পত্রিকা থেকে কাটা টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আইনজীবীকে দিলেন হাজী সেলিম, পুলিশকে ধমক
Published: 5th, May 2025 GMT
পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেটি তিনি তাঁর আইনজীবীর হাতে দিয়েছেন।
এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজী সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। পুলিশের হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আইনজীবী প্রাণনাথ হাজী সেলিমের দেওয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেলের জাহাজের ব্যবসা রয়েছে। তিনি কারাগারে ডিভিশনও পেয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির অংশ কেটে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেটি তিনি আজ তাঁকে দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজী সেলিমরা কখনো ভাবেননি, তাঁদের জীবনের এমন পরিণতি হবে। কারাগারে আসার আগেও হাজী সেলিম মঞ্চে নেচেছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন, কারাগারে আসার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ধমকাচ্ছেন, চিৎকার করছেন।’
টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আদালতে হইচইয়ের পর হাজী সেলিম তাঁর আইনজীবীর কাছে পুত্রবধূর কথা জানতে চান। পুত্রবধূ না আসার কারণ আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন। এ সময় আইনজীবী পুত্রবধূর লেখা একটি চিঠি হাজী সেলিমকে দেখান। আইনজীবী সেই চিঠি পড়ে শোনান। এ বিষয়ে আইনজীবী প্রাণনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পুত্রবধূর দেখা নেই। সে কারণে তিনি একটি লেখা পাঠিয়েছেন।
আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা শেষ করে হাজী সেলিম কাঠগড়ার উত্তর পাশে এগিয়ে যান। সেখান থেকে আদালতের বারান্দার অংশ স্পষ্ট করে দেখা যায়। হাজী সেলিম আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
এ সময় আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ হাজী সেলিমকে দেখে কাঁদতে থাকেন। হাজী সেলিমও কাঁদতে থাকেন। তিনি সবার উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু দেন।
পরে সকাল ১০ টা ৪১ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। তখন শাহবাগ থানায় দায়ের করা মনির হত্যা মামলায় হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুনানি শেষে সিঁড়ি থেকে নামানোর সময় হাজী সেলিম আরেক দফা পুলিশ সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
কারাগারে থাকা নিয়ে প্রশ্নএর আগে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে হাজতখানা থেকে হাজী সেলিমকে বের করা হয়। তখন তিনি বিমর্ষ ছিলেন। আদালতের নিচতলা থেকে দোতলায় নেওয়ার সময় হাজী সেলিম বিরক্তি প্রকাশ করেন।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পুলিশের একজন সদস্য হাজী সেলিমের হেলমেট খুলে দেন। তখন দেখা যায়, হাজী সেলিমের লম্বা সাদা চুল আর দাঁড়ি। পিপি জানান, হাজী সেলিম চুল, দাঁড়ি কাটেন না।
হাজী সেলিম আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁকে আরও কত দিন কারাগারে থাকতে হবে? ইশারায় আরও এক বছর থাকতে হবে কি না জানতে চান।
আইনজীবী প্রাণনাথ ইশারায় দুই মাস থাকতে হবে বলে জানান। এ কথা শোনার পর হাজী সেলিম হাসতে থাকেন।
কোরবানির ঈদও কারাগারে কাটাতে হবে জানতে পেরে হাজী সেলিমকে কাঠগড়ার লোহার ওপরে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরে ঝাঁপ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ৩টায় উপজেলার বাগহাতা হাওরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পালিয়ে যাওয়া আবদুল মজিদ বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি উপজেলার বাগাহাতা গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে প্রাণ হারান ৯ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার একজন আসামি আবদুল মজিদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ প্রত্যন্ত ভাটি এলাকা কাগাপাশা ইউনিয়নের বাগাহাতা গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদকে গ্রেপ্তার করে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে একটি নৌকায় করে বানিয়াচং থানার উদ্দেশে রওনা হয়। তাঁদের নৌকা উপজেলার বাগাহাতা হাওরে দিয়ে আসার সময় আবদুল মজিদের স্বজন ও অনুসারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান আবদুল মজিদ। পরে খবর পেয়ে বানিয়াচং থেকে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালালেও তাঁর কোনো সন্ধান পাননি।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) প্রবাস কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মজিদ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ৯ হত্যাকাণ্ডের মামলার একজন আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে আসার সময় তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি কৌশলে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। তাঁকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল কাজ করছে।