রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
Published: 22nd, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো.
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিভাগের নাম পরিবর্তনসহ তিন দফা দাবিতে সভাপতি বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিনই বিভাগের ৪১৫তম একাডেমিক সভায় এ ব্যাপারে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক দিন আলোচনা করেছে। কিন্তু দ্রুত সিদ্ধান্ত না আসায় আজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় অনশনে বসেন। এমন পরিস্থিতিতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা বসে। সেই সভায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত বিভাগের নতুন নাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তনসহ তিন দাবিতে অনশনে শিক্ষার্থীরা৪ ঘণ্টা আগেশিক্ষার্থীদের দাবি তিনটি ছিল, ফোকলোর বিভাগের নাম পরিবর্তন বা সংস্কার করতে হবে, যাতে বিষয়ের স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে; পিএসসি ও ইউজিসিতে ফোকলোর বিষয়ের নাম সংযুক্ত করে কোড প্রদান নিশ্চিত করতে বিভাগীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল এক মাসের মধ্যে ও নির্ধারিত সময়ে ক্লাস রুটিন প্রকাশ করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ কল র ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশগামী শ্রমিকদের কী প্রস্তুতি দরকার
বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন খাত শুধু ব্যক্তি নয়, দেশের অর্থনীতির জন্যও এক বড় শক্তি। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন বা ২৭ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন তাঁরা। এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা এনেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এই রেকর্ডের পেছনে যে মানুষের শ্রম–ঘাম, তার সর্বোচ্চ ফল কী পাওয়া যাচ্ছে। একজন মানুষের স্বদেশ ত্যাগ করে বিদেশে যাওয়া বড় সিদ্ধান্ত। বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানেই বড় ধরনের আর্থিক সিদ্ধান্ত—ভিসা, এজেন্ট ফি, টিকিট, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি মিলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অপ্রস্তুত ও তথ্যবিমুখ থাকার কারণে এই বিনিয়োগ থেকে প্রবাসী শ্রমিকেরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না। অনেক ক্ষেত্রে ভালো সিভি বা জীবনবৃত্তান্তের অভাবেও প্রবাসী শ্রমিকেরা বঞ্চিত হন। সেই সঙ্গে আরও অনেক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ আছে; সেদিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সিভি কেন গুরুত্বপূর্ণ
অর্থনৈতিক দিক থেকে ভাবলে, ভালো সিভি হলো আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সনদ। যথাযথ সিভি থাকলে বেশি বেতনের কাজ জোগাড় করা সহজ হয়। এই সিভি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দেয়; ভাষাজ্ঞান ও প্রশিক্ষণের স্বীকৃতি নিশ্চিত করে; দালালনির্ভরতা কমিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সে কারণে শুধু শ্রমিক নয়—সব অভিবাসী কর্মপ্রত্যাশীর জন্য শক্তিশালী সিভি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি।
সাধারণভাবে আমাদের ধারণা, সিভি কেবল শিক্ষিত পেশাজীবীদের জন্য। কিন্তু এই ধারণা বদলাতে হবে। বর্তমান বৈশ্বিক শ্রমবাজারে যেকোনো পেশার জন্য—এমনকি নির্মাণশ্রমিক, গাড়িচালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা গৃহকর্মীর জন্যও—সঠিক পরিচয়, দক্ষতা ও কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে সিভির গুরুত্ব বেড়েছে।
বিদেশি নিয়োগদাতারা এখন আরও কাঠামোবদ্ধ ও তথ্যভিত্তিকভাবে কর্মী নির্বাচন করছেন। শুধু মৌখিক সাক্ষাৎকার বা দালালের সুপারিশে নয়, তাঁরা কর্মীর পূর্ব অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, ভাষাজ্ঞান, এমনকি ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নিয়েও আগ্রহ দেখান। এসব তুলে ধরতে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্ট ও তথ্যসমৃদ্ধ সিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সিভি বানাতে প্রযুক্তি
এই সমস্যার সমাধান এখন হাতের মুঠোয়। যদি কারও হাতে স্মার্টফোন থাকে, তিনি ইচ্ছে করলেই সহজে নিজের জন্য সিভি তৈরি করে নিতে পারেন, এমনকি স্বল্প শিক্ষিত হলেও। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে কাজ করে আসছে আমি প্রবাসী অ্যাপ। এটি প্রবাসীদের ওয়ান–স্টপ সল্যুশন দিচ্ছে। সেই অ্যাপে এখন সহজ ও ব্যবহারবান্ধব সিভি বিল্ডার আছে। প্রবাসে যেতে আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তি বিনা মূল্যে তা ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্য শুধু অভিবাসনপ্রত্যাশী নয়, যে কেউ চাইলেই এর মাধ্যমে সিভি তৈরি করতে পারেন।
সিভি বিল্ডার মূলত চ্যাটভিত্তিক। সেখানে নিজের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষাজ্ঞান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সহজভাবে যুক্ত করা যায়—বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই তা করা যায়। প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে স্বয়ংক্রিয় ফরম্যাটে সুন্দরভাবে সাজানো সিভি পাওয়া যায়।
বিদেশে যেতে ঋণ
বিদেশে কাজের সুযোগ পেলেও অনেক সময় টাকার অভাবে ভিসা কার্যকর করা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে সহজ শর্তে জামানতবিহীন ‘অভিবাসী ঋণ’ হতে পারে বড় সহায়তা। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক এই ঋণ দেয়। প্রয়োজন হবে আবেদনকারীর ছবি, ভোটার আইডি, ঠিকানা, সনদ, পাসপোর্ট, ভিসা ও স্মার্ট কার্ডের কপি। একজন জামিনদারের কাগজপত্র ও ব্যাংকের তিনটি চেকও জমা দিতে হবে। ঋণ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে হয়। নতুন ও রি-এন্ট্রি—উভয় ভিসার ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। মেয়াদ যথাক্রমে ৩ ও ২ বছর। দুই মাসের গ্রেস পিরিয়ড শেষে মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। সুদের হার ৯ শতাংশ (সরল)।
দালালের খপ্পরে না পড়া
বিদেশে চাকরির আশায় অনেকেই দালালদের ফাঁদে পড়েন। তারা মিথ্যা ভিসা, চাকরির প্রলোভন ও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে প্রতারণা করে। এদের হাত থেকে বাঁচতে অবশ্যই সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশযাত্রার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বিএমইটির ওয়েবসাইটে বৈধ এজেন্সির তালিকা পাওয়া যায়। আর্থিক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করে রসিদ সংরক্ষণ জরুরি। সব তথ্য পরিবারকে জানানো, ভিসা-পাসপোর্ট ও শ্রম চুক্তিপত্র যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রশিক্ষণ নিয়ে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করলে বৈধতা নিশ্চিত হয়।
দালালেরা সাধারণত দ্রুত কাজ করিয়ে দেবে বলে চাপ দেয়, সঠিক কাগজপত্র দেখায় না ও নিজের পরিচয় গোপন রাখে। তাই যেকোনো লোভনীয় প্রস্তাব যাচাই ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। সচেতন থাকুন, প্রতারিত হওয়ার আগেই সঠিক তথ্য জানুন—নিরাপদ অভিবাসন সবার অধিকার।
কোন দেশে যাবেন
বিদেশে যাওয়ার আগে গন্তব্য দেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়া জরুরি। কোন দেশে যাচ্ছেন, সেখানে কী ধরনের কাজ করবেন, বেতন-শর্তাবলি কেমন—এসব না জেনে শুধু দালালের কথায় যাওয়া বিপজ্জনক। যাচাই করুন—দেশটি বাংলাদেশি শ্রমিক গ্রহণে সরকারিভাবে অনুমোদিত কি না। বিএমইটি ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দেশের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন। চুক্তিপত্রে থাকা বেতন, কাজের ধরন, আবাসন ও চিকিৎসার শর্তগুলো খুঁটিয়ে দেখুন। বিএমইটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন। খুঁজে দেখুন, সেদেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা কেমন। কাজের ধরন অনুযায়ী ভিসা ও পারমিট আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া কিছু দেশে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের দৌরাত্ম্য বেশি, সেসব এড়িয়ে চলাই ভালো। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে দেশ নির্বাচনের মাধ্যমেই নিরাপদ অভিবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরও যেসব প্রয়োজনীয় দক্ষতা
এ ছাড়া প্রবাসে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের আরও কিছু বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। যেমন ভাষাজ্ঞান অন্তত মৌলিক ইংরেজি বা যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের ভাষার কিছু জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের ভাষাজ্ঞান থাকলে এবং তার সঙ্গে মৌলিক ইংরেজি ভাষাজ্ঞান থাকলে শ্রমিকেরা অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।
এরপর আছে প্রশিক্ষণ বা ট্রেড স্কিল, যেমন ইলেকট্রিক, প্লাম্বিং, ড্রাইভিং, পরিচ্ছন্নতা, কুকিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা। সেই প্রশিক্ষণ আবার ভুঁইফোড় জায়গা থেকে না নেওয়াই ভালো। দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে আপনার নিকটস্থ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) হতে প্রশিক্ষণ নিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব কেন্দ্র আছে। বিএমইটির ওয়েবসাইটে তার তালিকা পাবেন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্রের স্বীকৃতি আছে। অর্থাৎ আপনি যে প্রশিক্ষণ নিন বা যে কাজই করুন না কেন, তার সনদপত্র জোগাড় করুন।
আরও যেসব জিনিস প্রয়োজনীয়
বৈধভাবে বিদেশে যেতে অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ওয়েবসাইটের তথ্যানুসনারে, এসব বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল করুন:
বৈধ পাসপোর্ট, কর্মসংস্থানের ভিসা, বিমানের টিকিট, নিয়োগপত্র/চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্ট ফরম, মেডিকেল সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), বিএমইটির ছাড়পত্র বা স্মাট কার্ড, গন্তব্য দেশের জন্য সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়, চাকরির বিবরণ, বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ও ঠিকানা, যাওয়ার আগে ভিসা ও চুক্তিপত্রের যথার্থতা যাচাই করে জেনে বুঝে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করবেন; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো হতে বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) নিয়ে বৈধ উপায়ে বিদেশ যাবেন; তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট) ব্যতীত সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে বিদেশ যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির তথ্যের জন্য আপনার নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে যোগাযোগ করুন।। ওয়েবসাইট হতেও (www.bmet.gov.bd) তথ্য পেতে পারেন। বিদেশ যাত্রাকালে বিমানবন্দরে সাহায্যের প্রয়োজন হলে বিমানবন্দরে প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহায়তা নিন। মোদ্দা কথা হলো বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার এ বিষয়ে উদ্যোগ আছে। ধৈর্যসহকারে এদের কথা শুনুন। সেটা হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
বাস্তবতা হলো বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সে কারণে প্রবাসে কাজ পেতে এখন প্রস্তুতিও অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। আইনি শর্ত পূরণের পাশাপাশি কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিতেও নজর দেওয়া জরুরি। নিজেকে যথাযথভাবে তুলে ধরার বিকল্প নেই।