মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আজকে নদীগুলোর উপরে যখন উন্নয়নের নামে বড় বড় সেতু বানানো হচ্ছে। পদ্মা সেতু দিয়ে কি পদ্মা নদীর ক্ষতি করছেন না? যমুনার তো ইতোমধ্যে ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন শুনছি বরিশাল থেকে ভোলা আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর সেতু হবে। এভাবে যে নদীর ক্ষতি করা হচ্ছে এগুলো অধর্ম।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘৬ষ্ঠ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিতর্ক উৎসব ২০২৫' এর সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল- ‘সভ্যতার বিবর্তনে নদী ও ধর্ম'।

ফরিদা আখতার বলেন, নদী মরে যায়, শুকিয়ে যায়, হারিয়ে যায়; এরকম যে হচ্ছে এটা অধর্মের অংশ। বুড়িগঙ্গার পানি আপনি যদি লঞ্চে করে ভোলা বা বরিশাল যান, ঢাকা পার হওয়ার বেশ অনেকটা পথ এত গন্ধ আসে যে লঞ্চে বসেও থাকা যায় না। ওপাশে তো মানুষ থাকে। নদী দূষিত হচ্ছে এবং ওখানে সব প্রাণি মারা যাচ্ছে। নদীকে রক্ষার জন্য বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে এটার দায়িত্ব নিতে হবে। নদী রক্ষা করা এবং নদীর সঙ্গে যুক্ত প্রাণকে রক্ষা করা এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ নদী শুধু সৌন্দর্য নয়, এটার সঙ্গে বহু প্রাণির জীবন জড়িয়ে আছে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে লেখক ও নদী গবেষক শেখ রোকন বলেন, সব ধর্মেই নদীর গুরুত্ব আছে। হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিষ্টান সব ধর্মেই নদী পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ। আন্তঃধর্মীয় একটি কমন জায়গা হলো নদী। আমাদের সভ্যতা নদী বহন করে আছে। তিব্বত আর বাংলার সভ্যতার সংযোগ করেছে ব্রহ্মপুত্র, উত্তর ভারত আর বাংলার সংযোগ স্থাপন করেছে গঙ্গা। নদী যুগ যুগ ধরে সভ্যতা, সংস্কৃতি বহন করে নিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, এ অঞ্চলে ধর্ম সম্প্রসারিত হয়েছে নদী পথে। হযরত শাহজালাল সিলেট গিয়েছেন নদীপথে, শাহ মখদুম সিরাজগঞ্জ এসেছেন নদীপথে। সুলতান মাহিসাওয়ার পুণ্ড্র নগরীতে বর্তমান বগুড়া এসেছেন নদীপথে। কাজেই প্রত্যেক ধর্মেই নদীকে রক্ষার কথা বলা হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, নদী আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের জনগোষ্ঠী ধর্মপ্রাণ, ধর্মের সঙ্গে নদীর সংশ্লেষ যুক্তিতর্কের সঙ্গে উপস্থাপন একটি চমৎকার বিষয়। এ বিষয়ে আরো বড় ধরনের কাজ হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন্স ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি আসমা সুলতানা লিজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.

মো. আবু সায়েম, আন্ত:ধর্মীয় ও আন্ত:সাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান আলোচনায় অংশ নেন। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূরুদ্দীন মুহাম্মাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

বিতর্ক উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২টি বিতর্ক দল অংশ নেয়। এতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেনারি সায়েন্স অনুষদের বিতর্ক দল চ্যাম্পিয়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের বিতর্ক দল রানার্সআপ হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে। 

এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। 

এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব। 

১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।

রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”

চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”

গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”

ঢাকা/তারিকুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়