দুই ছাত্র উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় বিএনপি
Published: 24th, May 2025 GMT
সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ শনিবার রাতে যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে লিখিতভাবে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।
বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি, আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’
এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আশ্বাস তাঁরা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’
সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের (পথনকশা) আশ্বাস পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো কথা হয়নি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তোবা তাঁরা তাঁদের প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করব। এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নেই। তাঁর প্রেস উইং কী বলে, তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া দেব।’
মূলত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয়ের ওপর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি যমুনার সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং তাঁরা একমত হয়েছেন। সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচারব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তাঁদের কোনো দ্বিমত নেই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এই আলোচনাও হয়েছে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে যমুনার সামনে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও। তিনি বলেন, ‘যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি যে আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের (ঘোষণা) ফলে বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
নির্বাচন বিলম্বিত হলে স্বৈরাচারের ফেরার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবেপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো অসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।’
আরও পড়ুননির্বাচন ও সংস্কারের ‘রোডম্যাপ’ দরকার: যমুনা থেকে বেরিয়ে জামায়াতের আমির২৪ মিনিট আগেখন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্তবর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারে গেলে তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁরা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।
আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় যান বিএনপির ওই চার নেতা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র উপদ ষ ট র সরক র র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চ আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে: মির্জা ফখরুল
উচ্চ আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিট উচ্চ আদালতে খারিজ করে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব ভার্চ্যুয়ালি বলেন, বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যেটা হওয়া উচিত সেই ধরনের রায় দিয়েছেন। এই রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে। এটাতে নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের আরেকটা বিজয় হয়েছে।
নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেহেতু আদালতে এ বিষয়ে রায় হয়েছে, জনগণের বিজয় হয়েছে সেহেতু সড়ক অবরোধ না রেখে সরে যাবেন। আশা করছি, সরকারের সুমতি হবে, তারা ইশরাককে শপথ দেওয়ার ব্যবস্থা নেবেন।
ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান রেখে
তিনি বলেন, আশা করব, মন্ত্রণালয় আর কোনো সমস্যা তৈরি না করে দ্রুত ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা এবং পরিস্থিতিকে সহজ করে তোলবার চেষ্টা করবে।
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট, এই সংকট দূর করার একটি মাত্র পথ হচ্ছে, অতি দ্রুত নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এখানে অন্য কথা বলে লাভ নেই। কারণ সংস্কারের যে বিষয়টা আছে সেটা চলমান প্রক্রিয়া।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অতি দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো তারা ঘোষণা করবেন। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য করে সনদ তৈরি করবেন। সুতরাং এটা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা কিংবা এটা নিয়ে টানাহেঁচড়া করা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে। সেই কারণে জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং চলমান যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। আর যেসব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না সেগুলো সনদের ভেতরে নিয়ে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে রাখবেন।
গত ১৪ মে চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য বিএনপি মহাসচিব ব্যাংকক যান। পরদিন ব্যাংকক রুটনিন আই হসপিটালে তার বাম চোখে সফল অস্ত্রোপচার হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।