন সহায়তাপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী ইব্রাহিম শাওন প্রমুখ। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা লিগ্যাল এইড রোড শো ও লিগ্যাল এইড মেলার উদ্বোধন করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট র মত মত আম দ র র জন য সরক র ইশর ক
এছাড়াও পড়ুন:
কম খরচে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়: আসিফ নজরুল
দ্রুত সময়ের মধ্যে কম খরচে মামলা নিষ্পত্তি করে মানুষকে মামলার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, তিনটি লক্ষ্য নিয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকে এ সংশোধনের কাজ শুরু হবে। আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। গরীব মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড ) কার্যালয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ-২০২৫ নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে লিগ্যাল এইডে ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়। আগামীতে এই হার ২ লাখে নিয়ে যাওয়ার আমাদের লক্ষ্য রয়েছে। এতে মামলার সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমবে। এজন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে। ছোট ছোট যেমন আপোষযোগ্য পারিবারিক মামলা, চেক ডিজঅনারসহ অন্যান্য মামলা আপসে বাধ্যতামুলক করা হবে।
তিনি বলেন, আদালতে মামলার যে অস্বাভাবিক চাপ, তা শুধুমাত্র বিচারিক কাঠামোকে নয়, ন্যায় বিচারপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এ চাপ কমাতে হলে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি পদ্ধতি আরও গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন মামলার চাপ কমানো সময়ের দাবি। এ জন্য মামলার আগে আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামুলক করা গুরুত্বপুর্ণ।
দ্রুত সময়ে অল্প খরচে মামলার নিষ্পত্তি করতে সিভিল প্রসিডিউর কোড ইতিমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি সংস্কারের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ সময় লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তিতে একজন বিচারকের জায়গায় ৩ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।
মতবিনিময় সভায় অংশীজনদের মধ্যে বক্তব্যে দেন জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থার পরিচালক আজাদ সুবহানি, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সায়েম খান প্রমুখ। এছাড়া চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা জেলার আইনজীবী সমিতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ইউএনডিপি প্রতিনিধি, জিআইজেড প্রতিনিধি, আইএলও, ব্রাক, ব্লাস্ট ও প্রশিকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, লিগ্যাল এইডের প্রচারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি আছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ গরীব ও অসহায় মানুষ জানে না সরকারের এমন একটি আইনিসহায়তা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রচারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিভাগীয় শহরে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে বলে মত দেন তারা।