উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রতিবছর অনেক মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। তাই এ বিষয়ে সচেতনতার বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। এ জন্য জীবনযাপনে সুস্থ ধারা বজায় রাখাতে হবে।

বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে ১৭ মে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে বিশেষজ্ঞ মতামত সভায় বিশেষজ্ঞরা এ মত দেন। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং সঠিক ওষুধ নিয়মিত গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আয়োজনটির সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ‘কার্ডোবিস’ ও ‘টেমস-এ’।

এ বছর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব জেরিয়াট্রিক কার্ডিওলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা.

আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদারের সঞ্চালনায় বিশেষ এই আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন, বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান, ইউনিট হেড অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান এবং ডা. মোহাম্মদ উল্লাহ ফিরোজ; ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম, এভারকেয়ার হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আতাহার আলী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রাহমান এবং সহকারী ব্যবস্থাপক ডা. মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন।

আলোচনার শুরুতেই অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার জানতে চান, উচ্চ রক্তচাপ বলতে আসলে কী বোঝায় এবং একে কেন নীরব ঘাতক বলা হয়?

উত্তরে অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত বলেন, ‘রক্তচাপ যদি ১২০/৮০-এর মধ্যে থাকে, তাহলে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু ১৩০–এর বেশি উঠে গেলেই সেটি উচ্চ রক্তচাপ। আবার নিচেরটাও যদি বেশি থাকে, তখন সেটিও উচ্চ রক্তচাপ। আর একে নীরব ঘাতক বলার কারণ হলো, ৫০ শতাংশ মানুষ জানেনই না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না।’

উচ্চ রক্তচাপের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, কাজে অনীহা, বুকে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনযাত্রার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। যেমন অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া, ধূমপান না করা ও চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ডা. খন্দকার কামরুল ইসলাম।

কত দিন পর পর রক্তচাপ মাপা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের প্রতিদিন সকালে একবার এবং রাতে একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। তবে এখন ডিজিটাল মেশিনেই রক্তচাপ মাপা ভালো। কারণ, অ্যানালগ যে মেশিনগুলো রয়েছে, সেগুলোতে রক্তচাপ সঠিকভাবে কেবল তাঁরাই মাপতে পারেন, যাঁদের এই মেশিনগুলো চালানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কি সব সময় ওষুধ গ্রহণ জরুরি? উপস্থাপকের এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের জীবনযাত্রার দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া জরুরি। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই যেকোনো ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।’

আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। অনেকেই মনে করেন উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলেই কেবল রক্তচাপ মাপতে হবে। তবে বয়স ৩৫-এর বেশি হলে বছরে একবার হলেও রক্তচাপ মাপতে হবে। তবে একবার রক্তচাপ মেপেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে না যে আপনার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে কয়েকবার রক্তচাপ মেপে দেখতে হবে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুটি ব্যাপারে খেয়াল রাখলেই হয়। একটি হলো জীবনযাত্রা, অন্যটি হলো ওষুধ। জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে হবে, অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, শাকসবজি খেতে হবে এবং পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে অবশ্যই ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকতে হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বনয ত র ক র ড ওলজ একব র আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দুই শীর্ষ তালেবান নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আফগানিস্তানের তালেবানের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশটির নারী ও কিশোরীদের নানাভাবে দমন–পীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আইসিসি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসে। এর পর থেকে দেশটিতে নারী ও কিশোরীদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের ‘যুক্তিসংগত ভিত্তি’ রয়েছে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং অনেক চাকরি থেকে নারীদের বিরত রাখা।

আফগানিস্তানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা কত দূর ভ্রমণ করতে পারবে, সে বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে তালেবান। এমনকি জনসমক্ষে নারীদের কথা বলার বিষয়েও নির্দেশনা জারি করেছে তারা।

এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপর কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালেবান। তবে তারা নারী ও কিশোরীদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে। জাতিসংঘ এসব বিধিনিষেধকে ‘লিঙ্গবৈষম্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান। তারা বলেছে, তালেবান এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না। আদালতের এমন পরোয়ানাকে ‘সুস্পষ্ট শত্রুতামূলক পদক্ষেপ’ এবং ‘বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান’।

তালেবান সরকারের দাবি, তারা আফগানিস্তানের সংস্কৃতি ও ইসলামি আইন অনুযায়ী নিজস্ব ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।

গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করে আইসিসি। কোনো দেশ এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে বা বিচার করতে না চাইলে আইসিসি এ উদ্যোগ নেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ