ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সেমিনার
Published: 21st, May 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২১ মে) বিকেলে এমবিএসটিইউ রিডার জোন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও স্বীকৃতি অনুষ্ঠানের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক আলোচনা’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সেমিনার হলে আয়োজির এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে দেশবন্ধু গ্রুপ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
আরো পড়ুন:
‘আমি যে তাদের স্বার্থপর ছেলে’ লিখে যুবকের আত্মহত্যা
যবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, সুষ্ঠু তদন্তের দাবি
বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. ফজলুল করিম এবং দেশবন্ধু ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মো. ইদ্রিসুর রহমান।
রিডার জোনের সাধারণ সম্পাদক রাহাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের ট্রমা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট বিভাগের সুমাইয়া তামান্না এবং সুমাইয়া তাসনিম বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, “আত্মহত্যা একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা, যা শুধু একটি ব্যক্তির জীবনকেই নিভিয়ে দেয় না, তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং পুরো সমাজকেই এক গভীর বেদনার সাগরে ভাসিয়ে দেয়। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কোনো না কোনো সময়ে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ আসে। তবে মনে রাখতে হবে, এই কঠিন সময়ও পার হয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “জীবনের কোনো সমস্যাই আত্মহত্যার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে না। তাই আমাদের দায়িত্ব— পরিবার, বন্ধু, সহপাঠী ও সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানো। সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা এই ভয়াবহ প্রবণতা প্রতিরোধ করতে পারি।”
ঢাকা/কাওছার/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।