পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেটি তিনি তাঁর আইনজীবীর হাতে দিয়েছেন।

এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজী সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। পুলিশের হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

আইনজীবী প্রাণনাথ হাজী সেলিমের দেওয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেলের জাহাজের ব্যবসা রয়েছে। তিনি কারাগারে ডিভিশনও পেয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির অংশ কেটে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেটি তিনি আজ তাঁকে দিয়েছেন।

এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজী সেলিমরা কখনো ভাবেননি, তাঁদের জীবনের এমন পরিণতি হবে। কারাগারে আসার আগেও হাজী সেলিম মঞ্চে নেচেছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন, কারাগারে আসার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ধমকাচ্ছেন, চিৎকার করছেন।’

টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আদালতে হইচইয়ের পর হাজী সেলিম তাঁর আইনজীবীর কাছে পুত্রবধূর কথা জানতে চান। পুত্রবধূ না আসার কারণ আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন। এ সময় আইনজীবী পুত্রবধূর লেখা একটি চিঠি হাজী সেলিমকে দেখান। আইনজীবী সেই চিঠি পড়ে শোনান। এ বিষয়ে আইনজীবী প্রাণনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পুত্রবধূর দেখা নেই। সে কারণে তিনি একটি লেখা পাঠিয়েছেন।

আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা শেষ করে হাজী সেলিম কাঠগড়ার উত্তর পাশে এগিয়ে যান। সেখান থেকে আদালতের বারান্দার অংশ স্পষ্ট করে দেখা যায়। হাজী সেলিম আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।

এ সময় আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ হাজী সেলিমকে দেখে কাঁদতে থাকেন। হাজী সেলিমও কাঁদতে থাকেন। তিনি সবার উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু দেন।

পরে সকাল ১০ টা ৪১ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। তখন শাহবাগ থানায় দায়ের করা মনির হত্যা মামলায় হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

শুনানি শেষে সিঁড়ি থেকে নামানোর সময় হাজী সেলিম আরেক দফা পুলিশ সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।

কারাগারে থাকা নিয়ে প্রশ্ন

এর আগে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে হাজতখানা থেকে হাজী সেলিমকে বের করা হয়। তখন তিনি বিমর্ষ ছিলেন। আদালতের নিচতলা থেকে দোতলায় নেওয়ার সময় হাজী সেলিম বিরক্তি প্রকাশ করেন।

কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পুলিশের একজন সদস্য হাজী সেলিমের হেলমেট খুলে দেন। তখন দেখা যায়, হাজী সেলিমের লম্বা সাদা চুল আর দাঁড়ি। পিপি জানান, হাজী সেলিম চুল, দাঁড়ি কাটেন না।

হাজী সেলিম আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁকে আরও কত দিন কারাগারে থাকতে হবে? ইশারায় আরও এক বছর থাকতে হবে কি না জানতে চান।

আইনজীবী প্রাণনাথ ইশারায় দুই মাস থাকতে হবে বলে জানান। এ কথা শোনার পর হাজী সেলিম হাসতে থাকেন।

কোরবানির ঈদও কারাগারে কাটাতে হবে জানতে পেরে হাজী সেলিমকে কাঠগড়ার লোহার ওপরে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব র প ত রবধ

এছাড়াও পড়ুন:

আইনজীবী হত্যাসহ চার মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন আদালতে

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলায় কারাগারে আটক সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) আবেদন করা হয়েছে আজ রোববার। আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়াল শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোতোয়ালি থানার হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এটি ভার্চ্যুয়াল শুনানি হবে।

পুলিশ কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন আরও বলেন, হত্যার পাশাপাশি পুলিশের কাজে বাধাদান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলাসহ তিন মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। এগুলোর ভার্চ্যুয়াল শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বুধবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন। ফলে ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস জামিন পান। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আজ শুনানি দিন ধার্য থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকীর মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারিক কার্যক্রম অর্ধবেলার পর স্থগিত রাখা হয়। এতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আজ চেম্বার আদালতে শুনানির কথা থাকলেও তা হয়নি।

এখন চিন্ময় দাসকে যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে, সেটি গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনা। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়র ঘোষণার দাবিতে ফয়জুল করীমের করা মামলা খারিজ
  • বিসিসির মেয়র ঘোষণার আবেদন খারিজ
  • ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে আজ আধা বেলা বন্ধ হাইকোর্ট
  • আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ
  • আইনজীবী হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত
  • ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ আজ আধা বেলা বন্ধ
  • অর্থ লেনদেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
  • আইনজীবী হত্যাসহ চার মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন
  • আইনজীবী হত্যাসহ চার মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন আদালতে