২০২৩ সালে একই নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য সিজার পুরস্কার করেছিলেন আমেলি বোনাঁ। এবার তিনি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র Partir un jour নিয়ে হাজির হয়েছেন কান উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে।

ওয়েস অ্যান্ডারসন, জাফর পানাহি, কেলি রেইকার্ড, জোয়াকিম ত্রিয়ার, জুলিয়া দুকুর্নো, দার্দেনের মত বিশ্বখ্যাত  পরিচালকের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা ২২টি ছবির পাশে এক নতুন নামই হচ্ছে আমেলি বোনাঁ। এবং তারই ছবি দিয়ে শুরু হচ্চে উৎসব। যদিও এটি প্রতিযোগিতার বাইরের একটি পার্ট। প্রতিযোগিতার বাইরের হলেও  এর গুরুত্ব কম নয়। 

সাধারণত কান উৎসবের উদ্বোধনী ছবি হয়ে থাকে বড় বাজেটের, তারকাসমৃদ্ধ, জনপ্রিয় কোনো চলচ্চিত্র। কিন্তু এবার সেই ধারা ভেঙে এক নবীন, অপরিচিত পরিচালকের প্রথম ছবি দিয়েই যাত্রা শুরু করছে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই উৎসব।

আমেলি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম অন্তত কোনো পার্শ্ব নির্বাচন তালিকায় জায়গা পাবো। কিন্তু ৯ এপ্রিল, উৎসবের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন, সহ-প্রযোজক সিলভি পিয়ালা আমাদের ফোন করে বললেন, ‘তোমরা কি উৎসবের উদ্বোধনী ছবি হতে চাও?’ আমি ভাবলাম ওটা নিশ্চয়ই একটা রসিকতা। পরে দেখি না সত্যি সত্যিই”

স্বল্পদৈর্ঘ্য থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্যে রূপ নেওয়া Partir un jour ছবিটি মূলত বিচ্ছেদ, পলায়ন এবং সম্পর্কের  টানাপড়েনের গল্প। আমেলি বলেন, “এই ছবি সেই মুহূর্তগুলোর কথা বলে, যখন মানুষ হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার, পুরোনো বন্ধন ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।”

উদ্বোধনী আসরে সম্মানজনক পাম দ’র পুরস্কার প্রদান করা হবে অভিনেতা রবার্ট ডি নিরোকে। এই সম্মাননা গ্রহণ করতে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের প্রেক্ষাগৃহে হাজির থাকবেন তিনি। উদ্বোধনী চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে আমেলি বোনাঁর ‘লিভ ওয়ান ডে’। এটি নির্মাতার প্রথম ছবি।

মঙ্গলবার (১৩ মে) ফ্রান্সের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনে শুরু হচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮ তম আসর।  এবারের উৎসবে অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। উৎসবটির সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপামের জন্য মূল প্রতিযোগিতা শাখায় লড়বে ১২টি ছবি। আঁ সেঁর্তা রিগা শাখায় থাকছে ২০টি চলচ্চিত্র, প্রতিযোগিতার বাইরে ১২টি ছবি, মিডনাইট সেশনসে ৫টি, কান প্রিমিয়ারে ১০টি এবং স্পেশাল সেশনস শাখায় রাখা হয়েছে ৯টি ছবি। কান ক্লাসিক সেশনসে নির্বাচিত ৩০টি ছবি। লা সিনেফ শাখায় রয়েছে ১৬ টি। তবে এবার কোনো কোরীয় ছবি জায়গা করে নিতে পারেনি। গত এক যুগে এই প্রথম এমনটা ঘটল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব র ঘ য চলচ চ ত র উৎসব র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ

খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুন্ডাদের দেড় হাজারের বেশি পরিবার। নিজেদের পরিচয়ে গর্বিত এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ–গান, পূজা ও খাওয়াদাওয়া, যা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতিতে।

এ অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে প্রতিবছর আদিবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সংস্কৃতি রক্ষায় এদিন পালন করা হয়।

কয়রার নলপাড়া গ্রামের নমিতা রানী মুন্ডা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, হয়তো কোনো এক ভোরে আবার কারাম উৎসব ফিরবে। তাঁর ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে কারাম উৎসবের কথা তুলতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘২০০৯ সালের আইলার আগেই শেষবার হইছিল। এরপর আর হয়নি। কারামগাছই তো নেই, উৎসব হবে কীভাবে?’

কারামগাছ—যেটাকে স্থানীয়ভাবে খিলকদম বলা হয়। এই গাছের ডাল ছাড়া কারাম উৎসব অপূর্ণ। মুন্ডারা বিশ্বাস করেন, এই গাছের ডালে লুকানো আছে সমৃদ্ধি আর মঙ্গল।

সম্প্রতি কয়রা উপজেলার মুন্ডাপাড়ার উঠান থেকে উঠান ঘুরে জানা গেল, গল্পের মতো—কীভাবে এক ঢেউয়ে, এক ঝড়ে হারিয়ে গেছে একটি গোটা উৎসব। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। মাঝেরপাড়ার পরশুরাম মুন্ডা বলেন, ‘গাছ নাই, উদ্যোগী মানুষও নাই। এই গ্রামের নকুল মুন্ডা বাইচে থাকলি হয়তো উৎসব কুরত। নকুল মুন্ডার ছাওয়ালডাও (ছেলে) বেকার হুয়ি পাড়ি দেছে পাশের দেশ ভারতে।’

কয়রার বতুলবাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্বপন মুন্ডার সঙ্গে। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘরের ছাউনি ঠিক করার ফাঁকে বললেন, ‘আগে কত আনন্দ হইতো! নাচ-গান, খাওয়াদাওয়া। এক রাত এক দিন চইলতো কারাম উৎসব। কিন্তু আইলার পর সব শেষ।’ পাশ থেকে স্ত্রী রেনু বালা মুন্ডা শোনালেন তেতো বাস্তবতা, ‘উৎসব করতে কত টাকা লাগে জানেন? একটু আগে আলু ধার কইরে আনছি, উনি আছে উৎসবের চিন্তায়! গরিবের আবার উৎসব?’

কাটকাটা গ্রামের লক্ষী রানী মুন্ডার শৈশব কেটেছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে। বিয়ের পর কয়রায় এসে আর দেখেননি সেই উৎসব। তিনি বলেন, ‘বাপের বাড়িতে ছোটবেলায় কত দেখিছি। এখন আর হয় না। শুনিছি উত্তরাঞ্চলের দিকিত্তে কেউ কারামগাছের চারা আইনে এলাকায় লাগাইল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।’

যে জায়গায় কারাম উৎসবের বেদি সাজানো হতো, সেখানে এখন কেবল শূন্যতা। কয়রার মাঝেরপাড়া গ্রামের নকুল মুন্ডার বাড়ি–সংলগ্ন কারাম উৎসবের স্থান। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনেকেই অন্যকে নিয়ে ট্রল করতে বেশি আগ্রহী
  • চারুকলায় বর্ষা উৎসব ঘিরে প্রাণের মেলা
  • ৫২ বছর আগের ‘রংবাজ’-এর মতো চমকে দিল ‘উৎসব’
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত শহরে ভূগর্ভস্থ কবিতা উৎসব
  • এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ