সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, এখনো রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে এ বিষয়ে দেশের প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে রাখাইনে করিডোর দেওয়া নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। আমাদের অবস্থান হলো- যদি জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে চরম মানবিক সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সবসময়ই সংকটকালে অন্যান্য দেশকে সহায়তা করেছে, যেমন সম্প্রতি মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমরা যে মানবিক সাহায্য পাঠিয়েছি। আমরা এ বিষয়েও উদ্বিগ্ন যে, রাখাইনে মানবিক দুর্দশা অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশে নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নামার কারণ হতে পারে, যা আমরা আর বহন করতে পারব না।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় মানবিক ত্রাণসহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে এবং শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইনে সহায়তা পৌঁছানোর একমাত্র কার্যকর রুট হচ্ছে বাংলাদেশের মাধ্যমে। এ পথে ত্রাণ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে লজিস্টিক সহায়তা দিতে সম্মত।

তবে এখনো রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যথাসময়ে এ বিষয়ে দেশের প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে— বলেন শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, যেখানে একটি বড় শক্তির সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কল্পিত অপপ্রচার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ধারাবাহিক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচার চালানো হয়েছে, এটি তারই অংশ। এ ধরনের অপপ্রচার আমরা আগেও দেখেছি, এখনো চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক সহ য ত কর ড র র খ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

অভিযোগ তদন্তে প্রশ্নের উত্তর পাঠাতে সময় বাড়াল ভারত সরকার

বাংলাদেশের পাটপণ্য আমদানির ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বা প্রতিকারমূলক শুল্ক বসাতে তদন্ত করছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগ। অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে পাঠানো প্রশ্নমালার আনুষ্ঠানিক উত্তর পাঠানোর সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে তারা।

ভারতের বাণিজ্য বিভাগের উপপরিচালক মনোজ কুমার গত বুধবার এ–সংক্রান্ত এক নোটিশে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়টি জানান। বাংলাদেশের পাশাপাশি একই তদন্ত নেপালের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।

নোটিশে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেপালকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্নমালার উত্তর পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে দেশগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময়সীমা ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে না বলে জানানো হয় নোটিশে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ গত ২১ আগস্ট ই–মেইল পাঠিয়ে ভারত ২ সেপ্টেম্বর পরামর্শ সভায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। ২৯ আগস্ট ভারতকে এক ই–মেইল বার্তায় বাংলাদেশ জানিয়েছিল পরামর্শ সভার প্রস্তুতির জন্য ৬০ দিন সময় দরকার। ভারত তার জবাব দেয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্তে ভারতের প্রশ্নমালা পূরণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি ডেস্ক চালু করে।

অভিযোগ তদন্তের প্রশ্নমালা পূরণ করেন মূলত রপ্তানিকারকেরা। ইতিমধ্যে কাজ এগিয়েছে বলেও জানালেন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক। তিনি আাজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও নিজেদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরবে।

পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপের তদন্ত শুরু করা হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশি একই পণ্যের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সেটি আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পাটপণ্যে ভিন্ন ভিন্ন হারে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।

ভারতের পাটকল সমিতি (আইজেএমএ) এবং এ পি মেস্তা টোয়াইন মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (এজেএমএ) যৌথ আবেদনের পর বাংলাদেশ ও নেপালের পাটপণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং শুল্ক বসাতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয় বিভাগটি। ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তের বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকি দেওয়াবিষয়ক ১২টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (ইজেড) পাটপণ্যের ওপর নানা ধরনের ভর্তুকি দেওয়া হয়। যে কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

তদন্তের নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের ইপিজেডে অবস্থিত কারখানাগুলো লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি পায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ পায়। আর ইজেডের কারখানাগুলো ১০ বছরের কর অবকাশ ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি পায়। এ ছাড়া নগদ সহায়তা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ